২০ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩০, ১৬ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
প্রধান উপদেষ্টার সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ

আ’লীগ ১৪ দল জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যমুনায় গণফেরাম নেতাদের সাথে সংলাপে অংশ নেন : পিআইডি -


অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সংলাপে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময়ে জাতীয় নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে নেতারা বলেছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে যত দ্রুত সম্ভব একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় জনগণ। প্রধান প্রধান সংস্কারগুলো জনগণের নির্বাচিত সরকার করবে। এজন্য দ্রুততম সময়ে একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়েছেন তারা। পাশাপাশি দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বাজার সিন্ডিকেট ও নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংলাপে জোর দেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। গণতন্ত্র ও গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল এবং সহযোগী হিসেবে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে সংলাপে।

গতকাল শনিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সাথে সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা এসব অভিমত ব্যক্ত করেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে তৃতীয় দফায় এ সংলাপ করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিকেল ৩টায় প্রথমে গণফোরামের সাথে শুরু হয় এ দিনের সংলাপ। রাতে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির সাথে আলোচনার মধ্য দিয়ে সংলাপ শেষ হয়। এদিন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি- এলডিপি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, জাতীয় গণফ্রন্ট, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন- এনডিএম, বাংলাদেশে লেবার পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ (একাংশ) শীর্ষ নেতাদের সাথেও পৃথক পৃথক সংলাপ করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে নিজ নিজ দলের পক্ষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন দলগুলোর শীর্ষ নেতারা।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেন। সংলাপে সংবিধান, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ড. কামাল হোসেন কথা বলেছেন বলে জানান দলটির সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসীন মন্টু। তিনি বলেন, সংলাপে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে জোর দিয়েছি। সিন্ডিকেটকে অবশ্যই ভাঙতে হবে। পতিত স্বৈরাচার ও তাদের বিদেশী এজেন্টরা বাংলাদেশটাকে ধ্বংস করার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে, তাদের থেকে উদ্ধারের জন্য আমাদের সবাইকে জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
সংলাপে নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে মোস্তফা মহসীন বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন কমিশন করতে হবে। এটার জন্য সার্চ কমিটি বা কিছু করার প্রয়োজন আছে, ভালো লোক নিয়োগ দেয়ার দরকার আছে। যাতে অতীতের মতো কোনো সমস্যা না হয়। সংলাপে গণফোরামের পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন, দলটির কো-চেয়ারম্যান এস এম আলতাফ হোসেন, সুব্রত চৌধুরী, সদস্যসচিব মিজানুর রহমান, সদস্য এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক, মহিউদ্দিন আবদুল কাদের, মোশতাক আহমেদ ও সুরাইয়া বেগম।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার সাথে সংলাপকালে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব:) অলি আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমরা পুরো জাতি জুলাই-আগস্টে একটা যুদ্ধের মধ্যে গেলাম। এই যুদ্ধটা করা হলো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা কেন হলো? কারণ তারা অন্যায়ভাবে পুলিশকে ব্যবহার করেছে। প্রশাসনকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করেছে। জনগণের সাথে মুখোমুখি করেছে। দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে, দেশ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে।’
নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে অলি আহমদ বলেন, ‘ঘরটা আগে বানাই, পরে চিন্তা করব কোন রুমে থাকব। এখন মাত্র ইট ঢালাই শুরু হয়েছে।’ এলডিপি এই নেতা আরো বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে আমাদের বহু ছেলেমেয়ে হতাহত হয়েছে। দেড় হাজারের ওপরে ছেলেমেয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। অনেকে বলে আরো বেশি হবে যার কোনো হিসাব নাই। অনেক লাশ পুড়িয়ে ফেলছে। ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ বিভিন্ন ভাবে আহত হয়েছে।’

১৯৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে অলি আহমদ বলেন, ‘জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। সেদিন আমরা তাদের নিষিদ্ধ করেছিলাম। আজকে কী কারণে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে না। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। কারণ, আওয়ামী লীগ ১৮ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।’ সংলাপে অলি আহমদের নেতৃত্বে এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল আলম তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। নিষিদ্ধ করা হচ্ছে নাকি নিষিদ্ধ করা হবে সেটা মুখ্য না। একটা ব্যবস্থা নিতে হবে। আওয়ামী লীগ নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ হবে নাকি হাইকোর্ট থেকে কোনো আদেশের মাধ্যমে হবে সেটি পরের ব্যাপার কিন্তু সেই প্রক্রিয়াটা আরম্ভ হওয়া উচিত। পার্থ বলেন, আমি বলেছি আপনারা এমন কোনো সংস্কার হাতে নেবেন না যেটা গণতান্ত্রিক সরকারের নেয়া উচিত। আপনাদের সংস্কারগুলো নির্বাচনমুখী সংস্কার হলে ভালো হবে। বাকি প্রস্তাব থাকতেই পারে, যেগুলো হয়তো পরবর্তী সরকার করবে।

১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেছেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের যেসব প্রেতাত্মা এখনো প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে আছে তাদের আমরা অপসারণ করতে বলেছি। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় ঢাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে ট্রাকের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছি। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য যা করা প্রয়োজন তিনি সেই পদক্ষেপ নেবেন। সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবে গঠিত সরকারকে এখন বিপ্লবী আচরণ করতে হবে, ফ্যাসিজমের মূল উৎপাটন করতে হবে। যেসব দল ফ্যাসিজমকে সহযোগিতা করেছে তাদেরও আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। সংলাপে ১২ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে ১৪ দফা লিখিত প্রস্তাবনা দেয়া হয়।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, সংস্কার সংস্কারের মতো করে চলবে। সরকারকে এর মধ্যে একটা নির্বাচনী রোডম্যাপ দিতে বলেছি। সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করার দাবি জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, আমরা বলেছি যত সংস্কার করুক না কেন, সবার আগে সংস্কার করতে হবে উপদেষ্টা পরিষদের। এ পরিষদের হাতেগোনা কয়েকজনের সফলতা ছাড়া বাকি সবাই ব্যর্থ। তাই ব্যর্থদের দ্রুত অপসারণ করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার সাথে সংলাপে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)। দলটির চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, সংলাপে সংস্কারসহ একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি ২০২৫ সালের জুনের পরে সহজেই নির্বাচন দেয়া সম্ভব। এবং ওনাদের সেভাবে চেষ্টা করা প্রয়োজন। ওনারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছে আমাদের নিয়মিত আলোচনায় থাকবেন।

এর আগে গত ৫ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতসহ পাঁচটি দল ও তিনটি জোটের সাথে সংলাপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
সংলাপ শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, সংলাপে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলসহ জাতীয় পার্টিকেও নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল নিষিদ্ধ বা শরিক অনেকগুলো দল আছে যেমন- জাতীয় পার্টিকে (সংলাপ) ডাকছি না এখন। তারা (জাপা) কিন্তু নীরব সমর্থন দিয়ে গেছে এবং অবৈধ নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ করেছে। তাদের বিষয়ে সরকার পর্যালোচনা করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আরো আলোচনা পর্যালোচনার ভিত্তিতে ডিসিশন (সিদ্ধান্ত) হবে, সরকার একা সিদ্ধান্ত নেবে না। সবগুলো রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডারদের সাথে কথা বলে সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু তারা (জাতীয় পার্টি) যে, ফ্যাসিবাদের দোসর ছিল এবং গণহত্যার প্রতি সম্মতি এবং মাঠে অবস্থান ব্যক্ত করেছে, সরাসরি জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এটা সম্পর্কে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে বলে দিয়েছে। তাদের পক্ষ থেকেও একই ধরনের অভিমত ব্যক্ত হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
আ’লীগ ১৪ দল জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি পুলিশের মূর্তিমান আতঙ্ক ধনঞ্জয়ের খোঁজ মিলছে না বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার বাইরে এখনো ৪৫০ কোটি মানুষ ৭ মার্চ ও ১৫ আগস্ট জাতীয় দিবস বাতিলের মিছিলে পিটুনি যুদ্ধ বন্ধ ও সেনা প্রত্যাহার ছাড়া কোনো বন্দিমুক্তি নয় : হামাস ২৯৭ কোটি টাকার কাজ পাচ্ছে গত সরকারের আস্থাভাজন প্রতিষ্ঠান! তহবিল ব্যবস্থাপনায় কাহিল পুনর্গঠিত ব্যাংকের কর্মকর্তারা বিএসএমএমইউতে কম টাকায় কিডনি প্রতিস্থাপন বন্ধ শিগগিরই শুরুর আশ্বাস হত্যা মামলায় কামাল আহমেদ মজুমদার ৩ দিনের রিমান্ডে জান্তা পতনে মিয়ানমারে মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিষ্টান এক সাথে লড়ছে ইলেকশন কমিশন গঠনে দ্রুতই সার্চ কমিটি হবে : মাহফুজ

সকল