আ’লীগ আত্মস্বীকৃত ফ্যাসিস্ট এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য : ডা: শফিক
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৬
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, সত্য একবার বললেই প্রতিষ্ঠিত হয় কারণ সেটা সত্য। আর মিথ্যা প্রতিষ্ঠিত করতে বারবার বলতে হয়। আওয়ামী লীগ আত্মস্বীকৃত ফ্যাসিস্ট। এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য।
জামায়াত আমিরের সম্মানে গত রোববার লন্ডনের রয়েল রিজেন্সিতে কলিশন ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস ইন বাংলাদেশ আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ১৬ বছর দেশের মানুষের সাথে আওয়ামী লীগ যে আচরণ করেছে তার জন্য তাদের বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে। তারা মানুষের অধিকারই শুধু হরণ করেনি, তারা দেশে এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছিল। তারা চোখের সামনে মানুষকে হত্যা করেছে। আমরা চাই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের বিচার হোক। জামায়াত আমির বলেন, অন্যায় বিচার কি সেটার আমি নিজেও একজন ভিকটিম। আমাকে গ্রেফতার করে বলা হয়েছে, আমি নাকি বিছানার নিচে ককটেল নিয়ে ঘুমিয়েছি!
তিনি বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ৫৭ জন কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তাদের খুনের রাজনীতি শুরু করেছিল। এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেয়ার হীন প্রচেষ্টা চালায় এবং একই সাথে বিডিআর বাহিনীকেও শেষ করে। এই দুই খুনের মিশনের পর তারা আঘাত করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওপর। আমাদের ওপর যখন আঘাত আসে, তখন আমাদের জাতির বিবেকবান নেতৃবৃন্দ উপলব্ধি করতে পারেননি যে এই আঘাত শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে। ডা: শফিক সে পরিস্থিতির বর্ণনা করে বলেন, আমরা যখন কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছি তখন আমাদের অনেক বন্ধুকে বলেছিলাম, আসুন একসাথে লড়াই করি। তা না হলে ফ্যাসিবাদের কবলে সবাইকে পড়তে হবে। কিন্তু অনেকেই ভেবেছিলেন, এ রকম পরিস্থিতি যদি জামায়াতের ওপর দিয়ে যায় তবে দেশ বুঝি শান্ত হয়ে যাবে। কিন্তু না, সেটার পরিণতি আজ দেশবাসীর কাছে একটি জ্বলন্ত ইতিহাস। আমরা হয়তো সেদিন বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছিলাম। ডা: শফিক যুক্তরাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের নির্যাতনের কারণে যারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়ে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নিয়েছিল, যুক্তরাজ্য সরকার তাদের আশ্রয় দিয়েছে এমনকি নাগরিকত্বও দিয়েছে। আমরা এ জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি অনুরোধ করব যে আপনারা বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে এগিয়ে আসুন। আপনারা কোনো দুষ্কৃতকারীকে প্রশ্রয় দেবেন না। যারা দেশের টাকা পাচার করেছে, লুণ্ঠন করে এখানে নিয়ে এসেছে, আপনারা তাদের পাকড়াও করে ওই টাকাগুলো আমাদের ফেরত দিয়ে সাহায্য করুন। দেশের মানুষ শ্রদ্ধাভরে সারা জীবন আপনাদের এই অবদান স্মরণ করবে।
তিনি প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আপনারা আমাকে সংবর্ধনা দিয়ে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে সম্মানিত করেছেন। আমরা আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা যখন তাদের অনেক অপরাধ-অপকর্মের প্রতিবাদ করতে পারিনি, তখন আপনারা তাদের প্রত্যেকটি অপকর্মের সর্বোচ্চ প্রতিবাদ করেছেন। আপনাদের প্রতিদান দেয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই। তবে আমি ও আমার দল আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আপনারা দেশ ও জাতির পক্ষে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আপনাদের দেশপ্রেম ও দেশের মানুষকে ভালোবাসার সর্বোচ্চটুকু ঢেলে দিয়েছেন। আপনারা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছেন, এখন মেধার রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশ পুনর্গঠনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
জামায়াতের আমির বলেন, আমরা একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে দেশের প্রত্যেক নাগরিক স্বীয় মর্যাদার সাথে বসবাস করবে। আমরা এমন সমাজ চাই যেখানে মসজিদ পাহারার প্রয়োজন না হলে মন্দির পাহারারও প্রয়োজন হবে না। যেখানে আমাদের নারীরা মর্যাদা ও নিরাপত্তার সাথে বসবাস করবে। রাসূল সা:-এর সময় নারীরা যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছিল। তিনি আরো বলেন, আমাদের বিশাল ম্যানপাওয়ারকে আমাদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। যারা প্রবাসে নাগরিকত্ব পান না এবং ইন্তেকালের পর যাদের আত্মীয়রা তাদের লাশ দেশে নিতে চান, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে তারা যেন তা করতে পারেন তার জন্য আমরা তাদের সহযোগিতা করব।
