আইএমএফের ঋণের অর্থে কেনা হয় অস্ত্র ও গুলি
আওয়ামী আমলে প্রতি বছর ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৩
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতি বছর দেশ থেকে পাচার হয়েছে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে বাংলাদেশ থেকে মোট কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে হিসাব করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন ঘটনার ভিত্তিতে ধারণা করা যায়, বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ১২-১৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে ‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উপায়’ বিষয়ে আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম ও সম্ভাবনার বাংলাদেশ যৌথভাবে এ সেমিনার আয়োজন করে। গ্রিনওয়াচ ঢাকার সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়েস্ট সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি তার প্রবন্ধে বলেন, অবৈধ প্রক্রিয়ায় অর্থ স্থানান্তর ও অর্থ পাচার উভয় পদ্ধতিতেই দেশ থেকে অর্থ সরানো হয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চালান জালিয়াতির মাধ্যমে অনৈতিক প্রক্রিয়ায় বিদেশে অর্থ পাচার করা হয়। অনুমান করা হয়, এই প্রক্রিয়ায় প্রায় ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলার পাচার করা হয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আইএমএফসহ বিভিন্ন বিদেশী সংস্থার দেয়া ঋণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে আনিসুজ্জামান বলেন, তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক বৈধতা ছিল না, ঋণ দিলে সে অর্থ জনগণের কাজে আসবে না, এসব জানা সত্ত্বেও আইএমএফ সরকারকে কেন ঋণ দিয়েছিল, সে প্রশ্নও তোলা প্রয়োজন। এসব ঋণের টাকা শুধু অপব্যবহারই হয়নি, তা দিয়ে সরকার অস্ত্র কিনেছে, গুলি ও বারুদ কিনেছে যে সব তারা সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। গত সরকারের সময়ে বিভিন্ন উৎস থেকে যত ঋণ নেয়া হয়েছে ও ব্যয় করা হয়েছে, সব ক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে স্বাধীন তদন্ত করার দাবি জানান তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বলয় প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখলের মাধ্যমে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনীতি, আমলাতন্ত্র ও ব্যবসায়ী ত্রিমুখী- আঁতাত মৌলিক ভূমিকা পালন করেছে। সব প্রতিষ্ঠানেই দীর্ঘ সময় ধরে দলীয়করণের চর্চা হয়েছে; গত ১৫-১৬ বছরে যার চূড়ান্ত রূপ আমরা দেখেছি। এতে আমলাতন্ত্রকে কর্তৃত্ব দিয়েছে রাজনৈতিক শক্তি আর তা বাস্তবায়নে ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন এজেন্সিকে।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দুর্নীতি ও অর্থ পাচারে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। দেশের ব্যাংক খাতকে যে খাদের কিনারায় ঠেলে দেয়া হয়েছে, তার পেছনে মূল দায়ী হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব প্রতিষ্ঠানের মৌলিক সংস্কার ও সেগুলোকে ঢেলে সাজানো ছাড়া বিকল্প নেই।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব, যদিও তা অনেক কঠিন ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যেসব দেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে, ওই সব দেশের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা যেতে পারে।
সে ক্ষেত্রে দেশগুলোর সহযোগিতার মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, অর্থ পাচার বন্ধে সাপ্লাই (যে দেশ থেকে পাচার হয়) ও ডিমান্ড (যে দেশে পাচার হয়) উভয়ের মধ্যে সহযোগিতার পরিবেশ থাকতে হবে।
অর্থনীতিবিদ নাঈম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ হাইজ্যাক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ আকর্ষণ করা যাবে কিভাবে? পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে সবার আগে মানসিকতা ঠিক করতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রভাবশালীরা পাচার করা অর্থ হজম করে ফেললে তা ভবিষ্যতের জন্য ভালো উদাহরণ হবে না। সে জন্য পাচারকারীদের স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে, বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাচারের বিষয়টি আরও জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা