১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ভয়ঙ্কর চিত্র বের হতে শুরু করেছে

৩ লাখ কোটি টাকার ঘরে খেলাপি ঋণ

-


খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র বের হওয়া শুরু হয়েছে। সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। এ খেলাপি ঋণ বিতরণ করা ১৬ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকার ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ বা প্রায় ১৭ শতাংশ। তিন মাস আগে অর্থাৎ জুনে খেলাপি ঋণ ছিল দুই লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। সে হিসেবে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকা।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র দেখানো যেত না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরোক্ষ নির্দেশে খেলাপি ঋণ আড়াল করা হতো। আবার খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র যেন প্রকাশ না পায় সেজন্য রিপোর্টিং ডেটের ১৫ দিন আগে কোনো রকম ডাউন পেমেন্ট না দিয়ে খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হতো। এতে কমে যেত খেলাপি ঋণ। আর খেলাপি ঋণ কমে যাওয়ায় প্রভিশনও কম দেখাতে হতো। এতে একদিকে প্রকৃত মুনাফা না করেও কৃত্রিম মুনাফা দেখানো হতো। অপরদিকে এ কৃত্রিম মুনাফার ওপর ভর করে ডিভিডেন্ড আকারে ভাগবাটোয়ারা করা হতো। পাশাপাশি কৃত্রিম মুনাফার ৪০ থেকে ৪২ শতাংশ করপোরেট ট্যাক্স আকারে সরকার বের করে নিতো। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর কোনোভাবেই দুর্নীতিবাজদের সাথে আপস করছেন না। এ কারণেই খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র বের হতে শুরু করেছে। যারা এত দিন ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করে বছরের পর বছর নিয়মিত দেখাতো এখন ওইসব ঋণই খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। ডিসেম্বর শেষে প্রকৃত খেলাপি ঋণের চিত্র আরো ভয়াবহ আকারে রূপ নেবে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। গত জুন মাস শেষে খেলাপি ঋণ ছিল দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। ওই সময় দেশের ব্যাংকগুলো থেকে বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশই এখন খেলাপি হয়ে গেছে। অর্থাৎ তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।

হিসাবে এ সময় পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে মোট ঋণের ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ খেলাপি হয়েছে। গত ১৬ বছরের মধ্যে বিতরণ করা ঋণ ও খেলাপি ঋণের আনুপাতিক হিসাবে এটি সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, গত বছরের জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছিল দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। যা তিন মাসের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক গোপনীয় প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। ব্যাংকাররা বলেন, নীতি-সহায়তা দিয়ে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ গোপনের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে লাফিয়ে বাড়ছে মন্দ ঋণ। আগের সব রেকর্ড ভেঙে খেলাপি ঋণ রেকর্ড পরিমাণে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। গত জুন মাস শেষে খেলাপি ঋণ ছিল দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। ওই সময় দেশের ব্যাংকগুলো থেকে বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশই এখন খেলাপি হয়ে পড়েছিল। অর্থাৎ তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।
অস্বাভাবিক খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, আন্তর্জাতিক পদ্ধতি অনুসরণ করার কারণে খেলাপি ঋণ বেশি হয়েছে। আগে টার্ম লোনের গ্রেস পিরিয়ড ছয় মাসে ছিল, এখন তা তিন মাসে করা হয়েছে। ফলে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দা হওয়ার কারণে ঋণ পরিশোধ কম হচ্ছে। এর কারণেও খেলাপি বেড়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement