তরুণদের পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৮
দেশে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে তরুণদের মনস্থির করার ও স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমি বিশেষ করে তরুণদের তাদের মনস্থির করতে, চিন্তা করতে ও স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করি। স্বপ্ন হলো পরিবর্তনের সূচনা। স্বপ্ন দেখলে পরিবর্তন হবে। আপনি যদি স্বপ্ন না দেখেন তবে এটি কখনোই হবে না।’ গতকাল রোববার তেজগাঁও কার্যালয়ে এনডিসি ও এফডব্লিউসি কোর্সের সদস্যদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
তরুণদের দিকে ইঙ্গিত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘নিজেকে প্রশ্ন করুন আমি বিশ্বের জন্য কী করতে পারি? একবার আপনি কী করতে চান তা বুঝতে পারলে আপনি তা করতে পারবেন, কারণ আপনার সেই ক্ষমতা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্বের তরুণ প্রজন্ম এখন সমগ্র মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম। ‘তারা যথেষ্ট স্মার্ট হওয়ার কারণে নয় বরং তাদের হাতে প্রচুর প্রযুক্তি রয়েছে বলে।’
প্রযুক্তিকে আলাদিনের চেরাগ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি যদি ছাত্র বিপ্লবের দিকে তাকান, তবে এটি প্রযুক্তির বিষয়। তারা একে অপরের সাথে খুব দ্রুত যোগাযোগ করতে পারত। তাদের কোন কমান্ড কাঠামো ছিল না।’ ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিপ্লব সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশের তরুণ যুবকরা একটি নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তরুণরা রাজনীতিবিদ নয় এবং কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টাও তারা করছে না। তবে তারা নিজেদের জন্য একটি নতুন দেশ চায়। বিশ্ব শান্তির কথা উল্লেখ করে, ২০০৬ সালের নোবেল শান্তি বিজয়ী বলেন, বেশির ভাগ সময় মানুষ শান্তির নামে একে অপরকে হত্যা করে। তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা প্রতিদিন, আমাদের সব উচ্চারণ ও আমাদের সব দর্শনে নিজেদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করি। আমরা শান্তি চাই। দেশের ভেতরে শান্তি, সব দেশের মধ্যে শান্তি এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তার কাছে অত্যন্ত হাস্যকর মনে হয় যে বিশ্বের প্রতিটি সরকারেরই একটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আছে, যা আক্ষরিক অর্থে এটি যুদ্ধ মন্ত্রণালয়, কিন্তু কোনো শান্তি মন্ত্রণালয় নেই। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘যদি আপনার লক্ষ্য শান্তি হয়, তাহলে আপনার কি শান্তি মন্ত্রণালয় থাকা উচিত নয়?’
আক্রমণের বিরুদ্ধে জনগণকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে- এটি পর্যবেক্ষণ করে অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বের সরকারগুলোতে শান্তি মন্ত্রণালয় ও যুদ্ধ মন্ত্রণালয় উভয় মন্ত্রণালয়ই রাখার ওপর জোর দেন। তিনি প্রতিরক্ষা অ্যাটাশেসহ বৈদেশিক সম্পর্কে শান্তি অ্যাটাশে প্রবর্তনের পরামর্শ দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটি আত্ম-ধ্বংসাত্মক গ্রহ। কেননা ‘আমরা শুধুমাত্র নিজেদের হত্যা করার জন্য প্রস্তুত সবকিছু করেছি।’ একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, মানুষ গ্রহ ধ্বংস করতে পরিবেশ ধ্বংস করছে। প্রতিদিন মানুষ গ্রহকে ধ্বংস করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা একটি ভুল সভ্যতা তৈরি করেছি, আত্মবিধ্বংসী সভ্যতা।’ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস তার বক্তব্যে এনডিসি ও এএফডব্লিউসি কোর্সের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানান এবং তাদের সাফল্য কামনা করেন।
আসিয়ান সদস্য পদ পেতে ইন্দোনেশিয়ার সমর্থন চান প্রধান উপদেষ্টা : এদিকে, গতকাল রোববার বাংলাদেশে নিযুক্ত ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত হেরু হারতান্তো সুবোলো তেজগাঁওয়ের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেন। এ সময় ড. ইউনূস আসিয়ানে বাংলাদেশের সদস্যপদে ইন্দোনেশিয়ার সমর্থন চেয়েছেন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিকে বাংলাদেশীদের ব্যবসায়ের জন্য আরো সুযোগ তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূতকে বলেন, ‘আমি আশা করি ইন্দোনেশিয়া আমাদের আসিয়ানের সদস্যপদ পেতে সাহায্য করবে। এটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূতকে আরো জানান, তিনি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইবরাহিমের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের সময়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। আগামী জানুয়ারিতে মালয়েশিয়া আসিয়ানের সভাপতিত্ব গ্রহণ করবে।
রাষ্ট্রদূত সুবোলো বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি তার দেশের সমর্থন জানান। তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়া আসিয়ান সদস্য হওয়ার জন্য বাংলাদেশের আবেদন নিবিড়ভাবে অনুসরণ করবে। তিনি বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে। আশা করি এটি উভয় দেশের জন্য উপকারী হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা ক্ষুদ্র ঋণ প্রচারের জন্য ইন্দোনেশিয়ায় তার একাধিক সফরের কথা স্মরণ করেন। তার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশী ব্যবসার খুব কম উপস্থিতি দেখেছেন বলেন জানান। তিনি বলেন, ‘একটা বিষয় সবসময় অনুশোচনার যে, ইন্দোনেশিয়ায় খুব বেশি বাংলাদেশী নেই। বাংলাদেশীরা সর্বত্র আছে কিন্তু ইন্দোনেশিয়ায় নেই।’ তিনি আরো বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়া বৃহত্তম মুসলিম দেশ। কিন্তু সে দেশের মানুষ বাংলাদেশ সম্পর্কে তেমন জানেন না। আমরা খুব বেশি যোগাযোগ করছি না। আমাদের কাছাকাছি আসার জন্য অবশ্যই একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে।’ তিনি ইন্দোনেশিয়াকে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো বেশি বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ভর্তিসহ বাংলাদেশী চিকিৎসক নিয়োগ এবং বাংলাদেশ থেকে ওষুধপত্র আমদানি করার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত সুবোলো বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে ব্যবসায়িক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি ২০২৪ সালের জুলাই মাসে মাতারবাড়ী এবং অন্যান্য এলাকায় সোলার পিভি বিনিয়োগ প্রকল্পের বিষয়ে পারটামিনা পাওয়ার ইন্দোনেশিয়া এবং কোল জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের মধ্যে এমওইউ স্বাক্ষরের বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। প্রধান উপদেষ্টা ইন্দোনেশিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট প্রবোও সুবিয়ানতোকে তার দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অভিনন্দন জানান এবং সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা