বিশ্বনেতাদের পছন্দ কে কমলা নাকি ট্রাম্প!
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৩
দুই দিন বাদেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশই নয় কেবল, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ ও গণতান্ত্রিক দেশের প্রতীক ধরা হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। ৫ নভেম্বর সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বহুল আলোচিত এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হলেন, গত নির্বাচনে হেরে যাওয়া আগের বারের প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প আর গত নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। ২০১৬ নির্বাচনে ট্রাম্প আরেক নারী প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়েই প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন।
বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের বসবাস যুক্তরাষ্ট্রে। এই নির্বাচনের ওপর অভিবাসী অনেকের ভাগ্যও নির্ভরশীল। তাই যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন মানেই যেন বিশ্বের সবার নির্বাচন। বিশ্বনেতারা তো বটেই, সব দেশের মানুষের গভীর পর্যবেক্ষণে থাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ভøাদিমির পুতিন থেকে শি জিনপিং, ইউরোপীয় ও ন্যাটো নেতা থেকে ভারতের মোদি, হোয়াইট হাউজে বিশ্বনেতারা কাকে পছন্দ করছেন?
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে বিশ্বের কোন নেতার পছন্দ কে? বিশ্লেষণে দেখা গেছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ট্রাম্পকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে পছন্দ করছেন। চাথাম হাউজের রাশিয়া এবং ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের সহযোগী ফেলো টিমোথি অ্যাশ আলজাজিরাকে বলেছেন, প্রথমত পুতিন মনে করেন ট্রাম্প রাশিয়ার প্রতি নমনীয় এবং ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা হ্রাস এবং রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ব্যাপারে রাজি হবেন। গত অক্টোবরে, ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন সমাপ্তির সময়, পুতিন বলেন যে ট্রাম্প ‘ইউক্রেনের সঙ্ঘাতের অবসান ঘটাতে সবকিছু করার ইচ্ছার কথা বলেছেন। আমি মনে করি সে আন্তরিক।
পুতিন পশ্চিমা উদার বাজারের গণতন্ত্রের ব্যবস্থাকে ‘ঘৃণা করেন’ এবং রুশ এই নেতা মনে করেন যে, ট্রাম্প ১.০-এ অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলার বীজ বপনের ক্ষেত্রে অনড় থাকবেন, যা ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করবে। তবে রুশ বিশ্লেষকদের মতে মার্কিন নির্বাচনে যেই জয়লাভ করুক মস্কোর কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন, রাশিয়ার প্রতি মার্কিন বিদ্বেষ বজায় থাকবে বলে আনাদোলু বার্তা সংস্থা জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান উভয়ই চীনের প্রতি কঠোর অবস্থানে। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন, ট্রাম্প চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেন, ২০১৮ সালে ২৫০ বিলিয়ন ডলার চীনা পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করেন। চীন পাল্টা আঘাত হিসেবে মার্কিন পণ্য আমদানির ওপর ১১০ বিলিয়ন ডলার শুল্ক বসিয়েছিল। ট্রাম্প নির্বাচিত হলে তার চীনা নীতি পরিবর্তন হবে না এবং ডেমোক্র্যাটরাও বিশ্বব্যাপী চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে অবস্থান পাল্টাবেন না। বাইডেন ট্রাম্পের শুল্ক বহাল রাখা ছাড়াও চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরো বৃদ্ধি করেছেন।
গত ১৪ জুলাই ট্রাম্প একটি হত্যা প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে যাওয়ার পরে, তিনি বলেছিলেন যে বিশ্ব নেতারা তার সাথে যোগাযোগ করেছেন। ট্রাম্প তখন বলেন, প্রেসিডেন্ট শির সাথে আমি খুব ভালোভাবে মিশেছি। তিনি একজন দুর্দান্ত লোক। এবিসি নিউজ বলছে, পর্দার আড়ালে, চীনা কর্মকর্তারা হ্যারিসের দিকে কিছুটা ঝুঁকে থাকতে পারে বলে মনে করছেন পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের প্রাক্তন ডিন জিয়া কিংগু। টিমোথি অ্যাশ বলেন, ‘বিদ্রুপের বিষয় হলো, শি সম্ভবত হ্যারিসকে চায়, যেমন ইরান চায়।’
বেশির ভাগ ইউরোপীয় নেতা কমলা হ্যারিসকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে পছন্দ করেন। জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি তাকে ভালো করেই জানি, তিনি অবশ্যই একজন ভালো প্রেসিডেন্ট হবেন।’ ট্রাম্প একাধিকবার ন্যাটো ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। যদিও পলিটিকো রিপোর্ট করেছে যে, ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, তার জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। উপরন্তু, ট্রাম্পের বিজয়ের অর্থ পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উদ্যোগের জন্য সহযোগিতায় ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে কম সহায়তায় যাবেন তিনি। কারণ গত জুলাইয়ে দলের মনোনয়ন গ্রহণ করার সময় রিপাবলিকান জাতীয় সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ড্রিল করব, বেবি! ড্রিল করব।’ তার মানে খনিজ তেল আহরণে বরাদ্দ বৃদ্ধি করবেন ট্রাম্প। অন্য দিকে হ্যারিস সম্ভবত বাইডেনের মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস আইন এবং ক্লিন এনার্জি ট্রানজিশন পরিকল্পনা চালিয়ে যাবেন, ইউরোপের সাথে সহযোগিতা করার সুযোগ তৈরি করবেন।
ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, নরেন্দ্র মোদি ট্রাম্পের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভাগ করার পাশাপাশি ২০২০ সালে নির্বাচনে বিজয়ের জন্য বাইডেনকে প্রথম অভিনন্দন জানান। দিল্লির ধারণা ট্রাম্প মানবাধিকার ইস্যুসহ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নিয়ে হট্টগোল করবেন না। বাইডেনের অধীনে, প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রে মার্কিন ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক গভীর হয়। ভারত আনুষ্ঠানিক সামরিক মিত্র না হওয়া সত্ত্বেও এবং সামরিক সহায়তার জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল হওয়া সত্ত্বেও বাইডেন ভারতকে প্রধান প্রতিরক্ষা অংশীদার করেছেন। টোকিওতে কোয়াড সম্মেলনের পাশাপাশি, ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এআই, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে একটি উদ্যোগ ঘোষণা করে। গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প মোদিকে ‘চমৎকার’ বললেও একই সময়ে, ভারতকে ‘আমদানি শুল্কের অপব্যবহারকারী’ বলেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল স্পষ্টভাবে ট্রাম্প কিংবা কমলাকে সমর্থন প্রকাশ করেননি। মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ব্রুকিংস বলছে, ট্রাম্প প্রশাসনের সময়, দক্ষিণ কোরিয়ানরা তাদের প্রতিরক্ষা এবং মার্কিন বাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণে যথেষ্ট অবদান না রাখার অভিযোগে হতাশ হয়েছিল। অন্য দিকে বাইডেন প্রশাসন উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হুমকি মোকাবেলায় খুব কমই করেছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রভাষক অ্যাডওয়ার্ড হাওয়েল আলজাজিরাকে বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন ওয়াশিংটন, টোকিও এবং সিউলের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় এবং ত্রিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার দিকে মনোনিবেশ করেছে।
জাপানের ওয়েবসাইট নিপ্পন কমিউনিকেশন্স ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষণ বলছে ট্রাম্পের জয়ের অর্থ হতে পারে যে তিনি দেশীয় নীতির দিকে মনোনিবেশ করবেন এবং জাপানের সাথে সহযোগিতা হ্রাস করবেন, শুল্ক বাড়াবেন, সেইসাথে জাপান সামরিক ব্যয় বাড়াবে। অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিক বেন ডোহার্টি গার্ডিয়ানে লিখেছেন, অস্ট্রেলিয়ার জন্য, ট্রাম্পের বিজয় অনেক প্রশ্ন উত্থাপন করবে, ট্রাম্প নির্বাচিত হলে প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করতে পারেন, যা অনানুষ্ঠানিক জলবায়ু জোট, আমব্রেলা গ্রুপের প্রভাবকে দুর্বল করতে পারে। ট্রাম্পের জয়ের অর্থ চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ হতে পারে, যা অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন না করলেও তিনি ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকেছেন। ২০১৯ সালে, ইসরাইলি-আমেরিকান কাউন্সিলে, ট্রাম্প বলেছিলেন: ‘ইহুদি রাষ্ট্রের হোয়াইট হাউজে আপনার রাষ্ট্রপতির চেয়ে ভালো বন্ধু কখনো ছিল না।’ নেতানিয়াহু ২০২০ সালের এক বিবৃতিতে বলেছিলেন যে ট্রাম্প ‘হোয়াইট হাউজে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় বন্ধু’ ছিলেন। গত জুলাই মার্কিন সফরের সময় নেতানিয়াহু ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের সাথে তার মার-এ-লাগো বাসভবনে দেখা করেন। একই সময়ে, বাইডেন প্রশাসন গাজা যুদ্ধে নেতানিয়াহুর সরকারকে অটুট কূটনৈতিক এবং সামরিক সহায়তা দিয়েছে, যেখানে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর সংখ্যা ৪৩,০৬১ এ দাঁড়িয়েছে। গত ৪ অক্টোবর, বাইডেন সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, আমার চেয়ে কোনো প্রশাসন ইসরাইলকে বেশি সাহায্য করেনি। কোনোটিই নয়। কোনোটিই নয়। কোনোটিই নয়। এবং আমি মনে করি বিবির (নেতানিয়াহুর ডাকা নাম) এটি মনে রাখা উচিত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা