০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
হেফাজতে খেলাফতের দাবি

জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশনের অফিস খুলতে দেয়া যাবে না

-


ঢাকায় জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস খুলতে দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন।
হেফাজতে ইসলাম : সংগঠনের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, দেশে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলজুড়ে অজস্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছিল। গুম-খুন ছাড়াও বিশেষত বিডিআর হত্যা, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের গণহত্যার পরেও নির্বিঘেœ স্বৈরাচারী শাসন কায়েম রাখতে পেরেছিল হাসিনা। পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে পারেনি জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশন। উল্টো গত বছরের নভেম্বরে জাতিসঙ্ঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দুর্নীতিগ্রস্ত কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে সব প্রতিবাদ উপেক্ষা করে নিয়োগ দেয়া হয়। তাই এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কাগুজে মানবাধিকার সংস্থার অফিস ঢাকায় হোক তা দেশের জনগণ চায় না।
তারা আরো বলেন, জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার পলিসিতে এলজিবিটিকিউ তথা সমকামীদের অধিকারের বিষয়টি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। কিন্তু বাংলাদেশ মুসলিম-অধ্যুষিত রাষ্ট্র হওয়ায় এ দেশে সমকামিতা শুধু ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে নিষিদ্ধই নয়, রাষ্ট্রীয় আইনেও দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ছাড়াও উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টনে তাদের নারী-পুরুষ সমানাধিকার ও সর্বজনীন যৌনশিক্ষার ইস্যুগুলো ইসলামের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে খ্রিষ্টান রাজ্য বানানোর আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রও উদ্বেগের বিষয়। সন্ত্রাসীরা পার্বত্য চট্টগ্রামে যে সন্ত্রাসবাদ, অশান্তির দাবানল সৃষ্টি করেছে, তা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রামে ৩৮ হাজার বাঙালি হত্যার দায় এবং সব ঘটনার দায় অবশ্যই সন্ত্রাসীদের নিতে হবে। কিন্তু জাতিসঙ্ঘ তাদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে সন্ত্রাসীদের পক্ষে বক্তব্য বিবৃতি দিয়েছেন। ফলে ঢাকায় তাদের অফিস খুলতে দেয়ার সিদ্ধান্ত চরম আত্মঘাতী হবে। নতুন করে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি হোক এবং তাতে অন্তর্বর্তী সরকার আরো দুর্বল হয়ে পড়ুক তা আমরা চাই না। আমরা পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের নিয়ন্ত্রণাধীন জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার পরিষদের অফিস এ দেশে খুলতে দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানাচ্ছি।
খেলাফত আন্দোলন : বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন নেতারা বাংলাদেশে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার পরিষদের অফিস স্থাপনের তৎপরতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে এই তৎপরতা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। বাংলাদেশের জনগণ বাংলাদেশে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার পরিষদের অফিস খুলতে দেবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তারা।

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে ঢাকায় জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে, স্বাধীন দেশে বিদেশী শক্তির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের প্রতিবাদ এবং মানবাধিকারের নামে ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা প্রমোট করার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আয়োজিত মানবন্ধনে নেতারা এ দাবি জানান। নেতারা বলেন, পশ্চিমাদের দোসর ও পদলেহী জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার পরিষদ ফিলিস্তিন, আফগানিস্থান, কাশ্মির, সিরিয়া, লেবানন, আরাকানসহ নির্যাতিত মুসলিম এলাকাগুলোতে কোনো কার্যকর ভূমিকাই রাখতে পারেনি। ফিলিস্তিনে ৪০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যাকারী, লক্ষাধিক মানুষকে আহতকারী, লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত করার জন্য দায়ী ইসরাইলের বিরুদ্ধে তারা কিছুই করতে পারেনি। মানবাধিকারের নামে এই প্রতিষ্ঠানটি এলজিবিটিকিউআই তথা সমকামিতা, ট্রান্সজেন্ডার, বিকৃত যৌনতার মতো অশ্লীল ও জঘন্য বিষয় ছড়িয়ে দেয়ার এজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত। শ্রীলঙ্কায় ১০ বছর চেষ্টা করেও তারা কোনো অফিস স্থাপন করতে পারেনি। মাত্র ১৬ থেকে ১৭টি দেশে অফিস স্থাপন করা এই প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশে অফিস স্থাপন করার কোনো প্রয়োজন নেই।
খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর আমির মাওলানা মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোফাচ্ছির হোসাইনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দীন। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- খেলাফত আন্দোলনের দাওয়াত ও তাবলীগ বিষয়ক সম্পাদক এবং কামরাঙ্গীরচর থানা আমির মাওলানা সাজেদুর রহমান ফয়েজী, মহানগর যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা সাইফুল ইসলাম জামালী, মহানগর সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও যাত্রাবাড়ী থানা আমির মুফতি মাহফুজুর রহমান প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement