০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১,
`

ইরানের পরমাণু স্থাপনায় ইসরাইলি হামলার বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র

-

- ইরানের হামলায় ইসরাইলি বিমানঘাঁটির ক্ষয়ক্ষতির চিত্র প্রকাশ
- হিজবুল্লাহর হামলায় ৮ ইসরাইলি সেনা নিহত
- বৈরুতের কেন্দ্রস্থলে স্বাস্থ্য সংস্থায় হামলা, ২৪ ঘণ্টায় নিহত ৪৬

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরাইলের প্রতিশোধমূলক হামলা সমর্থন করেন না যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর বদলে ইহুদি রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য একটি বিস্তৃত আন্তর্জাতিক ঐকমত্য গড়ে তোলার পক্ষে তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য নির্ধারিত বিমান এয়ার ফোর্স ওয়ানে ওঠার আগে বুধবার সাংবাদিকদের বাইডেন বলেন, “ইসরাইলিরা কী করতে যাচ্ছে তা নিয়ে আমরা তাদের সাথে আলোচনা করব। আমাদের সাতজনের (জি৭) সবাই একমত যে তাদের প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকার আছে; কিন্তু তাদের সমানুপাতিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত।” রয়টার্স, আলজাজিরা, সিএনএন ও সানা।
বাইডেন বলেছেন, তিনি শিগগিরই ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সাথে কথা বলবেন। কিন্তু কবে কথা বলবেন, সে বিষয়ে তিনি কোনো কিছু বলেননি বলে জানিয়েছে জেরুসালেম পোস্ট। বাইডেন জোর দিয়ে বলেন, ‘ইরান বড় ভুল করেছে। ইরানের ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।’ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় ইসরাইলের হামলায় সমর্থন দেবেন কি না, এমন প্রশ্নে বাইডেন বলেন, ‘না।’ এর আগে বাইডেন জি৭ দেশগুলোর (যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান ও ব্রিটেন) সরকার প্রধানদের সাথে ইসরাইল-ইরান সঙ্কট ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে আঞ্চলিক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে তা নিয়ে কথা বলেন। এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জন পিয়ার বলেন, ‘তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের অগ্রহণযোগ্য আক্রমণ নিয়ে আলোচনা করেছেন।’ তিনি জানান, ইরানের বিরুদ্ধে আরো নিষেধাজ্ঞা জারিসহ সমন্বিত প্রতিক্রিয়া জানানো দরকার বলে জি৭ নেতারা মনে করছেন। পিয়ার বলেন, ‘বাইডেন ইসরাইল ও এর জনগণের প্রতি পূর্ণ সংহতি ও সমর্থন জানিয়েছেন। ইসরাইলের নিরাপত্তার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতির বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন,’ ।
ইরানের হামলায় ইসরাইলি বিমানঘাঁটির ক্ষয়ক্ষতির চিত্র প্রকাশ : ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত নেভাতিম বিমানঘাঁটির ক্ষয়ক্ষতির স্যাটেলাইট চিত্র প্রকাশ করেছে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)। গত মঙ্গলবার রাতের এ হামলা ইরানের ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-২’ এর অংশ হিসেবে চালানো হয়। যা ইসরাইলের ওপর চালানো সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে বড় ধরনের আক্রমণ। হামলার পর স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, নেভাতিম ঘাঁটির মূল রানওয়ের পাশে সারিবদ্ধ ভবনগুলোর একটির ছাদে বড় আকারের গর্ত সৃষ্টি হয়েছে এবং চারপাশে ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। নেভাতিম বিমান ঘাঁটিটি ইসরাইলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সামরিক ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সেখানে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, গুপ্তচরবৃত্তির জন্য ব্যবহৃত এয়ারবোর্ন ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম (অঊড্ঈ) বিমান এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম রাখা ছিল। নেভাতিম ঘাঁটিতে ইসরাইলের কৌশলগত এয়ার কমান্ডের সদর দফতরও রয়েছে। এটি ইসরাইলি বিমানবাহিনীর অন্যতম প্রধান ঘাঁটি। এ ছাড়া ইসরাইলি প্রেসিডেন্টের ‘উইং অব জায়ন’ বিমানও এই ঘাঁটিতে অবস্থান করে।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড কর্পস জানিয়েছে, তারা এই হামলায় যে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ব্যবহার করেছে, তার ৯০ শতাংশই নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। ইরান জানিয়েছে, এই হামলাটি ছিল ইসরাইলি আক্রমণের প্রতিশোধ এবং এটি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ীই বৈধ প্রতিরক্ষা অধিকার হিসেবে পরিচালিত হয়েছে।
এ দিকে ইসরাইলি নেভাতিম ঘাঁটি ছাড়াও হাটসারিম ঘাঁটি এবং তেল নফ ঘাঁটিতেও ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে বলে নিশ্চিত করেছে সিএনএন। এসব ঘাঁটিতে মূলত এফ-১৫ যুদ্ধবিমান রাখা ছিল। এ ছাড়াও মঙ্গলবার রাতে রাজধানী তেলআবিবে অবস্থিত মোসাদের সদর দফতরের কাছেও দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে বলে ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে। ইরানে এসব মিসাইল হামলায় ইসরাইলের সামরিক স্থাপনাগুলোতে গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইরান দাবি করেছে, তারা তাদের মহান ভাই হিজবুল্লাহর নেতা ও মহাসচিব হাসান নাসরুল্লাহ এবং হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবেই এ হামলা চালিয়েছে।
বৈরুতের কেন্দ্রস্থলে হামলা, ২৪ ঘণ্টায় নিহত ৪৬ : লেবাননের রাজধানী বেইরুতের কেন্দ্রে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে কমপক্ষে ছয়জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে আরো আটজন। স্থানীয় কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। যে ভবনটিতে বিমান হামলা চালানো হয়েছে সেটি বাচৌরাতে অবস্থিত। বহুতল ওই ভবনটি একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল। সেখানে হিজবুল্লাহর আসা-যাওয়া ছিল। এই ভবনে আক্রমণের বিষয়ে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলছে যে, তারা থথ‘নির্ভুল’ হামলা চালিয়েছে। সিএনএন জানিয়েছে, ২০০৬ সালের পর থেকে বৈরুতের কেন্দ্রস্থলে এটিই ইসরাইলের প্রথম হামলা। বৈরুতের কেন্দ্রে বিশেষ করে লেবাননের পার্লামেন্টের এত কাছাকাছি ইসরাইলি হামলা এবারই প্রথম। যেখানে হামলা হয়েছে ঘটনাস্থলটি সংসদ থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে অবস্থিত। এ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় লেবাননে ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় লেবাননে ইসরাইলি হামলায় আরো ৪৬ জন নিহত ও ৮৫ জন আহত হয়েছে।
এ দিকে ইসরাইলি বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার হিজবুল্লাহ ২৪০টির মতো রকেট নিক্ষেপ করেছে। দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহ যোদ্ধা ও ইসরাইলি সৈন্যদের মধ্যে যুদ্ধ তীব্রতর হয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত আটজন ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছেন। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর সর্বশেষ রকেটগুলো তিন ধাপে ছোড়া হয়। এতে দুই ঘণ্টার কম সময় নেয়া হয়েছে। এই রকেটগুলোর বেশির ভাগই ইসরাইলের আপার গ্যালিলি অঞ্চলের পশ্চিমাংশে উন্মুক্ত স্থানে পড়েছে। এ ছাড়া অঞ্চলটির উত্তরাংশে উন্মুক্ত স্থানে পড়েছে দু’টি রকেট।
ইসরাইলি হামলায় ১ মার্কিনি নিহত : লেবাননে ইসরাইলি বিমান হামলায় এক আমেরিকান নিহত হয়েছেন। তিনি মিশিগানের ডিয়ারবর্নের বাসিন্দা। নিহত ওই ব্যক্তির মেয়ে, বন্ধু এবং তার নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্বকারী মার্কিন কংগ্রেসওম্যান এই তথ্য জানিয়েছে। রয়টার্সের খবর অনুসারে, বুধবার ডেমোক্র্যাটিক মার্কিন রিপ্রেজেন্টেটিভ রাশিদা তুলাইবের কার্যালয় বলেছে, তারা কামেল আহমাদ জাওয়াদ নামের নিহত ওই ব্যক্তির পরিবারের সাথে যোগাযোগ করছে। কার্যালয়টি জানায়, কামেল আহমাদ একজন মার্কিন নাগরিক। এক বিবৃতিতে তার মেয়ে নাদিন জাওয়াদ বলেছেন, তার বাবা মঙ্গলবার লেবাননে ইসরাইলি হামলায় ‘নিরীহদের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করার সময়’ নিহত হন। তার বাবা জীবনের শেষ দিনগুলো বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সাহায্য করার মাধ্যমে কাটিয়ে দিতে একটি হাসপাতালের কাছে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি। বুধবার পৃথকভাবে হোয়াইট হাউজের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘কামেল আহমদ জাওয়াদের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত এবং তার পরিবার ও বন্ধুদের সাথে আমরা সমবেদনা জানাচ্ছি। তার মৃত্যু লেবাননের অনেক বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর মতোই একটি ট্র্যাজেডি।’
নাসরুল্লাহর জামাতা নিহত : সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন সাবেক হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর জামাতা। গত বুধবার দামেস্কে চালানো ইসরাইলি হামলায় হাসান জাফর আল-কাসির নামের ওই ব্যক্তি নিহত হন। শুরুতে এই হামলায় ‘বেসামরিক মানুষ’ নিহতের খবর প্রচার হয়। পরে জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে সেখানে হিজবুল্লাহর জামাতা কাসিরও ছিলেন। সিরিয়ান আরব নিউজ এজেন্সি (সানার) নিহতদের মধ্যে একজনকে হাসান জাফর আল-কাসির হিসাবে শনাক্ত করে। বিভিন্ন আরব সংবাদমাধ্যমের মতে, কাসির হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর জামাতা ছিলেন, যাকে ইসরাইল গত সপ্তাহে হত্যা করেছিল। কাসিরকে নিয়ে সানার খবরে আরো এক তথ্য জানা গেছে, কাসির গত মঙ্গলবার সিরিয়ায় নিহত হিজবুল্লাহর সিনিয়র কমান্ডার মুহাম্মাদ জাফরের ভাই। হিজবুল্লাহর ইউনিট ৪৪০০-এর নেতৃত্বে ছিলেন জাফর। ইউনিটটি ইরান এবং মিত্রদের থেকে লেবাননে অস্ত্র সরবরাহ করত।


আরো সংবাদ



premium cement
নোয়াখালীতে যুবদলের লিফলেট বিতরণ নোয়াখালীতে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের শ্রমিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত খালেদা জিয়াকে হত্যাচেষ্টায় শেখ হাসিনার নামে মামলা রামুর রাশেদ হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি মোতাহের গ্রেফতার রাবি প্রেসক্লাবের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠন ‘হাসিনা সরকারের আমলে দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি’ আরো জনশক্তি রফতানিতে মালয়েশিয়ার সহযোগিতা চান রাষ্ট্রপতি মুজিবুল হক চুন্নুকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার আহ্বান রাশেদ খানের মাওলানা মামুনল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার রায় ১৪ অক্টোবর ‘আগামীর বাংলাদেশ হবে সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ আ’লীগ রাজনীতি করতে চাইলে তাদের আগে বিচার হতে হবে : অধ্যাপক মুজিবুর

সকল