৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
প্রধান উপদেষ্টার সাথে ভলকার তুর্কের সাক্ষাৎ

গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশনকে সহায়তা করছে জাতিসঙ্ঘ

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বাংলাদেশে মিসরের রাষ্ট্রদূত ওমর ফাহমি সাক্ষাৎ করেন : পিআইডি -

জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেছেন।
তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে জাতিসঙ্ঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের কাজ এবং ঢাকায় সফরকালে সরকারের উপদেষ্টা, সেনাপ্রধান, সংস্কার কমিশনের প্রধান, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি এবং কর্মকর্তাদের সাথে তার বৈঠক সম্পর্কে অবহিত করেন।
এসময় ফলকার টুর্ক গত জুলাই-আগস্ট মাসে গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত নৃশংসতার তদন্তে জাতিসঙ্ঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের কাজ চলমান আছে বলে প্রধান উপদেষ্টাকে জানান। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন চূড়ান্ত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, যা বিপ্লবের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত করছে, তার কাজ নিয়েও আলোচনা করেন। পাশাপাশি দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর যথাযথ সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গঠিত সংস্কার কমিশন নিয়েও আলোচনা করেন তিনি।
স্বৈরাচারী সরকারের সময় ঘটে যাওয়া বলপূর্বক গুমের বহু ঘটনা নিয়ে তদন্ত কমিশনের সদস্যদের সাথে তার কথা হয়েছে বলে জানান ভলকার তুর্ক। তিনি বলেন, ‘এমন অনেক কিছু আছে যা সংস্কার করা দরকার’ গুমের ঘটনা তদন্তে তার অফিস তদন্ত কমিশনকে সহায়তা করছে বলে জানান তিনি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে ‘স্বাধীন’ এবং ‘সম্পূর্ণ কার্যকর’ করে শক্তিশালী করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান ভলকার তুর্ক। তিনি জানান, জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দফতর ঢাকায় তাদের উপস্থিতি জোরদার করতে চায়।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারকে বাংলাদেশ সফর করার জন্য এবং বিপ্লবের সময় তার সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আপনার সফরে খুশি। তারা আপনার কাছে কৃতজ্ঞ।’ প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, তার সরকার প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং উন্নয়ন ও মানবাধিকার যেন একসাথে চলতে পারে তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তার সরকার আগের সরকারের ভুল ও অপরাধের ‘পুনরাবৃত্তি’ করবে না বলেও জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার এবং প্রধান উপদেষ্টা এসময় রোহিঙ্গা সঙ্কট, বিশেষ করে মিয়ানমারে সহিংসতার কবলে পড়া থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া কয়েক হাজার নতুন রোহিঙ্গার আগমন নিয়েও আলোচনা করেছেন।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আরো আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং সঙ্কট সমাধানে অব্যাহত প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন ভলকার তুর্ক।
প্রধান উপদেষ্টা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরি করতে জাতিসঙ্ঘের সহায়তা চেয়েছেন যাতে এই অঞ্চলের অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত লোকেরা তাদের নিজ অঞ্চলের কাছাকাছি থাকতে পারে। তারা দু’জনই এই আঞ্চলিক সমস্যাটির দ্রুততম টেকসই সমাধানের জন্য ‘কিছু গতিশীল উদ্যোগ’ নেয়ার প্রচেষ্টার কথা জানান এবং এক্ষেত্রে আসিয়ানের জোরালো ভূমিকার আহ্বান জানান।
কায়রোর ডি-৮ সম্মেলনে অংশ নিতে আমন্ত্রণ পেলেন ড. ইউনূস
নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, আগামী ডিসেম্বরে মিসরের রাজধানী কায়রোতে অনুষ্ঠিতব্য ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে মিসর। গতকাল বাংলাদেশে নিযুক্ত মিসরের রাষ্ট্রদূত ওমর ফাহমি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে মিসরের রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসির আমন্ত্রণপত্র প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, অন্তত পাঁচটি দেশÑ তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান এবং নাইজেরিয়ার সরকারপ্রধান কায়রোতে ১৬ থেকে ১৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য শীর্ষ সম্মেলনে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সম্মেলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাইডলাইন বৈঠকে ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের কিভাবে সমর্থন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হবে।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানের পর গণতান্ত্রিক উত্তরণে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রচেষ্টায় রাষ্ট্রদূত তার সরকারের সমর্থনের কথাও জানান।
অধ্যাপক ইউনূস এই সমর্থনকে স্বাগত জানান এবং আশা প্রকাশ করেন মিসর ও বাংলাদেশ ওআইসি এবং ডি-৮-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে হাতে হাত রেখে কাজ করবে। মিসরে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার কথা জানান তিনি।
রাষ্ট্রদূত ফাহমি আশা প্রকাশ করেন, ডি-৮ সম্মেলনে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দলও মিসর সফর করবেন। তিনি বলেন, মিসর তৈরী পোশাক ও ওষুধ খাতে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হতে চায় এবং পাট চাষ শিখতে চায়। পাশাপাশি দুই দেশের কৃষি, বস্ত্র ও ওষুধের ক্ষেত্রে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি এমন চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের কাজ ত্বরান্বিত করা উচিত বলেও মত দেন তিনি।
বৈঠকে ২০৩১-৩২ অর্থবছরের জন্য জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী আসনে বাংলাদেশের প্রার্থিতার প্রতি মিসরের সমর্থন নিশ্চিত করেন মিসরের রাষ্ট্রদূত। তিনি ইউনেস্কোর মহাপরিচালক পদে কায়রোর প্রার্থিতার জন্য ঢাকার সমর্থনও চেয়েছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও মিসরের মধ্যে ফরেন অফিস কনসালটেশন নতুন করে শুরু করার ওপর জোর দেন মিসরের রাষ্ট্রদূত। দুই দেশের মধ্যে প্রথম ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) হয় ২০১৮ সালে। কিন্তু দ্বিতীয় এফওসি ২০২১ সালে হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো হয়নি।


আরো সংবাদ



premium cement