২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১, ২৩ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

১১ মামলা থেকে খালাস পেলেন খালেদা জিয়া

-

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে নেয়া হয় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে। এরপর দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দী ছিলেন তিনি। কারাবন্দী অবস্থায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায়ও তাকে সাজা দেয়া হয়। কারাগারে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে তাকে মুক্তি দেয়। তবে কার্যত খালেদা জিয়া ছিলেন গৃহবন্দী। বারবার বিদেশে সুচিকিৎসার আবেদন করেও উপেক্ষিত হন। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর গত ৬ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেয়। এরপর ওয়ান-ইলেভেনের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দায়ের করা বহু মামলার জট খুলতে থাকে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি মামলা থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা, হরতাল-অবরোধে ৪২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা, মানহানির মামলাসহ ১১টি মামলায় এ পর্যন্ত তিনি আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন। অপরদিকে উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতে এখনো তার বিরুদ্ধে আরো ১৬টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় করা নাইকো, বড়পুকুরিয়া মামলা রয়েছে। আইনজীবীদের দাবি, আদালত ও পুলিশকে ব্যবহার করে বেশ কয়েকটি মামলায় তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গত ১৬ বছরে তার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। যেসব মামলায় সাজাও দেয়া হয়েছে। ওই সব মামলায় উচ্চ আদালতে আপিল শুনানি হবে। এছাড়া যেসব মামলা নিম্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে সেসব মামলাও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানির জন্য দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলা আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হবে এবং তিনি খালাস পাবেন বলে আইনজীবীরা মনে করেন।
গ্যাটকো মামলা : গ্লোবাল অ্যাগ্রোট্রেড প্রাইভেট লিমিটেড (গ্যাটকো) দুর্নীতি মামলা থেকে বেগম খালেদা জিয়াসহ তিনজনকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আবু তাহের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। অব্যাহতিপ্রাপ্ত বাকি দুইজন হলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বাকি ১২ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও থানায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ১৩ জনের নামে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী বাদি হয়ে মামলাটি করেন।
৪২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা খারিজ : বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৪২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে করা মামলা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান পুলিশের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলাটি খারিজ করে দেন। ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী বাদি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুর রহমানের আদালতে মামলাটি করেন।
মানহানির পাঁচ মামলায় খালাস : খালেদা জিয়াকে মানহানির পাঁচ মামলা থেকে খালাস দিয়েছেন আদালত। জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকীর করা মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে মন্তব্যে অভিযোগে চার মামলা এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলামের ‘ভুয়া’ জন্মদিন পালন করার অভিযোগে একটি মামলাসহ মানহানির পাঁচ মামলায় খালাসের এ রায় দেন আদালত। গত ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পৃথক দুই ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাকে এসব মামলায় খালাস দেন।
নাইকো মামলা : বেগম খালেদা জিয়াসহ আটজনের বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রপক্ষের সব সাক্ষীকে ৪ নভেম্বর আদালতে হাজির করাতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার ৯ নম্বর (অস্থায়ী) বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুহম্মদ আলী আহসান এদিন ধার্য করেন।
বড়পুকুরিয়া মামলা : বেগম খালেদা জিয়া ও অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আজ ২৭ অক্টোবর দিন ধার্য রয়েছে। আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার জানান, রোববার এ মামলার অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির জন্য রয়েছে। আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন জানাব।
নাশকতার ১১ মামলা : নাশকতা ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে খালেদা জিয়ার নামে করা ১১ মামলার শুনানির জন্য ৩১ অক্টোবর দিন ধার্য রয়েছে। ১১ মামলার মধ্যে যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র গ্রহণের বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। অন্য ১০ মামলায় অভিযোগ গঠন শুনানির দিন ধার্য ছিল। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে এসব মামলার শুনানির জন্য রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ-জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। এরপর ছয় মাস পরপর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। এ দুই মামলায় সাজা দেয়ায় খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দী হন। তবে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে দ্রুত আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এখন পর্যন্ত ১১টি মামলায় খালাস পেয়েছে। আরো ১৬টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মিথ্যা বানোয়াট এসব মামলা দায়ের করা হয়। রাজনৈতিকভাবে দায়ের করা এসব মামলার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। মূলত পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে মামলা দায়ের করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement