২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১, ২৩ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

বাজেট থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা কাটছাটের পরিকল্পনা

-

- এডিপি কমছে ৫২ হাজার কোটি টাকা
- ব্যাংক ঋণের লাগাম টেনে ধরতে চায় সরকার

চলতি ২০২৪ -২০২৫ অর্থবছরের বাজেট কাটছাঁটের পরিকল্পনা করছে সরকার। চলতি অর্থবছরের জন্য গত জুন মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের পাস করা বাজেটের আকার সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বছরের তিন মাস পার হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার বাজেটের আকার থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা ‘ছেঁটে’ ফেলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ফলে চলতি অর্থবছরের জন্য সংশোধিত বাজেটের আকার হতে পারে সাত লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ৯ ভাগ কম।
গেল ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে এর আকার কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় সাত লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। বাজেটের আকার হ্রাস পায় মূল বাজেটের ৬ শতাংশ, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৪৭ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। অন্য দিকে, একই অর্থবছরে মূল এডিপি ছিল দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। পরে তা কমিয়ে দুই লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়। তবে গেল অর্থবছরে সরকারের আয় না থাকায় বিপুল অঙ্কের ব্যাংক ঋণ নিয়ে বাজেট বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যেমন- মূল বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের টার্গেট ছিল এক লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে এক লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে আমরা বাজেটের আকার ৭০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে আনার একটি প্রক্ষেপণ করেছি। এটি নিয়ে আরও কিছু কাজ আমাদের বাকি রয়েছে। আগামী মাসে অর্থ উপদেষ্টার কাছে সংশোধিত বাজেটের একটি আকার আমরা তুলে ধরবো। তারপর ডিসেম্বর মাসে সংশোধিত বাজেটটি চূড়ান্ত করা হবে। তিনি বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আকারও প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে আনা হবে। বর্তমানে চলতি অর্থবছরে এডিপির আকার নির্ধারিত রয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এটি কমিয়ে দুই লাখ ১০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে প্রায় আট লাখ কোটি টাকার যে বাজেট হাতে নেয়া হয়েছে তা অনেকটা অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যেখানে সরকারের কাক্সিক্ষত মাত্রার আয় নেই, সেখানে কিভাবে এত বিশাল বাজেট বাস্তবায়ন করা যাবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করার জন্য বিশাল অঙ্কের ব্যাংক ঋণ করতে হবে। বিষয়টি তৎকালীন অর্থমন্ত্রী বাজেট উপস্থাপনের সময়ই উল্লেখ করেছেন। চলতি অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু এই পরিমাণ ঋণ নিলে এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রায় ‘ডাবল ডিজিট’ ছুঁই ছুঁই মূল্যস্ফীতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা বলা যায় না। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, চলতি বছর ব্যাংক ঋণ ৮৫ হাজার কোটি টাকার সীমায় টেনে রাখার চেষ্টা করছি আমরা। কারণ এটি না করতে পারলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। সূূত্র জানায়, বাজেট বাস্তবায়নের জন্য অধিক পরিমাণে ব্যাংক থেকে যেন ঋণ নিতে না হয় তার জন্যই বাজেটকে ছোট করা হচ্ছে।
এ দিকে, বাজেট বাস্তবায়নের জন্য সরকার আয়ও করতে পারছে না। অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) গণ-অভ্যুত্থানের ফলে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের ফলে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২৫ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা কম হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা কম।


আরো সংবাদ



premium cement