বিতর্কিতরা বহাল : ৮ জেলায় নতুন ডিসি
- শামছুল ইসলাম
- ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর বিতর্কিত কর্মকর্তাদের জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগের ঘটনা ঘটে। ত্যাগী, বঞ্চিত ও যোগ্য কর্মকর্তাদের বাইরে রেখে আওয়ামী পরিবার সংশ্লিষ্ট এবং বিগত ১৫ বছরে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদেরই ডিসি পদে পুনর্বাসন করা হয়। এসব ডিসির প্রত্যাহারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় ছাত্র-জনতা মানববন্ধন-বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালন করছে। বিতর্কিত এসব ডিসিদের গোয়েন্দা সংস্থার গোপনীয় প্রতিবেদন অনুযায়ী তাদের মাঠ প্রশাসন থেকে প্রত্যাহার করার কথা থাকলেও তা না করে ৮ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়েছে সরকার। গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখার উপসচিব মুহাম্মাদ ইব্রাহিম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এই নিয়োগ দেয়া হয়।
নতুন নিয়োগ পাওয়া ডিসিদের মধ্যে পরিকল্পনা বিভাগের উপপ্রধান আফরোজা আকতার চৌধুরীকে জয়পুরহাটে, চট্টগ্রামের ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার আফিয়া আখতারকে রাজশাহী, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞাকে রাজবাড়ী, সরকারি আবাসন পরিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলামকে সিরাজগঞ্জ, অর্থ বিভাগের উপসচিব তৌফিকুর রহমানকে কুষ্টিয়া, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো: রফিকুল ইসলামকে দিনাজপুর, নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের পরিচালক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনকে শরীয়তপুরে এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আসমা শাহীনকে নাটোরে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এই নিয়োগেও বিতর্কিত ও আওয়ামী সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের পদায়নের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দীনের পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন এই কর্মকর্তা ১৬ বছরের কর্মজীবনের প্রায় ১১ বছর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দায়িত্ব পালন করেছেন। মাঠ প্রশাসনে ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন গাজীপুর সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে। সেখানে থাকাকালে তার বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ এনে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ আনেন সাংবাদিকরা।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের সময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সুবিধাভোগী বেশ কিছু কর্মকর্তাকে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি করা হয়। গত মাসের ২২ তারিখে এই কর্মকর্তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট এ বদলি করা হয়। এর মাত্র ১ মাস ৯ দিন পরে আবারো জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বঞ্চিত কর্মকর্তারা জানান, ডিসি নিয়োগ নিয়ে নানা ঘটনা ঘটে গেলেও এখন পর্যন্ত স্বৈরাচারীর দোসরদের পুনর্বাসনে ব্যস্ত রয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ৫ আগস্টের আগের তৈরি ফিটলিস্টে থাকা কর্মকর্তাদের এই সরকারের সময়ও পুনর্বাসন করা হচ্ছে। এই পুনর্বাসনের দায়িত্ব পালন করছেন স্বৈরাচারের সুবিধাভোগী শেখ হাসিনার সরকারের আরেক আস্থাভাজন নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো: আব্দুর রউফ এনডিসি।
যিনি শেখ হাসিনার শাসনামলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে আইন অনুবিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৭ ব্যাচের কর্মকর্তা শেখ হাসিনার কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন। এই কর্মকর্তা ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার পদে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় খুলনায় যোগদান করেন। ওয়ান-ইলেভেনের পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপর ২০১৫ সালের ২৯ মার্চ তাকে পদায়ন হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবে। যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতি পান ২০১৯ সালের ১৬ জুন। এ সময় তিনি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এবং নীতিনির্ধারণী মন্ত্রণালয় নামে বিবেচিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘদিন প্রভাবশালী এই মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থেকে চলতি বছরের ২২ মার্চ তাকে অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতি দেয় আওয়ামী লীগ সরকার।
গত ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দুই দফায় ৫৯ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সরকার। কিন্তু এই নিয়োগের পর বিগত আমলে ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে প্রতিবাদ জানালে লক্ষ্মীপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, শরীয়তপুর, দিনাজপুর ও রাজবাড়ী জেলায় ডিসি নিয়োগের আদেশ বাতিল করা হয়েছিল। এ ছাড়া তখন চার জেলায় ডিসি পদে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছিল, পরে তাদের জেলা রদবদল করা হয়েছিল। এর মধ্যে যাকে টাঙ্গাইলে দেয়া হয়েছিল, তাকে পঞ্চগড়; যাকে নীলফামারীতে দেয়া হয়েছিল, তাকে টাঙ্গাইল; যাকে নাটোরে দেয়া হয়েছিল, তাকে লক্ষ্মীপুর এবং যাকে পঞ্চগড়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল, তাকে নীলফামারীতে ডিসি করা হয়েছিল। এর ফলে আটটি জেলায় ডিসির পদ শূন্য ছিল। এখন সেগুলোতে নতুন ডিসি নিয়োগ দেয়া হলো।
এ দিকে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসানের প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল বুধবারও জেলা প্রশাসকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ করেছে সরকারি বালক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর আগে কয়েক দিন ধরে তার প্রত্যাহারের দাবিতে সাধারণ-ছাত্রজনতার ব্যানারে তার প্রত্যাহারের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
ডিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বাগেরহাটে আসার পর প্রথমে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে পরিচিতি সভা করেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহার, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে মারধরের হুমকি, জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে দুর্ব্যবহার, ওএমএস ডিলার হিসেবে আওয়ামী লীগের লোকদের নিয়োগ, ইমাম সমিতির লোকদের সাথে খারাপ আচরণ, দফতরে নয়া দিগন্তসহ বেশ কিছু পত্রিকা বন্ধ, বিভিন্ন অফিসারের রুমে শেখ মুজিবের ছবি ঝুলানোতে উৎসাহিত করেন। এর প্রতিবাদে তারা ঝাড়ু মিছিল, মানববন্ধন, বিভাগীয় কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা