বিশ্বকাপের ফাইনাল দেখার সৌভাগ্য হচ্ছে না থাই শিশুদের
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১১ জুলাই ২০১৮, ১২:২০, আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৮, ১২:২৭
থাইল্যান্ডের গুহা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে কিশোর ফুটবল দলের ১২ সদস্য ও তাদের কোচকে। মঙ্গলবার এই উদ্ধার অভিযান শেষ হয়। গুহায় আটকে থাকাকালীন বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ফিফা সভাপতি গিয়ানি ইনফান্তিনো। কিন্তু দুভার্গ্য এই সাহসী কিশোরদের সময়মতো গুহা থেকে বের করে আনা গেলেও ফাইনাল ম্যাচ দেখার সৌভাগ্য হচ্ছে না। কারণ তারা এখন হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে আছে।
থাই চিকিৎসকেরা জানিয়েছে, নানা পরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণের জন্য কম করে হলেও এক সপ্তাহ তাদের হাসপাতালে থাকতে হবে। তার অর্থ রোববারের ফাইনাল হয়তো তাদের হাসপাতালে টিভিতে দেখতে হবে।
বেশ কয়েক দিন না খেয়ে থাকার কারণে তারা শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া লম্বা সময় গুহায় আটকে থাকায় তারা বাদুড় ও ইঁদুরের কারণে কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়েছে কি না, সেটাও নিশ্চিত হতে চাইছেন চিকিৎসকেরা।
এ কারণে তাদের হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের সাথেও তাদের দেখা করতে দেয়া হয়নি।
ফিফা সভাপতি বলছিলেন, মস্কোয় রাশিয়া ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালে থাই ওই দলের কোচসহ ১৩ জনের জন্য আসন বরাদ্দ থাকবে। তারা সময়মতো উদ্ধার পেলে খেলা দেখতে পারবে মাঠে বসে।
আরো পড়ুন : থাই কিশোরদের জয় উৎসর্গ করলেন পল গগবা
বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে বেলজিয়ামকে হারিয়ে স্বপ্নের ফাইনালের পৌঁছে গেছে ফ্রান্স। আর এই বিশাল জয়কে থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে থাকা কিশোর ফুটবল দলকে উৎসর্গ করেছেন তারকা মিডফিল্ডার পল পগবা।
১৮ দিন গুহায় আটকে থাকার পর শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে তাদের। রোববার থেকে শুরু হওয়া এই অভিযান শেষ হয়েছে মঙ্গলবার। তাদের এখন হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজার সাথে সাথেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফরাসি ফুটবলাররা তাদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে থাকেন ভক্ত-সমর্থকদের সাথে।
পল পগবা তখন ইনস্টাগ্রাম থাই কিশোর ফুটবল দলের একটি ছবি পোস্ট করে তাদের জয় উৎসর্গ করেন। অবিশ্বাস্য মনোবলের এই শিশুদের প্রশংসা করে লিখেন, 'এই জয় থাইল্যান্ডের আজকের এই নায়কদের, সাবাশ ছেলেরা, তোমরা অনেক শক্তিশালী।'
এরপর নিজেদের জয় নিয়ে তারকা বলেন, 'এই জয় অসাধারণ। তবে এখনও কাজ শেষ হয়নি। আরো কিছুটা পথ বাকি আছে।'
আরো পড়ুন : সবাইকে বের করে আনা হলো থাইল্যান্ডের গুহা থেকে
আর বাকি নাই। থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে পড়া ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচ সবাইকে উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার চারজন ও সোমবার চারজনকে উদ্ধার করেন উদ্ধারকারীরা। মঙ্গলবার চার ফুটবলার ও তাদের কোচকে গুহা থেকে বের করে আনেন উদ্ধারকারীরা।
বার্তা সংস্থা এএফপি ও রয়টার্সের খবরে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, মঙ্গলবার গুহায় আটকে থাকা ৫জনকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, নবম, দশম ও একাদশ কিশোরকে ৩০ মিনিটের ব্যবধানে গুহা থেকে উদ্ধার করে আনা হয়। এরপরই বাকি দুজনকে বের করে আনেন উদ্ধারকারীরা।
বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, আজ তৃতীয় দিনের মতো শিশুদের উদ্ধারকাজে ৯০ জন ডুবুরি থাম লুয়াং গুহায় প্রবেশ করেন। রোববার ও গতকাল সোমবার মোট আটজনকে থাম লুয়াং গুহা থেকে উদ্ধার করা হয়। পুরো উদ্ধার-প্রক্রিয়ায় ৯০ জনের একটি ডুবুরি দল কাজ করছে। তাঁদের মধ্যে ৪০ জন থাইল্যান্ডের। অন্যরা বিদেশি।
গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে হেঁটে, কাদা মাড়িয়ে, কখনো চড়াইয়ে উঠে, আবার কখনো পানির নিচ দিয়ে সাঁতরে ওই কিশোরদের বের করে আনা হয়। উদ্ধারকাজের জন্য বাইরে থেকে ওই ফুটবল দলের অবস্থানস্থল পর্যন্ত দড়ি বাঁধা হয়। উদ্ধারের সময় প্রত্যেক কিশোরকে অক্সিজেন মাস্ক পরানো হয়, দড়ি দিয়ে বাঁধা হয় সামনে থাকা ডুবুরির সঙ্গে। একজন গুহায় বাঁধা দড়ি এবং অক্সিজেনের বোতল নিয়ে যান খুদে ফুটবলারদের কাছে। কোনো সমস্যা হলে সহায়তার জন্য তাদের পেছনে ছিলেন আরেকজন ডুবুরি। গুহার সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গাটি ‘টি-জংশন’ নামে পরিচিত। এই এলাকা এতটাই সংকীর্ণ যে এখানে ডুবুরিদের অক্সিজেন ট্যাংকও খুলে ফেলতে হয়। এই এলাকার আগে ‘চেম্বার-থ্রি’ নামের প্রকোষ্ঠে বেস ক্যাম্প বানানো হয়েছে। সর্বশেষ ধাপটি অতিক্রমের আগে এখানে কিছু সময় বিশ্রামের ব্যবস্থা রাখা হয়।
আজকের মধ্যেই পুরো উদ্ধারপ্রক্রিয়া শেষ করতে চান ডুবুরিরা। উদ্ধার করা শিশুরা ভালো আছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্তের কাছে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ থাম লুয়াং গুহা থাইল্যান্ডের দীর্ঘতম গুহা। কম চওড়া আর অনেক প্রকোষ্ঠ থাকায় গুহার ভেতরে চলাচল করা কঠিন। ওই গুহায় ঢোকার পর গত ২৩ জুন নিখোঁজ হয় ১২ খুদে ফুটবলার ও তাদের কোচ। খুদে ফুটবলারদের বয়স ১১ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। আর তাদের সহকারী কোচ এক্কাপোল জানথাওংয়ের বয়স ২৫ বছর। তারা মু পা নামের একটি ফুটবল দলের সদস্য। নয় দিন সেখানে আটকে থাকার পর ২ জুলাই ব্রিটিশ ডুবুরি রিচার্ড স্ট্যানটন ও জন ভলানথেন তাদের সন্ধান পান।