১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

৪৩ বিসিএসের নিয়োগ ও পরের ৩টির প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি বিএনপির

৪৩ বিসিএসের নিয়োগ ও পরের ৩টির প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি বিএনপির -

সুপারিশকৃত ৪৩তম বিসিএসের নিয়োগ প্রজ্ঞাপন বাতিল এবং ৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষার সব প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের দোসর হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এবং ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর সম্প্রতি পদত্যাগকারী দলকানা পাবলিক সার্ভিস কমিশন কর্তৃক সম্পূর্ণ দলীয় বিবেচনায় বিসিএস ৪৩তম ব্যাচের সুপারিশকৃত ২০৬৪ জন প্রার্থীকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। ব্যাপকভিত্তিক যাচাই-বাছাই না করে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানে অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্ত ও নিয়োগ প্রক্রিয়া দেশের মানুষকে চরমভাবে হতভম্ব ও হতাশ করেছে এবং জনমনে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
‘দেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের পক্ষ থেকে যেখানে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার জোর দাবি জানানো হচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে ৪৩তম বিসিএসের ঢালাও নিয়োগদানের মাধ্যমে সেই সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যদের সরকারি প্রশাসনের উচ্চতর পদসমূহে পুনর্বাসন করার এই অন্তর্ঘাতমূলক সিদ্ধান্ত জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার পরিপন্থী এবং কিছুতেই গ্রহণযোগ্য না।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দেশের হাজার হাজার যোগ্য ও মেধাবী প্রার্থীদের বঞ্চিত করে দলীয় ভিত্তিতে বিবেচিত ও সুপারিশকৃত ৪৩তম বিসিএস বাতিল করার জন্য আমরা দেশ ও জাতির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। একই প্রেক্ষাপটে ২৭তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল বাতিল করা এবং পুনরায়
মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করার নজির রয়েছে বলে জানান বিএনপির এই নেতা। ‘চাকরি প্রার্থীসহ সর্বমহল থেকে পিএসসি সংস্কারের দাবি উঠেছে। এই দাবির সাথে সঙ্গতি রেখে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমাও বৃদ্ধি করা হচ্ছে বলে জানা যায়। আমরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এর ফলে বঞ্চিত মেধাবীদের অন্তত একটি অংশ হলেও বিভিন্ন চাকরিতে নতুন করে আবেদনের সুযোগ পাবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ৪৪তম বিসিএসের যে ৯০০০ জনকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়েছিল- তার মধ্যে ৩০০০ জনের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ৪৫তম বিসিএসের লিখিত উত্তরপত্রের মূল্যায়ন প্রায় শেষ পর্যায়ে। অপর দিকে ৪৬ বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে তিন মাস আগে। আমরা দাবি করছি রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে প্রবেশে ফ্যাসিবাদি আওয়ামী গোষ্ঠীর এবং সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনীকে নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে এই তিনটি বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়াসমূহ পুরোপুরি বাতিল করা হোক। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে হলে ফ্যাসিবাদের দোসরদের যে কোনো মূল্যে
রুখে দিতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে এ বিষয়ে আপস করার বিন্দুমাত্র কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে বিদায় নেয়ার আগে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদে মোট ৮০৩ জনকে নিয়োগ প্রদান করে। আমরা জানতে পেড়েছি এর মধ্যে ২০০ জনের বাড়িই গোপালগঞ্জ এবং ৪০৩ জনই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনকারীদের হত্যাকারী সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্য। শুধু তাই নয়, এই নিয়োগে সাধারণ ধর্মীয় সংখ্যা-সাম্যতাও চরমভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। শোনা যায়, সারদায় প্রশিক্ষণরত এই দলীয় সাব-ইন্সপেক্টরদের পাসিং আউট হবে আগামী ৩১ অক্টোবর, ২০২৪। যদি এ নিয়োগ বন্ধ করা না হয় তবে এদের মধ্য থেকেই তৈরি হবে ওসি প্রদীপ, ফরমান, মাজহার, মহসিনের মতো ফ্যাসিবাদের আরো বহু দোসর।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সুদূরপ্রসারী নীল নকসার আওতায় আওয়ামী লীগ সরকার সর্বশেষ যে ৬৭ জন এএসপি নিয়োগ প্রদান করেছিল, তারাও সবাই ছাত্রলীগের ক্যাডার। তাদের পাসিং আউট হবে সম্ভবত আগামী ২০ অক্টোবর। এদেরকে এখনই থামিয়ে না দিলে এরাই হবে আগামী দিনের বেনজীর, আসাদ, হাবিব, হারুণ, বিপ্লব, মনিরুল, প্রলয় কুমার বা কৃষ্ণপদ। এদের নিয়োগ দিলে এরাই পতিত ফ্যাসিবাদকে পুনরুত্থানের পথ দেখাবে। আমাদের দাবি, দেশের গুরুত্বপূর্ণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কলঙ্কমুক্ত রাখতে এবং পুনরায় ফ্যাসিবাদের উত্থানরোধকল্পে অবিলম্বে এ সব সাব-ইন্সপেক্টর ও এএসপিদের নিয়োগ বাতিল করা হোক।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সরকারি, আধা-সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীসহ প্রথম শ্রেণীর বিভিন্ন নন-ক্যাডার পদে নতুন চাকরি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, আমরা মনে করি এসব পদে যারা ইতোমধ্যে আবেদন করেছেন- তাদের পাশাপাশি আবেদনের সময়সীমা বাড়িয়ে নতুন করে আবেদনের সুযোগ দেয়া হোক। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধি করার কারণে এ সুযোগ চাকরি প্রার্থীদের প্রতিযোগিতাকে আরো উন্মুক্ত করবে এবং যোগ্য ও মেধাবীদের নিয়োগের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। এতে সরকার যোগ্য ও মেধাবীদের সেবা পাবে, দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।


আরো সংবাদ



premium cement