জামায়াতের নেতৃবৃন্দকে জুডিশিয়াল কিলিংযের মাধ্যমে শহীদ করা হয়েছে উল্লেখ করে ডা: শফিক বলেন, বেগম খালেদা জিয়া, সাবেক আমিরে জামায়াত প্রফেসর গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামীসহ জামায়াতের সব নেতার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ ছিল মিথ্যা ও বানোয়াট। এটা প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি ২০২৪ এর জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের ভয়াবহ স্মৃতি উল্লেখ করে বলেন, ছাত্ররা তাদের অধিকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল, পরে জনতা তাদের সাথে রাস্তায় নেমে আসে। শহীদ আবু সাঈদ দু’ হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দিয়ে বলেছিল, হয় অধিকার দাও, না হয় গুলি কর। তারা অধিকার না দিয়ে গুলি করে অসম্ভব মেধাবী এই ছেলেকে হত্যা করে তার পরিবারের আশার আলো নিভিয়ে দিলো। সে একা নয়, দেড় বছরের কোলের শিশুসহ, আমাদের ধারণা মতে ১৬০০-১৬৫০ জনকে হত্যা করা হলো। যারা আহত ও পঙ্গু হয়েছে, হাসপাতালে আছে আমরা একটা দল হিসেবে আমাদের সাধ্য অনুযায়ী তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি এবং আরো দাঁড়াব। কিন্তু প্রয়োজন এত বেশি যে তা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে এমনকি রাষ্ট্রের পক্ষেও একা সম্ভব নয়। আমাদের অনুরোধে ২-৩ টি বন্ধু দেশ এগিয়ে এসেছে। আশা করি আহতদের সহায়তায় আরো কিছু দেশ এগিয়ে আসবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার মুফতি সদরুদ্দিন ও ওলামা মাশায়েখ ইউকের সভাপতি শায়েখ মওদুদ হাসান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইউরোপের মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা, প্রফেসর ডক্টর হাসনাত হোসাইন এমবিই, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ, মানবাধিকার সংগঠন মুসলিম ভয়েসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মাহফুজ নাহিদ, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্ট আইনজীবী মির্জা আসহাব বেগ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও চ্যানেল এসের প্রতিষ্ঠাতা মাহি ফেরদাউস জলিল, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও চ্যানেল আই ইউরোপের সাবেক এমডি রেজা আহমেদ চৌধুরী শুয়েব, লন্ডনের টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিলের স্পিকার ব্যারিস্টার সাইফুদ্দিন খালেদ, আমার দেশের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট অলি উল্লাহ নোমান, বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ও কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মাওলানা সাদেকুর রহমান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর সন্তান ব্যারিস্টার নাজিব মোমিন, কাউন্সিলর গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী, নির্যাতিত সাংবাদিক এনাম চৌধুরী প্রমুখ।
সাবেক ছাত্রনেতা আবু সালেহ ইয়াহইয়া ও শামসুল আলম গোলাপের পরিচালনায় পূর্বলন্ডনের দ্য রয়েল রিজেন্সি হলে অনুষ্ঠিত শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন, বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা ও ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম শাহীন।
ঢাকা মহানগরী উত্তর : জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের ২০২৫- ২০২৬ কার্যকালের জন্য মজলিসে শূরার সদস্য নির্বাচন, শপথ ও ২৫ সদস্যবিশিষ্ট কর্মপরিষদ গঠন সম্পন্ন হয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের পুনঃনির্বাচিত আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় গত রোববার রাত ৮টায় রাজধানীর মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মহানগরী মজলিসে শূরার প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ আব্দুর রব। অধিবেশনে মজলিসে শূরার নির্বাচিত সদস্যদের সাথে পরামর্শ করে ২০২৫-২০২৬ সেশনের জন্য কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুর রহমান মূসা ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফাকে নায়েবে আমির এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমকে সেক্রেটারি, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দিন মোল্লা, ডা: ফখরুদ্দিন মানিক ও ইয়াছিন আরাফাতকে সহকারী সেক্রেটারি করে ২৫ সদস্যবিশিষ্ট মহানগরীর কর্মপরিষদ গঠন করা হয়। মহিলাদের নিয়ে পৃথক মহিলা বিভাগীয় মজলিসে শূরা এবং মহানগরী মহিলা কর্মপরিষদ গঠন হয়েছে। নির্বাচিত ও মনোনীত শূরা সদস্যদের শপথকার্যক্রম পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগরী উত্তর আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা