১৬ অক্টোবর ২০২৪, ৩১ আশ্বিন ১৪৩০, ১২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
২২ দিন ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা

বাংলাদেশ সীমায় ভারতীয় ট্রলার ক্ষুব্ধ জেলেরা

-

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় শুরু হয়েছে ২২ দিনের মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা। যদিও এ নিষেধাজ্ঞা শুরুর দুই দিন আগে সাগরে জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করছিল। এ অবস্থায় নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ায় সরকারি আইন মানতে সাগর থেকে ফিরে আসতে হয়েছে জেলেদের। কিন্তু তারা যখন ফিরে আসছিল তখন ভারতীয় ট্রলারগুলোকে বাংলাদেশের সীমায় ঢুকে মাছ শিকার করতে দেখা গেছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটায় ফিরে আসা জেলেরা। এ কারণে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশী সীমানায় নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে নোঙর করা রয়েছে শতাধিক ট্রলার। বরগুনাসহ উপকূলীয় বাগেরহাট, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন পাথরঘাটা বিএফডিসি ঘাটে। অবরোধ শেষে এখান থেকেই ট্রলারগুলো সাগরে মাছ শিকারে পাঠাবেন মালিক ও আড়তদাররা।
জানা গেছে, গত ১২ অক্টোবর দিনগত রাত ১২টা থেকে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়; যা চলবে আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এ সময়ে সাগর ও নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকার, মজুদ ও পরিবহন দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। আইন অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ইলিশ মাছ আহরণ ও বিক্রি করলে জড়িত ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। সাগর ফেরত জেলেদের অভিযোগ, প্রতি বছর ৬৫ দিন ও ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা সাগর থেকে ফিরে আসেন। এ সুযোগে ভারতের জেলেরা বাংলাদেশের পানিসীমার প্রায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে ঢুকে মাছ শিকার করে নিয়ে যায়। এর প্রতিবাদ করলেই হ্যাঁ মাইক দিয়ে সরে যেতে বলে। তাদের কথা না শুনলে বাংলাদেশী জেলেদের ওপর ইট-পাথর নিক্ষেপ করে। ট্রলার ও প্রযুক্তি শক্তিশালী হওয়ায় মুহূর্তের মধ্যেই তারা কাছাকাছি থাকা জেলেদের সাথে নিয়ে হামলা করে।

সাগর ফেরত আনিচুর রহমান, ছগির হোসেন, আবদুল্লাহসহ একাধিক জেলে জানান, ভারতীয় জেলেদের ট্রলারের ইঞ্জিন অনেক শক্তিশালী। তারা বাংলাদেশ সীমার ফেয়ারওয়ে বয়া, ডিমের চর, সোনার চর, চালনার বয়া, কবরখালী, মাইজদীর বয়াসহ সাগরে ইলিশ বিচরণের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এসে জাল ফেলে মাছ শিকার করে নিয়ে যায়। ভারতের ট্রলারের জেলেদের কিছু বললেই ওয়ারলেসের মাধ্যমে আশপাশে থাকা ভারতের একাধিক ট্রলার এসে হামলা করে। আমাদের জালের মাছ ধরে নিয়ে জাল কেটে দিয়ে যায়। আমাদের ট্রলার তাদের ট্রলারের সাথে বেঁধে নিজেদের জলসীমায় নিয়ে ভারতের পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখায়। এতে জেলেদের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। আমাদের সাগরে আমরা মাছ শিকারে গিয়ে ভারতের জেলেদের জন্য অসহায় অবস্থায় থাকতে হয়। এ বিষয়ে একাধিকবার ট্রলার মালিক সমিতির কাছে অভিযোগ দেয়ার পরও কোনো কাজ হয়নি। এগুলো ভারতীয় জেলেদের একটা নিয়ম হয়ে গেছে। তারা আরো জানান, দুর্গাপূজার জন্য ভারতে বাংলাদেশী ইলিশের অনেক চাহিদা। কিছু দিন আগে বাংলাদেশ সীমানার দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন ও কুয়াকাটার কাছাকাছি এসে ইলিশ শিকার করেছে ভারতীয় জেলেরা। এক দিকে ছিল দুর্গাপূজা, অন্য দিকে চলছে বাংলাদেশে ২২ দিনের ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা সেই সুযোগ ভারতের জেলেরা নিয়েছে। এর একটা সমাধান হওয়া উচিত।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের সীমার মধ্যে ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশের বিষয়টি নতুন নয়। বাংলাদেশ সীমায় মাছ শিকারে ৬৫ দিন এবং ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলার সময় ভারতে নিষেধাজ্ঞা থাকে না। ওই সময় বাংলাদেশের জেলেরা সরকারি আইন মেনে সাগরে মাছ শিকার থেকে বিরত থাকেন। ভারতীয় জেলেরা সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের সীমায় ঢুকে মাছ শিকার করে নিয়ে যায়। প্রতি বছরই ইলিশের মৌসুমে এ কাজ করে ভারতীয় জেলেরা। আমাদের জেলেরা প্রায়ই অভিযোগ করেন ভারতীয় জেলেরা তাদের ওপর হামলা করে মাছ-জাল ছিনিয়ে নেয় এবং শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে চলে যায়। বাংলাদেশের যেসব জায়গায় বেশি পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যায় সেই জায়গাগুলো ভারতীয় জেলেরা দখল করে নেয়। বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রতি অনুরোধ তিনি যেন জেলেদের এই দুর্দশার সময়ে সাগরে নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ডের তৎপরতা বাড়াতে ব্যবস্থা নেন।
কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো: হারুন-অর-রশিদ মুঠোফোনে সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ ঘটনা ঘটে। তবে সামনের দিনগুলোতে টহল আরো বাড়িয়ে ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করব। এরকম অভিযোগ আমরা আর নিতে চাই না। এ জন্য গভীর সাগরে জাহাজের পাশাপাশি স্পেশাল টহলের জন্য ইতোমধ্যে অতিরিক্ত শক্তিশালী ট্রলার ও স্পিড বোট তৈরি আছে এবং অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল