১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কী করতে গিয়ে কী হয়ে গেল!

কী করতে গিয়ে কী হয়ে গেল! - ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল বেলজিয়ামের। ১৯৮৬ সালে মেক্সিকোর মাঠে তাদের এই যাত্রায় বাধা ছিল আর্জেন্টিনা। ৩২ বছর পর রাশিয়ার মাটিতে তাদের আবার হতাশ হতে হলো। এবার তাদের ধেয়ে চলাটা থামিয়ে দেয় ফ্রান্স। গত পরশু সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে ম্যাচের একমাত্র গোল কর্নার থেকে। যা ফ্রান্সকে নিয়ে গেছে ১২ বছর পর এই আসরের ফাইনালে। বিপরীতে ফের শিরোপার শেষ লড়াইয়ে অংশ নেয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে বেলজিয়ামকে। কর্নার নামের যে সেট পিস থেকে গোল হজম বেলজিয়ামের এই কর্নার থেকে গোল ঠেকানোর জন্য কী অনুশীলনই না করেছিল তারা। অথচ তাদের হার তা থেকেই। ম্যাচ শেষে মিক্সড জোনে এই নিয়েই আফসোস করলেন মিডফিল্ডার মারওয়ানি ফেলাইনি।

ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেডে খেলা এই ফুটবলারের মতে, আমরা জানতাম ফ্রান্স এই ধরনের সেট পিসে খুব ভালো। ফ্রি-কিক কর্নার ইত্যাদি। তাই সেভাবেই প্র্যাটকটিস হয়েছিল। এরপরও আটকানো যায়নি ফরাসিদের গোল। আমরাও কর্নার পেয়েছিলাম আমরা। তা কোনো কাজে আসেনি। আরো জানান, দুই প্রান্ত থেকে ক্রসও ভাসানো হয়েছিল ফ্রান্সের পোস্টের সামনে। গোল পাইনি তা থেকেও। তাই এমন হারে খুব হতাশ আমি। তার মতে, আমাদের চেয়ে প্রতিপক্ষ দলে নামকরা ফুটবলারের উপস্থিতি বেশি এটাও তফাৎ গড়ে দেয় খেলায়।

ডিফেন্ডার জেন ভারতোগহেন এর বক্তব্য, এই খেলার আগ পর্যন্ত আমরাই ছিলাম এবারের বিশ্বকাপের সেরা দল। এই আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নেমেছিলাম। তবে আমাদের হারতে হয়েছে ফ্রান্সের রক্ষণাত্মক কৌশলের কাছে। মাঠে তারা আমাদের চেয়ে বেটার ছিল না। এখন আমাদেরকে ১৯৮৬ সালের মতোই সেমি ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হলো।

আরেক ডিফেন্ডার ভিনসেন্ট কোম্পানির মতে, দিনটা ফরাসিদের ভালো গেছে। তবে তারা আমাদের চেয়ে ভালো খেলেনি। এই পরাজয়ে আমরা সবাই ভীষণ হতাশ হলেও গর্বিত পুরো টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্সে। সেমি ফাইনাল ম্যাচটি দুই দলের জন্যই ছিল ফিফটি ফিফটি। আসলে এটাই ফুটবল। ম্যাচে ফ্রান্স যা চেয়েছে তাই করেছে। যোগ করেন, গোলের সুযোগ পেয়েছিল দুই দলই। ফ্রান্স তাদের ডিফেন্সকে শক্তিশালী রেখেই ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করল। আর আমরা যতোই ভালো ম্যাচ উপহার দেই না কেন. দিন শেষে তো আমরা হেরেছি। ফাইনালে না যেতে পারলে এই সব ভালো খেলার মূল্যায়ন কেউ করবে না।

আরো পড়ুন :
বেলজিয়ামকে হারিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্স
প্রথম দল হিসেবে ২১তম বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে উঠলো সাবেক চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। গতরাতে বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে ফ্রান্স ১-০ গোলে হারায় বেলজিয়ামকে। ম্যাচের ৫১ মিনিটে ডিফেন্ডার স্যামুয়েল উমিতিতি ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন। ফলে বিশ্বকাপ ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠলো ফরাসিরা। ১৯৯৮ সালে চ্যাম্পিয়ন হলেও ২০০৬ আসরে রানার্স-আপ হয়েই সন্তুস্ট থাকতে হয় ফ্রান্সকে।

ফাইনালে উঠার লক্ষ্য নিয়ে সেন্ট পিটার্সবার্গ শেষ চারের লড়াই শুরু করে ফ্রান্স ও বেলজিয়াম। দু’দলই ৪-২-৩-১ ফরমেশনে ম্যাচ শুরু করে। মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে বেলজিয়াম। ৭৩ বারের মোকাবেলায় ৩০টিতে বেলজিয়াম ও ২৪টিতে জয় পায় ফ্রান্স। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপের পর আবারো বড় মঞ্চে মুখোমুখি দু’দল। সে বার ৪-২ গোলে জয় পেয়েছিলো ফরাসিরা। তাই শেষ চারের লড়াইয়ে একক ফেভারিট ছিলনা কোন দলই।
আক্রমন পাল্টা আক্রমণে খেলা শুরু করে ফ্রান্স ও বেলজিয়াম। তবে ম্যাচে প্রথম আক্রমনে যায় বেলজিয়াম। ১৫ মিনিটে মিডফিল্ডারকেভিন ডি ব্রুইনার পাস থেকে বল পেয়ে গোলমুখে শট নিতে ব্যর্থ হন স্ট্রাইকার ও অধিনায়ক এডেন হ্যাজার্ড।

কিছুক্ষণ পর পাল্টা আক্রমণ করে ফ্রান্স। মিডফিল্ডার এনগোলা কন্টের বাড়ানো বলে বেলজিয়ামের বক্সের বাইরে থেকে শট নেন মধ্যমাঠের আরেক খেলোয়াড় ব্লাইস মাতুইদি। তার শট আটকে যায় বেলজিয়ামের রক্ষণভগ।
এরপর ফ্রান্সের গোলরক্ষকের হুগো লরিস দুর্দান্ত দক্ষতায় ডান-দিকে ঝাপিয়ে পড়ে ডিফেন্ডার টবি আলডারউইরেল্ডের শট রুখে দিলে ২২ মিনিট নিশ্চিত গোল বঞ্চিত হয় বেলজিয়াম।

গোল বঞ্চিত হলেও আক্রমনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পারে বেলজিয়াম। কারণ মধ্যমাঠের দখল নিয়ে বল নিজেদের নিয়ন্ত্রনে রেখেছিলো বেলজিয়াম। বল দখলে না রাখতে পারলেও ম্যাচের লাগাম ছেড়ে দেয়নি ফ্রান্স। তাাচের ৩১ থেকে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত বেলজিয়ামের সীমানায় আটটি আক্রমন করে ফরাসিরা। এরমধ্যে ২টি শট বেলজিয়ামের গোলমুখে নিতে পেরেছিলো ফ্রান্স। কিন্তু গোলের দেখা পায়নি তারা। ফলে ম্যাচের প্রথমার্ধ গোল শুন্যভাবেই শেষ হয়। প্রথমার্ধে ৬০ শতাংশ বল নিজেদের দখলে রাখে বেলজিয়াম। ফ্রান্সের সীমানায় ৭বার আক্রমন করেও দু’বার গোল মুখে শট নিতে পারে তারা। অপরদিকে, ৪০ শতাংশ বল দখলে রেখে ১৬টি আক্রমনের মধ্যে তিনবার বেলজিয়ামের গোলমুখে শট নেয় ফ্রান্স।

প্রতিপক্ষের উপর ভালোভাবে চাপ সৃষ্টি করতে না পারায় প্রথমার্ধে গোলের দেখা পায়নি ফ্রান্স। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই বেলজিয়ামের সীমানায় আক্রমণ চালায় ফরাসিরা। ফলে ৫১ মিনিটে গোলের দেখা পেয়ে যায় ফ্রান্স। কর্ণার থেকে বেলজিয়ামের বক্সের ভেতর ক্রস করেন ফ্রান্সের স্ট্রাইকার আঁতোয়োন গ্রিজম্যান। তার কর্ণার থেকে বল পেয়ে হেডের সহায়তায় ডিফেন্ডার স্যামুয়েল উমিতিতির গোলে ১-০ বধানে এগিয়ে ফলে যায় ফ্রান্স।

গোল হজমের পর নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে আক্রমণ শানায় বেলজিয়াম। ৬১ মিনিটে গোলের সুযোগ তৈরি করেছিলো বেলজিয়াম। ফ্রান্সের বক্সের ভেতর থেকে বেলজিয়ামের মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনার শট প্রতিপক্ষের গোলবারের পাশ দিয়ে চলে যায়।

৬৫ মিনিটে আবারো আক্রমণে যায় বেলজিয়াম। স্ট্রাইকার দ্রিস মার্টেনের ক্রস থেকে ফ্রান্সের গোলমুখে হেড নিয়েছিলেন মিডফিল্ডার মরুয়ানে ফেলাইনি। কিন্তু তার হেড অল্পের জন্য ফরাসিদের জাল খুঁেজ পায়নি।
৭৬ মিনিটে হ্যাজার্ডের বানিয়ে বলে শট নেন ব্রুইনা। তার শটটি গোলবারের উপর দিয়ে চলে গেলে এ যাত্রাতেও ব্যর্থ হয় বেলজিয়াম।

এরপরও আক্রমন অব্যাহত রাখায় ম্যাচের ৮১ মিনিটে গোলের সেরা সুযোগ পেয়েছিলো বেলজিয়াম। মিডফিল্ডার এ্যাক্সেল উইটসেলের দ্রুতগতির শট ফ্রান্সের গোলরক্ষক লরিস বাঁ-দিকে ঝাপিয়ে পড়ে রক্ষা করেন। ফলে আবারো নিশ্চিত গোল থেকে বঞ্চিত হয় বেলজিয়াম।

এরপর ম্যাচের শেষদিকে ফ্রান্সের সীমানায় গোলের জন্য গুটি কয়েক আক্রমণ করেছিলো। কিন্তু সেগুলো তেমন শক্তিশালী কোনো আক্রমণ ছিলো না। ফলে ১-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ফ্রান্স। ২০০৬ সালের পর আবারো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলো ফ্রান্স।

১৯৮৬ সালের পর দ্বিতীয়বারের মত সেমিফাইনালে উঠার সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলো না বেলজিয়ায়ম। আবারো ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হলো তারা। তাই এবার তৃতীয়স্থান নির্ধারণী ম্যাচ খেলতে হবে বেলজিয়ামকে। যেমনটা ১৯৮৬ সালেও খেলেছিলো তারা। ঐবার এই ফ্রান্সের কাছেই ৪-২ গোলে হেরেছিল বেলজিয়াম। এবার তৃতীয়স্থানে নির্ধারনী ম্যাচে বেলজিয়ামের প্রতিপক্ষ হবে ইংল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়ার মধ্যকার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে হেরে যাওয়া দলটি। আগামী ১৪ জুলাই সেন্ট পিটার্সবুর্গে অনুষ্ঠিত হবে এবারের বিশ্বকাপের তৃতীয়স্থান নির্ধারণী ম্যাচ।


আরো সংবাদ



premium cement