২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সংস্কারের পরই নির্বাচনী রোডম্যাপ নির্ধারণ হবে

সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
সংস্কারের পরই নির্বাচনী রোডম্যাপ নির্ধারণ হবে -


প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচন দিয়ে অন্তর্বর্র্তী সরকার সরে যাবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন দুই-এক দিনের মধ্যেই জারি করা হবে। কমিশনগুলোকে তিন মাস সময় দেয়া হবে অর্থাৎ ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির প্রথমে কমিশনগুলোর কাজ শেষ হবে। এসব কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে অংশীদারদের সাথে আলাপ-আলোচনা হবে। এরপরই নির্বাচনী রোডম্যাপ নির্ধারণ করা যাবে। তিনি বলেন, এখনই নির্বাচনের কোনো সময়সীমা ঘোষণা করলে তা অর্থবহ হবে না। রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচনের জন্য যতটুকু সময় প্রয়োজন হবে, অন্তর্বর্তী সরকার ততদিনই ক্ষমতায় থাকবে। এরচেয়ে এক দিনও বেশি সরকার ক্ষমতায় থাকবে না।
গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। সদ্য সমাপ্ত জাতিসঙ্ঘ সাধারণ অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার যোগদানের ওপর এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছিল।
নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে জাতিসঙ্ঘে বিশ্বনেতাদের সাথে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্র্তী সরকার নিজ থেকে ক্ষমতায় আসতে চায়নি, আসেওনি। যে প্রেক্ষাপটে সরকার দায়িত্ব নিয়েছে তা বিশ্বনেতাদের কাছে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অনুঘটকরা তাদের প্রত্যাশার কথা অন্তর্বর্তী সরকারকে জানিয়েছে। তারা চায়, বাংলাদেশে যেন এমন একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়, যাতে আর কোনো সরকার স্বৈরাচার হয়ে উঠতে না পারে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটা ভারসাম্য আনতে হবে। এ ছাড়া সংস্কারসহ তাদের আরো কিছু চাওয়া রয়েছে। অন্তর্বর্র্তী সরকারের এজেন্ডার সাথে এই চাওয়ার অনেক মিল রয়েছে। এটাই বিশ্বনেতাদের বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশী পেশাদার গ্রুপ ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সাথে আমাদের আলাপ হয়েছে। প্রত্যেকেই জোর দিয়ে বলেছেন, আপনারা অর্থাৎ অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের জন্য তাড়াহুড়া করবেন না। আপনাদের ওপর সংস্কারের জন্য যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তা সম্পন্ন করেই নির্বাচন দেবেন। কারণ ভবিষ্যতে তারা একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চান না। আমরা বলেছি, সংস্কার সম্পন্ন করে আমরা যত তাড়াতাড়ি পারি ক্ষমতা হস্তান্তর করব।
নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের সাথে অন্তর্র্বর্তী সরকার একমত কি না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, যতটুকু জানতে পেরেছি, নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের সাথে আরো কিছু কথা ছিল। এর পুরোটা জেনে আমাকে কথা বলতে হবে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাথে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, আমরা একমত হয়েছি, নিজেদের স্বার্থেই আমাদের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। শিডিউল না মেলার কারণে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ হয়নি। তবে আগামী মাসে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে দুই নেতার মধ্যে বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। তবে এখনো তারিখ নির্ধারিত হয়নি।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারতের সাথে আমাদের বিভিন্ন ইস্যুতে যে উদ্বেগগুলো রয়েছে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। ভারতের ভিসা নিয়ে সম্প্রতি যে সমস্যা চলছে সেটি নিয়ে আলাপ হয়েছে। এখন চিকিৎসা, শিক্ষাসহ সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্র ছাড়া বাংলাদেশী পর্যটকদের জন্য ভারতীয় ভিসা দেয়া হচ্ছে না। এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে বলে জয়শঙ্কর আশা প্রকাশ করেছেন।

নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত সরকারের পতনের পর মাঝে একটা শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল। পুলিশ বেশ কিছুদিন দায়িত্ব পালনে বিরত ছিল। এখন পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও দায়িত্ব পালন করছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এটা নিয়ে ইদানীং বিদেশী কারো কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
পাকিস্তানের হাইকমিশনার সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার বার্তা দিয়েছেন। তবে তারা ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য এখনো ক্ষমা চায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ৫২ বছরের ইস্যু এক দিনে সমাধান হবে বলে আমি মনে করি না। আমরা আলোচনার টেবিলে বসলে ইস্যুটি থাকতে হবে। আমি মনে করি পাকিস্তান যদি সাহস করে বলে যে, বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে তারা আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী- এতে দোষের কিছু নেই। জাপান তাদের কৃতকর্মের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে গত ৭০ বছর ধরে ক্ষমা চেয়ে আসছে। পাকিস্তানও যদি এমন সাহস দেখাতে পারে, তাহলে সম্পর্ক স্বাভাবিক ও সহজ হয়ে আসবে। আবার এ কারণেই যে সম্পর্ক আটকে রাখা হবে, সেটিরও কোনো প্রয়োজন নেই। স্বার্থ বজায় রেখেই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এখানে আমাদেরও স্বার্থ আছে, তাদেরও আছে। সবকিছুই দেখতে হবে।
রাখাইনে আরাকান আর্মির সাথে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্ঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে নিউ ইয়র্কে কেউ অনুরোধ জানিয়েছেন কি না প্রশ্ন করা হলে তৌহিদ হোসেন বলেন, এখানে মানবিকতা ও বাস্তবতা- এই দু’টি প্রেক্ষাপট রয়েছে। বাস্তবতা হলো, নতুন করে আর কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার জায়গা আমাদের নেই। অন্য দিকে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন সঙ্কটের কারণে শরণার্থী পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। তাই রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার পরিমাণও দিন দিন কমে যাচ্ছে। এই বাস্তবতায় নতুন করে বাংলাদেশে আসতে চাওয়া রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে নিউ ইয়র্কে কেউ আমাদের চাপ দেয়নি। আমরা তাদের বলেছি, রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান মিয়ানমারেই নিহিত।

 


আরো সংবাদ



premium cement