সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:৩৬, আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:৩৬
বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বহাল রাখার পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। সংবিধান অনুসারে, প্রধান বিচারপতি ও জ্যেষ্ঠ দুজন বিচারপতির সমন্বয়ে এ কাউন্সিল গঠিত হয়। কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে এ কাউন্সিল যাচাই-বাছাই করে রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ পাঠাতে পারে। গতকাল এ তথ্য জানায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
বর্তমানে অন্তত ১৫ জন বিচারপতিকে বিচার কাজের বাইরে রাখা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, এ কাউন্সিলে কয়েকজন বিচারপতির বিষয়ে তথ্য যাচাই-বাচাইয়ের কাজ চলছে। তবে রাষ্ট্রপতির কাছে এখনো কোনো অভিযোগ পাঠানো হয়নি।
গতকাল একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের খবরে বলা হয়, তিন বিচারপতির বিষয়ে অভিযোগ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। এরপর সুপ্রিম কোর্ট এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ষোড়শ সংশোধনী রায়ের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হলেও এবং কাউন্সিলে কয়েকজন বিচারপতির তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলমান থাকলেও এ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পক্ষ থেকে কোনো বিচারপতি সম্পর্কে অভিযোগ পাঠানো হয়নি।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘তিন বিচারপতির অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ মর্মে খবরটি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল কর্তৃক গত সন্ধ্যায় সম্প্রচার হয়। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের গোচরীভূত হয়েছে। ষোড়শ সংশোধনী রায়ের পরে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হলেও এবং উক্ত কাউন্সিলে কয়েকজন বিচারপতি সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলমান থাকলেও অদ্যাবধি মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কর্তৃক কোনো বিচারপতি সম্পর্কে কোনো অভিযোগ প্রেরণ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেল কর্তৃক সম্প্রচারিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, কাল্পনিক এবং ভিত্তিহীন।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের বিধানসংক্রান্ত সংবিধানের বহুল আলোচিত ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র পক্ষের করা ‘রিভিউ’ গত ২০ অক্টোবর পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ থেকে বাতিল হওয়া ২ থেকে ৮ উপঅনুচ্ছেদ পুনর্বহাল (রিস্টোর) করে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বিভাগ ঐতিহাসিক রায় দেন। এক রায়ের ফলে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বহাল হয় এবং বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছ থেকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে ফেরে বলে জানান রিভিউ শুনানিতে অংশ নেয়া আইনজীবীরা।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হয়। ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ৯ জন আইনজীবী হাইকোর্টে একটি রিট করেন। সে রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের দেয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। সে আপিলের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে রায় দেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে, দেশের গণতন্ত্র, রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, সুশাসন, দুর্নীতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। তবে আপিল বিভাগের দেয়া সে রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সে রিভিউ’ গত ২০ অক্টোবর পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। রিটকারী পক্ষে আদালতে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান। আর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
রিভিউ নিষ্পত্তির পর ওই দিন নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে কোনো অভিযোগ করলে বা পেলে প্রাথমিক একটি অনুসন্ধান করা হবে। কাউন্সিল যাচাই-বাছাই করে দেখবে অসদাচরণ বা দুর্নীতি (অর্থনৈতিক বা বুদ্ধিভিত্তিক) পাওয়া গেল কি না। পাওয়া গেলে প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতির। এখানে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত মেকানিক্যাল। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের দায়িত্ব হলো অসদাচরণ প্রমাণিত হয়েছে কি হয়নি, তাসহ সুপারিশ পাঠানো।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা