২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ছাত্রলীগের নির্যাতনের বর্ণনা

‘সুইসাইড নোট লিখিয়ে নিয়ে বলে এবার তোকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেবো’

-

ছাত্রলীগের নেত্রী আমাকে এতটাই নির্যাতন করছিল যে, আমার কাছ থেকে সুইসাইড নোট লিখে নিয়ে বলে, ‘এবার তোকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখব’। ফুলপরী খাতুন বলেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন যদি রাজনৈতিক দলের হাতে জিম্মি না থাকে, তাহলে সকল শিক্ষার্থীর জন্যই নিরাপদ ক্যাম্পাস তৈরি হবে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আর সি মজুমদার আর্টস অডিটোরিয়ামে ‘শিক্ষা অধিকার সংসদ’-এর আয়োজনে ‘ক্যাম্পাসে নির্যাতিত ছাত্রীদের জবানবন্দী ও বৈষম্যহীন শিক্ষাঙ্গন গড়ার দায়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা এমনভাবে দিচ্ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন।
অনুষ্ঠানে সভায় নিজেদের নিপীড়নের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা ও কাজি ফারজানা মিম, ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী জয়মা মুনমুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই বিপ্লবের সংগ্রামী সিনথিয়া মেহরিন সকাল।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা নিবর্তনমূলক ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে ১ বছর জেল খাটেন। কিডনি রোগ থাকা সত্ত্বেও ঢাকার একটি আদালত বারবার খাদিজার জামিন আবেদন নাকচ করে আসছিলেন। অবশেষে কীভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুই মামলা থেকেই অব্যাহতি পান সে গল্প তুলে ধরে তিনি বলেন, বিনা দোষে জেল খাটার পরও আমার পক্ষে বিভাগের থেকে কেউ দাঁড়াতে পারেনি। কিছু কিছু শিক্ষকের পক্ষ থেকে যে আচরণ পেয়েছি, তাতে সবচেয়ে বেদনাহত হয়েছি। ভাইভা বোর্ডে যেভাবে প্রশ্ন করে হেনস্তা করা হয়েছে, সেটি আমাকে সবচেয়ে বেশি ব্যথিত করেছে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই বিপ্লবের সংগ্রামী সিনথিয়া মেহরিন সকাল বলেন, ১৫ জুলাই ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে তাড়া করে আমার মাথায় রড দিয়ে আঘাত করে। আমার কানে বিকট একটা সাউন্ড হওয়ার সাথে সাথে নিচে লুটিয়ে পড়ি; তখন ভেবে নিয়েছিলাম যে মারা গিয়েছি। স্বৈরাচারের পতনে, বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে কিন্তু আমার ভোগান্তি শেষ হয়নি। মাথার আঘাতের ফল প্রতিদিন সহ্য করতে হচ্ছে। নিজের চঞ্চলতা আর ধরে রাখতে পারিনি। কথা বলতে গেলেও থেমে যেতে হয়। বেঁচে আছি এই ঢের বেশি। আমি একটা জীবন্ত শহীদ!
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও ৯ দফার ঘোষক আব্দুল কাদের বলেন, আমাদের নারী সহযোদ্ধারা যেভাবে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল তা আমাদের বিজয় অর্জিত হওয়ার পথকে সুগম করেছে। তারা সকল বাধা ডিঙিয়ে সামনে এসেছিল। এর ফলেই ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছে।
সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষা অধিকার সংসদের আহ্বায়ক ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রফেসরিয়াল ফেলো, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও আন্তর্জাতিক শিক্ষা-গবেষক অধ্যাপক ড. এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ বলেন, শিক্ষা ভেঙে পড়লেও তরুণরা ভেঙে পড়েনি। সেটাই আমাদের আশার পথ। আজকের আলাপ শিক্ষা অধিকার সংসদের ১৪ দফার একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। ভবিষ্যতে অন্য সংখ্যাগুলো নিয়ে কাজ করব। আমরা শিক্ষার সকল অন্তর্ভুক্তিমূলক ও তরুণদের অংশগ্রহণে কাজ করি।
এ ছাড়াও বৈষম্যহীন ক্যাম্পাস গড়ার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রাজ্জাক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মনিনুর রশিদ, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদী।
অন্ষ্ঠুানটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন সংগঠনটির সদস্যসচিব এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিটের সহকারী অধ্যাপক মো: শাহনেওয়াজ খান চন্দন।


আরো সংবাদ



premium cement