১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১, ৭ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

ব্যাটিং ব্যর্থতায় সেমির স্বপ্ন ভঙ্গ টাইগ্রেসদের

স্ট্যাম্পআউট হয়ে গেলেন বাংলাদেশ ওপেনার সাথী রানী : বিসিবি -

দুই দলের পয়েন্ট সমান। দুই ম্যাচে এক হার এক জয়। নারী টি-২০ বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচ জিতলে এগিয়ে যাওয়া। হারলে স্বপ্ন ভঙ্গ। এক অর্থে ম্যাচের সমীকরণ ডু অর ডাই। শারজাহতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এমন হিসাবের ম্যাচে টসে জিতে বোলিং নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্যাপ্টেন ম্যাথিউস। অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি জানিয়েছেন, টস জিতলে তিনি অবশ্য ব্যাটিং করার সিদ্ধান্তই নিতেন। স্পিন সহায়ক উইকেটে এই ম্যাচেও বাংলাদেশ বোলিং বিভাগ সাজিয়েছে স্পিনারদের নিয়েই। একাদশে কোনো বদল নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে চেনেড নেশনের পরিবর্তে একাদশে এসেছেন ম্যান্ডি মানগ্রু। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ১০৩ রানই করতে পারে বাংলাদেশ। নিগার সর্বোচ্চ ৩৯ রান করেন। জবাবে খেলতে নেমে ক্যারিবিয় ব্যাটারদের বিপক্ষে স্পিন-পেস কোনো কিছুই কাজে আসেনি। বোলাররা যথাসাধ্য চেষ্টা করে মাত্র দু’টি উইকেট নিতে পেরেছে। ১২.৫ ওভারেই ২ উইকেট হারিয়ে ১০৪ রান করে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাতে সেমিতে ওঠার স্বপ্নভঙ্গ টাইগ্রেসদের। আগামীকাল সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ ম্যাচ খেলবে জ্যোতিবাহিনী।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পেছনের রেকর্ড মোটেও ভালো ছিল না। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে তিনবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের মোকাবেলা করে কোনোবারই জিততে পারেনি। এমনকি লড়াইটাও করতে পারেনি। আগের তিন ম্যাচে হার ৩৬, ৪৯ ও ৬০ রানে। তিন ম্যাচেই বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে একশ’র নিচে। এবার চতুর্থ দেখায় ১০৩ করলেও হার ৮ উইকেটে।

নিগার বাহিনীর শুরুতে সাথী রানীর (৯) উইকেট হারালেও দিলার আক্তার ও সোবহানা মোস্তারির সতর্ক ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যেতে থাকে। দলীয় ৩৩ রানে দিলারা ব্যক্তিগত ১৯ রানে রামহারাকের বলে বোল্ড হলে একটু পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ষষ্ঠ ওভারে ক্রিজে এসে নিগার প্রভাব ফেলতে দেননি ক্যারিবিয় বোলারদের। সোবহানা মোস্তারিকে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। ১৩তম ওভারে মোস্তারি ১৬ রানে যখন ফিরেন তখন দলীয় রান ৭৩।

তাজ নেহারকে নিয়ে জুটি গড়ার আশা থাকলেও হতাশ করে এই বিশ্বকাপে অভিষেক হওয়া তাজ। ৫ বলে এক রান করে ফিরতে হয় তাকে। তিনটি ম্যাচ খেলে ফেললেও দুই অঙ্কে যেতে পারেননি তিনি। স্বর্ণাও করলেন হতাশ। ফিরলেন শূন্যতে। নিগার জুটি গড়ার জন্য যেন কাউকে পাচ্ছেন না। দলীয় ১০০ রানে নিগার ফিরলে আশা সেখানেই শেষ। ৪৪ বলে ৪ চারে ৩৯ রান করেন তিনি। এরপর ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১০৩ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। কারিশমা ১৭ রান খরচায় ৪ উইকেট নেন। দু’টি উইকেট নেন ফ্লেচার, একটি ম্যাথিউসের।

জবাবে বাংলাদেশের কোন বোলারকে পাত্তা না দিয়ে ম্যাথিউসের ৩৪, স্টেফানির ২৭ (রিটায়ার্ড হার্ট), ক্যাম্পবেলের ২১, ডট্টিনের ১৯* ও চিনেলি হেনরির ২* রানের সুবাদে ১২.৫ ওভারেই ২ উইকেট হারিয়ে ৮ উইকেটের জয় তুলে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। একটি করে উইকেট নেন মারুফ ও নাহিদা।

নিগার জানিয়েছিলেন ব্যাটিংয়ে উন্নতি করতে হবে। এই লক্ষ্য পূরণ হলে বেঁচে থাকবে তাদের সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্নও। দলের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা, প্রধানতম সমস্যা, মূল ঘাটতি কিংবা যেটাই বলা হোক, সবকিছুর উত্তরই একই। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় রোগ বলা যায় ব্যাটিংকেই। ভারতে ব্যাটিংয়ে ধুঁকছে ছেলেদের দল। হাতে গোনা কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া টি-২০র ব্যাটিংয়ের ভাষা এখনো বুঝতেই পারছে না তারা। একই রোগে ম্রিয়মাণ মেয়েদের দলেরও। ব্যাটিংয়ের এই ঘাটতি নিগারদের সামনে এগোতে দিচ্ছে না অনেক দিন ধরেই। চলতি বিশ্বকাপেও সেই চিত্র যথারীতি দেখা যাচ্ছে। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটারদের ব্যর্থতার পর বোলারদের দারুণ পারফরম্যান্সে বিশ্বকাপে ১০ বছরের খরা কাটানো জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে বড় স্কোর গড়তে দেয়নি বোলাররা। কিন্তু ব্যাটিংয়ের আরেকটি ব্যর্থতায় হারতে হয় সেই ম্যাচ। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে সবাই ব্যর্থ হয়েছে। গতকাল ৮ উইকেটে হারল ক্যারিবিয়দের বিপক্ষে।

বাংলাদেশের এই ভঙ্গুর ব্যাটিং লাইন আপে একমাত্র ভরসার নাম বলতে গেলে নিগার নিজেই। যদিও এবার বিশ্বকাপের দুই ম্যাচে তার ব্যাটও হাসেনি প্রত্যাশামতো। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে করেছেন তিনি ১৮, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫। তবে গতকাল করলেন ৩৯।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ ইনিংস : ১০৩/৮ (ডালিয়া আক্তার ১৯, সাথী রানী ৯, সোবহানা মোস্তারি ১৬, নিগার সুলতানা ৩৯, তাজ নেহার ১, স্বর্ণা আক্তার ০, রিতুমনি ১০, ফাহিমা খাতুন ২, রাবেয়া খান ১*, নাহিদা আক্তার ২*, কারিশমা ৪/১৭, আফি ফ্লেচার ২/২৫, ম্যাথিউস ১/১৯)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস : ১০৪/২ (ম্যাথিউস ৩৪, স্টাফেনি টেলর ২৭ রি.হার্ট, শেমাইন ক্যাম্পবেল ২১, দিন্দ্রা ডট্টিন ১৯*, চিনেল হেনরি ২*, অতিরিক্ত ১)।

ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচ সেরা : কারিশমা (ক্যারিবিয় বোলার)।


আরো সংবাদ



premium cement