১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

গাইবান্ধায় হাসিনাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা

-


গাইবান্ধায় শেখ হাসিনা, সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি)-সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার এবং চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে কুপিয়ে ও গুলি করে বিল্লাল হোসেন (৪৫) নামে একজনকে হত্যার অভিযোগে সাবেক এমপি আলী আজগর টগর ও সাবেক এসপি আব্দুর রহিমসহ ৯ জনের নামে হত্যা মামলা হয়েছে।
আমাদের সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক পুলিশ সুপার কামাল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুবলীগের সভাপতি, সম্পাদকসহ মোট ১০ জনকে আসামি করে উপজেলার কিসামত হলদিয়া গ্রামের বাসিন্দা ওহেদুর রহমান একটি হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ৫০-৬০ জনকে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলাটি গাইবান্ধা জেলা জজকোর্টে দায়েরের পর আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৪ আগস্ট সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার মিছিলে অংশ নেয়া ওহেদুর রহমানকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশের তৎকালীন কর্মকর্তাদের হুকুমে মিছিলে এই সরাসরি গুলি চালানো হয়। এতে বাদিসহ অনেক ছাত্রজনতা গুলিবিদ্ধ হন। ওহেদুর রহমানের শরীরে মোট ৯টি বুলেট লাগে এবং তাকে তাৎক্ষণিকভাবে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বাদি আরো অভিযোগ করেন, হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন আওয়ামী লীগের ৫-১০ নম্বর আসামির নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন অজ্ঞাত সন্ত্রাসী হাসপাতাল আক্রমণ করে এবং আহত ছাত্র-জনতাকে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত করে। পরিস্থিতির ভয়ে বাদি চিকিৎসা অসম্পূর্ণ রেখেই হাসপাতাল ত্যাগ করতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে ডা: তাজুল ইসলামের চেম্বারে একটি বুলেট অপসারণ করা হয়। শারীরিক সুস্থতা অর্জনে সময় লাগায় মামলা করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে- ১. শেখ হাসিনা (সভানেত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ), ২. মো: কামাল হোসেন (তৎকালীন জেলা পুলিশ সুপার), ৩. মো: ইব্রাহীম (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার), ৪. মো: মাসুদ রানা (সাবেক ওসি, সদর থানা), ৫. মো: আবু বক্কর সিদ্দিক (সভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগ) ৬. মো: মোজাম্মেল হক মণ্ডল (সাধারণ সম্পাদক, জেলা আওয়ামী লীগ), ৭. সর্দার সাঈদ হোসেন লোটন (সভাপতি জেলা যুবলীগ), ৮. শাহ আহসান হাবীব রাজীব (সাধারণ সম্পাদক জেলা যুবলীগ), ৯. মো: আসিফ সরকার সাবেক সভাপতি, গাইবান্ধা জেলা ছাত্রলীগ, ১০. মো: মোসাদ্দেক (মামুন) (সাবেক সাধারণ সম্পাদক জেলা ছাত্রলীগ)।
পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে কুপিয়ে গুলি করে হত্যার অভিযোগে।

চুয়াডাঙ্গায় সাবেক এমপি, এসপিসহ ৯ জনের নামে হত্যা মামলা
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নাটক কুপিয়ে ও গুলি করে বিল্লাল হোসেন (৪৫) নামে একজনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাবেক এমপি আলী আজগর টগর ও সাবেক জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুর রহিমসহ ৯ জনের নামে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। সোমবার (১১ নভেম্বর) বিল্লাল হোসেনের বোন শালপোনা পারভীন (৪০) বাদি হয়ে চুয়াডাঙ্গা আমলি আদালতে (দর্শনা) এই মামলা করেছেন। পরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন চুয়াডাঙ্গা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো: মাসুদ পারভেজ রাসেল।
দর্শনা আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: রিপন হোসেন বাদির বক্তব্য গ্রহণ করে মামলাটি চুয়াডাঙ্গা সিআইডিকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- সাবেক কাউন্সিলর ও দর্শনা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নুল আবেদিন নফর, দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ এসআই মিজানুর রহমান মিজান, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও দর্শনা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী মনসুর বাবু, দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা আলীহিম, দামুড়হুদা থানার সাবেক ওসি মো: আহসান হাবিব, এএসআই দেবাশীষ ও কনস্টেবল সাজিদুর রহমান।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌর এলাকার দক্ষিণ চাঁদপুরের গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে মো: বিল্লাল হোসেন কাছে দলীয় দাপট দেখিয়ে চুয়াডাঙ্গা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাবেক এমপি আলী আজগার টগর, আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদীন নফর, আলী মনসুর বাবু ও আলীহিম পুলিশের ক্রসফায়ারে ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দাবি করেন। বিল্লাল হোসেন সেই টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় আসামিরা বিল্লাল হোসেনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এরপর ২০১৩ সালের ১১ আগস্ট রাত আড়াইটার দিকে অবৈধভাবে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে বিল্লাল হোসেনকে নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে উজলপুর রাস্তার হরচরার মাঠে নিয়ে যায়। এ সময় আসামিরা বিল্লালকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও একাধিক গুলি করি হত্যা করে। পরে পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজায় তারা। পরের দিন এ খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
দেশে স্বৈরাশাসক পতনের পর ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় বিল্লাল হোসেনের বোন আমি শালপনা পারভীন বাদি হয়ে সোমবার (১১ নভেম্বর) চুয়াডাঙ্গা আমলী আদালতে (দর্শনা) এই হত্যা মামলা দায়ের করেন।


আরো সংবাদ



premium cement