০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১,
`
সাফজয়ী নারী ফুটবল দলকে সংবর্ধনা

সাবিনাদের চাহিদাগুলো লিখিত দিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ বিজয়ী নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, আসর সেরা খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমা ও সেরা গোলরক্ষক রূপনা চাকমা ফটোসেশনে অংশ নেন : পিআইডি -

টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ নারী দল। ৩০ অক্টোবর ফাইনালে নেপালকে তাদের মাঠে ২-১ গোলে হারিয়ে এই শিরোপা ধরে রেখেছে। এই সাফজয়ী বাংলাদেশ দলের সদস্যদের গতকাল সংবর্ধনা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার কাছে নানান সমস্যার কথা তুলে ধরেন সাফজয়ীরা। সাথে দেন প্রস্তাবনা। প্রধান উপদেষ্টা নারী ফুটবল দলের সদস্যদের তাদের চাহিদাগুলো লিখিত আকারে দিতে বলেন। জানান, ‘কোনো ধরনের দ্বিধা ছাড়াই তোমরা তোমাদের চাহিদাগুলো লিখিত আকারে দেবে। আমরা তোমাদের চাওয়া-পাওয়াগুলো পূরণের চেষ্টা করব। যদি এখন তোমরা কোনো কিছু উল্লেখ করো তাহলে এখনই এর সামাধান করব।’ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বাংলাদেশের নারী ফুটবলের সব সদস্যই নিতান্তই গরিব ঘর থেকে উঠে এসেছে। ফলে নানা বাধা ডিঙ্গিয়েই তাদের এ পর্যন্ত আসা। বাংলাদেশ অধিনায়ক সাবিনা খাতুন প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, আমাদের নানান প্রতিকূলতা পেরিয়েই এ পর্যায়ে উঠে আসা। আমরা যে বেতন বাফুফে থেকে পাই, তা নিয়মিত নয়। এই বেতনও কিন্তু পর্যাপ্ত নয়।’ সাতক্ষীরার এই স্ট্রাইকার এরপর অন্য ফুটবলারদের সমস্যাগুলো তুলে ধরতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। বাংলাদেশ দলের অপর সদস্য মিডফিল্ডার মারিয়া মান্ডা ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের মেয়ে। তার মতো চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের মোট ছয় সদস্য এই কলসিন্দুর থেকে উঠে এসেছেন। সাবিনা জানান, মারিয়া মান্ডা ছোটবেলায় তার বাবা হারিয়েছেন। এরপর বেড়ে ওঠা মায়ের কাছে।

স্ট্রাইকার কৃষ্ণা রানী সরকার ঢাকায় তাদের আবাসন সমস্যার কথা উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টার কাছে। উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে পুরুষ সাফে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের সদস্যরা পূর্বাচল প্লট পেলেও মহিলা ফুটবলাররা ২০২২ সালের সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েও প্লট পায়নি। এবার তাদের দ্বিতীয় ট্রফি জয়। খাগড়াছড়ির প্রত্যন্ত লক্ষ্মীছড়ি থেকে লাল-সবুজ জার্সিতে প্রতিনিধিত্ব করছেন মনিকা চাকমা। এই মিডফিল্ডার তার ফুটবলার হওয়ার পেছনে নানা বাধা বিপত্তির কথা উল্লেখ করেন ড. ইউনূসের কাছে। দিনাজপুরের রানী শংকৈইলের মেয়ে স্বপ্না রানী। এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার তার গ্রামের দুর্বল অবকাঠামোর কথা তুলে ধরেন।
সমস্যাগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশ দলের জন্য বার্সেলোনার মতো দলের সাথে ম্যাচ খেলার দাবিও তোলা হয়। কৃষ্ণা রানী সরকারপ্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেন ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনার সাথে প্রীতিম্যাচ আয়োজনের ব্যবস্থা করতে। সে সাথে কৃষ্ণা এশিয়ার বাইরের প্রতিপক্ষের সাথে ম্যাচ খেলার ইচ্ছের কথাও বলেন।
অনুষ্ঠানের পর সংবাদ সম্মেলনে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানান, ফুটবলাদের দু-তিন দিনের মধ্যে তাদের সমস্যাগুলো লিখিত আকারে জমা দিতে বলা হয়েছে। আমি নিজে সেগুলো প্রধান উপদেষ্টার কাছে পৌঁছে দেবো। আরো উল্লেখ করেন, প্রধান উপদেষ্টা নারী ফুটবল দলের সব সদস্যকে ফুটবল ও সই করা জার্সি উপহার দেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার মাহমুদা আক্তার অনন্যা এবং কোচ পিটার জেমস বাটলারও উপস্থিত ছিলেন। ২৩ ফুটবলার এবং কোচ ও ম্যানেজারসহ মোট ২৫ জনকে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে টিম লিডার, সহকারী কোচ, গোলরক্ষক কোচ, ফিজিও ও মিডিয়া আফিসার আমন্ত্রণ না পাওয়ায় যেতে পারেননি। বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন ম্যানেজার মাহমুদা আক্তার। ম্যানেজার তথ্য দেন, স্যার (প্রধান উপদেষ্টা) বিষয়টি দেখার কথা বলেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement