২১ অক্টোবর ২০২৪, ৫ কার্তিক ১৪৩০, ১৭ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

সঙ্কটের আবর্তে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

-

১৯তম বর্ষে পদার্পণ করেও সঙ্কট কাটিয়ে একটি যথাযথ পূর্ণাঙ্গ স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হতে ব্যর্থ হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। আবাসন সমস্যা, ক্যান্টিনের সঙ্কট, খেলার মাঠ না থাকা, ক্লাস রুমের বসার স্থানের সঙ্কট, একটি মাত্র অডিটোরিয়ামের জীর্ণদশা, লাইব্রেরির সমস্যাসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। কেরানীগঞ্জে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস তৈরির ঘোষণা সমস্যা থেকে উত্তরণে আশার আলো জাগালেও দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজের কোনো অগ্রগতি এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়নি।

২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর পুরান ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে জগন্নাথ কলেজ থেকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সাতটি অনুষদ, দুইটি ইনস্টিটিউট, ৩৮টি বিভাগ, ৯৬০ জন শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ, ৮৫০ জন প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ এবং ১৯০৬৬ জন শিক্ষার্থীর বিশাল পরিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

আবাসনের সমস্যাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং বিষয়। শুধু মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি হল রয়েছে। প্রতি রুমে দুইজনের জন্য ব্যবস্থা থাকলেও চারজন করে থাকার পরেও ১২০০ জন শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা আছে হলটিতে। বাকি বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরা মেসে থেকে ক্লাস, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। মেসের খরচ চালাতে করতে হয় একাধিক টিউশন। পুরান ঢাকায় টিউশনের সঙ্কট প্রকট এবং প্রায় ৮০% টিউশনের বেতন ২০০০-৩০০০ টাকা হওয়ায় চরম বিপাকে পড়তে হয় প্রথম বর্ষ এবং দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের। অনেকেই আর্থিক সমস্যার কারণে খাপ খাওয়াতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়াশোনা থেকে দূরে যায়। আবসন সমস্যা ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যায় শিক্ষার্থীদের রেজাল্টের ওপর।

জবির প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে ৬০ সিট বিশিষ্ট একটি ক্যাফেটেরিয়া। সকালের খাবার শেষ হয়ে যায় সাড়ে ১০ টার আগে (মুরগির তেহেরি বাদে), দুপুরের খাবার পাওয়া যায় ১২টা থেকে বিকেল ৩:৩০টা পর্যন্ত। চাহিদা অনুযায়ী খাবার তৈরি না হওয়ায় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার সংগ্রহ করতে হয়। সিট না থাকায় অনেকে খাবার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। দেরি হওয়ায় অনেকেই সময়মতো ক্লাসে উপস্থিত হতে পারেন না।

চিত্তবিনোদন এবং শরীর চর্চার জন্য খেলার মাঠ অত্যাবশ্যকীয় হলেও জবির নেই কোনো খেলার মাঠ। সাম্প্রতিক ধুপখোলা মাঠকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্থায়ী বরাদ্দ দেয়ার আলোচনা হলেও এখনো পর্যন্ত ঢাকা জেলা প্রশাসন কর্তৃক স্থায়ী বরাদ্দের ঘোষণা দেয়া হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র অডিটোরিয়াম জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দেয়ালে ফাটল, লাইটের সমস্যা, অনেক চেয়ার ভাঙা, কয়েকটা এসি লাগানো থাকলেও একটিও সচল নেই।

জবি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে নেই কোনো অত্যাধুনিক ব্যবস্থা, বইগুলোর সরাসরি এক্সেস পাওয়া যায় না, রয়েছে পর্যাপ্ত বইয়ের সঙ্কট। এ ছাড়াও অনেক বিভাগের ক্লাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত আসন নেই। এক বেঞ্চে চার-পাঁচজন বসার পরেও আসন পাওয়া যায় না। মেডিক্যাল সেন্টারে ল্যাব নেই, জবিতে নেই কোনো জিমনেশিয়াম। ২০১৮ সালে আশার আলোর স্বপ্ন দেখিয়ে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ শুরু হলেও এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি। ২০০ একর জমির ১৮৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে, ভরাটের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি, এমনকি সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয়নি।

নানাবিধ সমস্যা থাকার পরেও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জবি শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা, পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থেকে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে জবিকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন।

এ বিষয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সোহাগ আহমেদ বলেন, প্রতিষ্ঠার ১৯তম বছরে এসেও জবি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে প্রাপ্ত সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আশা করি নতুন প্রশাসনের মাধ্যমে আমাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ অতিদ্রুত দৃশ্যমান হবে এবং জবির এ সব সঙ্কট কেটে যাবে।

১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমার একটাই বার্তা সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে অক্ষুণœ রেখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি উন্নতমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দান করা। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে হলগুলো স্থাপন করে শিক্ষার্থীদের আবাসন সঙ্কট অতিদ্রুত সমাধান করা, গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, সেন্ট্রাল অব এক্সিলেন্স প্রতিষ্ঠা করাই হলো আমাদের মূল লক্ষ্য। একই সাথে শিক্ষার্থীরা যেন গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করতে পারে সেটিও খুব দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement