থাই কিশোরদের জয় উৎসর্গ করলেন পল গগবা
- স্কাই স্পোর্টস
- ১১ জুলাই ২০১৮, ১১:৪১, আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৮, ১২:৪৫
বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে বেলজিয়ামকে হারিয়ে স্বপ্নের ফাইনালের পৌঁছে গেছে ফ্রান্স। আর এই বিশাল জয়কে থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে থাকা কিশোর ফুটবল দলকে উৎসর্গ করেছেন তারকা মিডফিল্ডার পল পগবা।
১৮ দিন গুহায় আটকে থাকার পর শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে তাদের। রোববার থেকে শুরু হওয়া এই অভিযান শেষ হয়েছে মঙ্গলবার। তাদের এখন হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজার সাথে সাথেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফরাসি ফুটবলাররা তাদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে থাকেন ভক্ত-সমর্থকদের সাথে।
পল পগবা তখন ইনস্টাগ্রাম থাই কিশোর ফুটবল দলের একটি ছবি পোস্ট করে তাদের জয় উৎসর্গ করেন। অবিশ্বাস্য মনোবলের এই শিশুদের প্রশংসা করে লিখেন, 'এই জয় থাইল্যান্ডের আজকের এই নায়কদের, সাবাশ ছেলেরা, তোমরা অনেক শক্তিশালী।'
এরপর নিজেদের জয় নিয়ে তারকা বলেন, 'এই জয় অসাধারণ। তবে এখনও কাজ শেষ হয়নি। আরো কিছুটা পথ বাকি আছে।'
আরো পড়ুন : অবিশ্বাস্য সাহসী ও শক্ত থাই কিশোরেরা
থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে পড়া ১২ জন কিশোরকে বের করে আনার কাজে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যেসব বিদেশী বিশেষজ্ঞ ডুবুরি অংশ নিয়েছেন, তাদের একজন ইভান কারাজিচ।
ডেনমার্কের এই বিশেষজ্ঞ ডুবুরি থাইল্যান্ডেরই কো-তাও নামে ছোট একটি দ্বীপে একটি গুহার ভেতরে ডাইভিং বা ডুবসাঁতার দেয়ার একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালান। চিয়াং রাইয়ের পাহাড়ের গুহায় কিশোর ফুটবল দলটির আটকে পড়ার খবর প্রচার হওয়ার পর অন্য নানা দেশের অনেক স্বেচ্ছাসেবী ডুবুরির মতো তিনিও ছুটে গিয়ে যোগ দেন উদ্ধারকারী দলে।
গত ক’দিনের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে আটকে পড়া এই বেশির ভাগ সাঁতার না জানা থাই শিশু-কিশোরদের সাহসের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন কারাজিচ। তিনি বলেন, ‘এই শিশুগুলোকে এমন কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা আগে কখনো এই বয়সের কোনো শিশুই হয়তো করেনি... ১১ বছর বয়সে কেভ ডাইভিং (গুহার ভেতরে ডুবসাঁতার) চিন্তারও বাইরে।’
কারাজিচ বলেন, সরু গুহায় ভারী অক্সিজেনের পাত্র পিঠে নিয়ে মাস্ক পরে ডুবসাঁতার দেয়া যেকোনো বয়সের মানুষের জন্য বিপজ্জনক। যখন তখন বিপদ আসতে পারে, নিজের টর্চের আলো ছাড়া সব কিছু অন্ধকার।’
কারাজিচ বলেন, উদ্ধারের পরিকল্পনার সময় তাদের সবচেয়ে ভয় ছিল শিশুগুলো যদি মাঝপথে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, তখন কিভাবে তা সামাল দেয়া যাবে। কিন্তু যাদের বের করে নেয়া হয়েছে তাদের তেমন কোনো বিপদের কথা উদ্ধারকারীদের কাছ থেকে শোনা যায়নি।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাসই করতে পারি না যে এই শিশুগুলো কতটা সাহসী এবং ঠাণ্ডা মাথার হতে পারে, ভাবতেই পারছি না... দুই সপ্তাহ ধরে ঠাণ্ডা, অন্ধকার গুহার আটকে ছিল তারা, মাকে দেখেনি...’
ইভান কারাজিচের দায়িত্ব- গুহার মাঝামাঝি পথে অবস্থান নিয়ে অক্সিজেন-ভর্তি পাত্র পরীক্ষা করে বদলে দেয়া। রোববার প্রথম শিশুটিকে তিনি যখন আসতে দেখেন, অনুভূতি কী ছিল তার? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘মনে মনে অনেক আশঙ্কা ছিল আমার। ৫০ মিটারের মতো দূরে প্রথম যখন একজন ডুবুরি এবং তার পেছনে শিশুটি নজরে এলো, আমি তখনো নিশ্চিত ছিলাম না যে শিশুটি বেঁচে আছে কি না। যখন দেখলাম সে শ্বাস নিচ্ছে, বেঁচে আছে, দারুণ স্বস্তি পেয়েছিলাম।’
থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাও স্বস্তি প্রকাশ করলেন বের করে আনা সব শিশুই ভালো আছে। স্বাস্থ্য সচিব ড. জেটাসাদা চোকেদামরংসুক মঙ্গলবার বলেছেন, ‘তারা নিজেরাই সব কিছু করতে পারছে।’ একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সকালে কয়েকজন নাশতার জন্য চকোলেট-রুটি খেতে চেয়েছে। সোমবার কয়েকজন বাসিল পাতা এবং গোশত দিয়ে তৈরি ফ্রায়েড রাইস খেতে চেয়েছে। বিবিসির এক সংবাদদাতা টুইট করেছেন- বলাই বাহুল্য, এই শিশুরা অসামান্য, অসাধারণ।