০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১,
`

‘গদিচ্যুত হাসিনাকে কেন নিরাপদ আশ্রয় দিল্লির?’ মোদিকে প্রশ্ন হেমন্তের

-

সীমান্ত সুরক্ষা ও অনুপ্রবেশ ইস্যুতে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের একের পর এক কড়া মন্তব্যের পাল্টা বিস্ফোরক মন্তব্য দিলেন দেশটির ঝাড়খণ্ড রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। এ বিষয়ে বিজেপি দ্বিচারিতা করেছে বলে মন্তব্য করে পাল্টা প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের গদিচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে কেন নিরাপদ আশ্রয় দিলো দিল্লি?’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে বলছে, রোববার ঝাড়খণ্ডের গাড়োয়া বিধানসভার কেন্দ্রের রাঁকায় নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছিলেন হেমন্ত সোরেন। এর কিছুক্ষণ আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাঁচিতে প্রচার করতে গিয়ে অনুপ্রবেশ ইস্যুতে ঝাড়খণ্ড সরকারের কার্যত কঠোর সমালোচনা করেন। তারই জবাবে শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ তুলে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মোদি তো শপথ নেয়ার সময় সংবিধানের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিলেন। তাতে ছিল যে, প্রত্যেক জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সব সমস্যা সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। এখন আমি তাকে প্রশ্ন করতে চাই, বাংলাদেশের সঙ্গে কি আলাদা করে কোনো চুক্তি আছে? তা না হলে সেখানকার অভ্যন্তরীণ সমস্যার জেরে এখানে আসার পর শেখ হাসিনার হেলিকপ্টারকে নামতে দেয়া হলো কেন? কেনই বা দিল্লি তাকে নিরাপদ রাজনৈতিক আশ্রয়ের ঘেরাটোপে রেখেছে?’
বাংলাদেশের সঙ্গে গোপনে কোনো চুক্তি রয়েছে বলেও মোদির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার (জেএমএম) এই নেতা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইস্যুতে বিজেপি নেতারা দ্বিচারিতা করেছেন। ভারত সংবিধান মতো চলবে। শেখ হাসিনার হেলিকপ্টার এখানে কেন নামতে দেয়া হলো? কেন তাকে রিফিউজি হিসেবে আশ্রয় দেয়া হলো? এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে মোদিকে।

এ দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, তোষণার রাজনীতিকে চরমে নিয়ে গিয়েছে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা, কংগ্রেস এবং আরজেডি। আর এই তিনটি দলই অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থন করে। বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের ভোট পাওয়ার জন্য এদের গোটা রাজ্যে বসবাসের জন্য জায়গা করে দিচ্ছে এই তিনটি দল।
হিন্দুস্থান টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, একদিন আগেই অমিত শাহ এসে ঝাড়খণ্ডে অনুপ্রবেশ ইস্যুতে একই ধরনের অভিযোগ তুলেছিলেন জেএমএম, কংগ্রেসকে। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই এবার বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার অভিযোগ, রাজ্যজুড়ে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের বসবাসের জায়গা করে দিচ্ছে সরকার পক্ষ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পরিস্থিতি এখানে এমন হয়ে গিয়েছে যে সরস্বতী বন্দনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে। এখান থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে বিপদ কতটা বড়। যখন উৎসবে পাথর ছোড়া হয়, দুর্গা মাকেও আটকে দেয়া হয়, যখন কার্ফ্যু জারি করা হয়, তখন জানা যায়, যে পরিস্থিতি কতটা গুরুতর। মেয়েদের সঙ্গে বিয়ের নাম করে প্রতারণা হচ্ছে। তখন বুঝতে হবে, জল মাথার ওপর দিয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে। যখন অনুপ্রবেশের মামলা আদালতে যায়, কিন্তু প্রশাসন সেটা অস্বীকার করে, তখন বুঝতে হবে সরকারতন্ত্রেই অনুপ্রবেশ হয়ে গিয়েছে।’
উল্লেখ্য, তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর থেকে তিনি সেখানেই রয়েছেন। আগামী ১৩ তারিখ ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা ভোট। তার আগে প্রচার তুঙ্গে। রোববার গাড়োয়া রাঁকায় প্রচারে গিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে কড়া প্রশ্নবাণ ছুড়লেন হেমন্ত সোরেন।
অমিত শাহ বলেন, ঝাড়খণ্ড অনুপ্রবেশকারীতে ভরে যাচ্ছে। স্থানীয় অধিবাসীর সংখ্যা কমছে। এখানে অনুপ্রবেশকারীরা আসছে আর এখানকার মেয়েদের প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে করে তাদের জমিজমা দখল করে নিচ্ছে। নরেন্দ্র মোদির আমলে ঝাড়খণ্ডের উন্নতি হয়েছে। পাঁচ বছর আগে হেমন্ত সোরেন রাজ্যের দায়িত্ব নিয়ে মোদি সরকারের অনেক প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছেন।’

 


আরো সংবাদ



premium cement