১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ফাইনালে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ হচ্ছে কে?

বিশ্বকাপ
ক্রোয়েশিয়া হয়তো থ্রি লায়ন্সদের মুখোমুখি হবে কিছুটা রক্ষণাত্মকভাবে - সংগৃহীত

ইতোমধ্যে প্রথম ফাইনালিস্ট পেয়ে গেছে রাশিয়া বিশ্বকাপ। মঙ্গলবার রাতে বেলজিয়ামকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ফ্রান্স। আজ দ্বিতীয় ফাইনালিস্ট পাওয়ার ম্যাচ। প্রতিপক্ষ হিসেবে কাকে পাবে ফ্রান্স? এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে রাত পর্যন্ত। বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ক্রোয়েশিয়া।

এই দুটি দেশই রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরু করেছিল ডার্ক হর্স হিসেবে। ফেভারিটের তকমা তাদের গায়ে ছিল না। কিন্তু সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়ে তারা সেমিফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে বুধবার। এই দু’টি দেশই আর মাত্র দু’টি জয় দূরে আছে বিশ্বকাপ শিরোপা নিয়ে উল্লাস করার জন্য। বিশ্ব ফুটবলের পণ্ডিতরা ভাবতেই পারেননি বা তাদের চিন্তায় ইংল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়ার সেমিফাইনালে মুখোমুখি হওয়ার মতো বিষয় থাকলেও সেটি ছিল খুব দূরের চিন্তা। রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ অব ডেথ খ্যাত গ্রুপ ডি থেকে তাদের দ্বিতীয় পর্বে শতভাগ জয় নিয়ে ক্রোয়েশিয়ার দ্বিতীয় পর্বে যাওয়াটাও হতবাক করেছিল অনেককে।

আর্জেন্টিনাকে পেছনে ফেলে তারা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় পর্বে জায়গা করে নেয়। রাউন্ড অব সিক্সটিনে ডেনমার্ক এবং কোয়ার্টার ফাইনালে ২০১৮ বিশ্বকাপের স্বাগতিক রাশিয়ার বিপক্ষে জয়ী হয়ে তারা সেমিতে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত। পূর্ব ইউরোপ ও মডরিচ, রেকিটিচ ও মান্দজুকিচের ক্রোয়েশিয়ার প্রতিভার কোনো অভাব নেই। তারা ফাইনালে যেতে পারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ চারে জয়ী হয়ে। কিন্তু তাদের জন্য চিন্তার বিষয় হলো, রাউন্ড অব সিক্সটিন-কোয়ার্টার ফাইনাল এবং অতিরিক্ত সময় পেরিয়ে টাইব্রেকারে জয় লাভ করে তাদের সেই শক্তি এবং উদ্যম আছে কি না?

ইংলিশ থ্রি লায়ন্সরা এই যুগে তাদের বিশ্বকাপের সেরা সাফল্যটি পেয়েছে মনে হয় বর্তমান আসর রাশিয়া বিশ্বকাপে। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে তারা কলম্বিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে জয়ী হয়েছে এবং সুইডেনের বিপক্ষে অনেকটা সহজেই এবং ফেভারিট হিসেবেই ২-০ গোলের জয় নিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। ইংলিশ জনগণ ইতোমধ্যেই উল্লাস করতে শুরু করেছে এই বলে যে, ফুটবল তার জন্মভূমিতে ফিরছে। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে জয়ী হলে লন্ডন, ম্যানচেস্টার, বার্মিংহাম কিংবা তাদের সকল বড় শহর এবং কাউন্টিগুলোতে এই উল্লাস ছড়িয়ে পড়বে আরো লাখ, কোটি গুণ বৃদ্ধি পেয়ে।

একই কথা প্রযোজ্য ক্রোয়েশিয়ার বেলায়ও। তাদের ক্ষেত্রে উল্লাসের মাত্রাটা আরো বেশি হতে পারে। কারণ ১৯৯৮ সালে প্রথমবার অংশগ্রহণেই তারা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলেছিল এবং শেষ পর্যন্ত তৃতীয় স্থানের অধিকারী হয়। এই নিয়ে দ্বিতীয় বারে মতো বিশ্বকাপ ফুটবলের সেমিফাইনালে খেলছে জালাটকো ডালিচের ক্রোয়েশিয়া। তাদের সোনালি প্রজন্মের ফুটবলারদের কাছ থেকে এটিই আশা করছে ক্রোয়েট জনগণ। যেটা পারেনি ড্যাভর সুকার কিংবা বোবেনরা করতে। মডরিচ, রেকিটিচ এবং পারিসিচ ও মান্দজুকিচদের কাছে তাদের এটাই প্রত্যাশা। ১৯৯৮ বিশ্বকাপ ছাড়া ক্রোয়েশিয়া তাদের বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে গ্রুপ পর্ব ছাড়িয়ে খুব একটা সামনে এগোতে পারেনি। কিন্তু দ্বিতীয়বারের মতো সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়ে মডরিচরা প্রমাণ করেছে তাদের দলটি বেশ প্রতিভাবান। ইউরোপের যেকোনো শক্তিধর ফুটবল দেশকে মুখোমুখি হতে তারা এখন প্রস্তুত। মাঝমাঠের দুই সেনানী বার্সেলোনার ইভান রেকিটিচ এবং রিয়াল মাদ্রিদের লুকা মডরিচ তাদের প্রতিপক্ষকে পেরিয়ে শেষ চারে নিয়ে আসতে সাহায্য করেছে।

আক্রমণ ভাগে আছে জুভেন্টাসের মান্দজুকিচ ও পারিসিচ। দ্বিতীয় পর্ব ও কোয়ার্টার ফাইনালে নির্ধারিত সময়ে জয়ী হতে না পেরে তারা ক্লান্ত হবে স্বাভাবিকভাবে। তাদের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড অনেকটা সহজেই সুইডেনের বিপক্ষে জয়লাভ করে যা সাউথগেট এর ছেলেদের বেশ ভালো একটি ফল এনে দিয়েছে এবং খুব ক্লান্তিও আনেনি। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড তাই বেশ সতেজ এবং ফুরফুরে খেলা উপহার দেয়ার কথা। ক্রোয়েশিয়া হয়তো থ্রি লায়ন্সদের মুখোমুখি হবে কিছুটা রক্ষণাত্মকভাবে এবং সেট পিস থেকে সুযোগ নেয়ার আশা নিয়ে। অবশ্য ডেড বল সিচুয়েশনে রাশিয়া বিশ্বকাপে সবচেয়ে সফল দেশের নাম ইংল্যান্ড। তারা সেট পিস থেকে ১১টি গোল করেছে। এই বিশ্বকাপে সাউথগেটের দলকে পেনাল্টি, ফ্রি কিক এবং কর্নার থেকে খুব বেশি সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে। ওপেন ফিল্ড দিয়ে তাদের সমস্যা হচ্ছে।

এই সুযোগটিই নেবে মডরিচ ও রেকিটিচ ক্রোয়েশিয়ার দুই মাঝমাঠের সেনা। ক্রোয়েশিয়ার হয়ে তাদের নকআউট পর্বের নায়ক গোলকিপার ড্যানিয়েল সুভাসিচের সামান্য ইনজুরি চিন্তায় ফেলে দিয়েছে তাদের। রক্ষণভাগে সিমে সালিজকোর খেলা নিয়েও কিছুটা সন্দেহ আছে। তার পরিবর্তে টিম জেডভাজের স্থান হতে পারে একাদশে। সাউথগেটের দলের কোনো ইনজুরি চিন্তা নেই। রেকিটিচ ও মডরিচের বিপক্ষে কোচ জেসে লিঙ্গার্ড, ডেলে আলী ও রাহিম স্টার্লিংয়ের মাঝে কাকে বেছে নেবেন সেটাই তার মূল চিন্তা। এই দুই দেশ এর আগে সাতবার মুখোমুখি হয়েছে। ইংল্যান্ড চার জয় নিয়ে এগিয়ে আছে। দুটি জয় পেয়েছে ক্রোয়েশিয়া এবং একটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। আজ অষ্টমবারের মতো মুখোমুখি হচ্ছে তারা। ফলাফল কী হবে? এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে ম্যাচ শেষ হওযা পর্যন্ত।

 

আরো পড়ুন : ইংল্যান্ডের হয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলার সুযোগ হারাতে চাই না : স্টোনস

ইংল্যান্ড তাদের প্রথম বিশ্বকাপ জয় করেছিল ১৯৬৬ সালে। ববি চার্লটনের নৈপুণ্য ভরা সেই বিশ্বকাপের স্মৃতি মনে হয় ইংলিশ বর্তমান প্রজন্মের খুব একটা মনে নেই। কারণ এর মাঝে যে ৫২টি বছর কেটে গিয়েছে। টেমস নদী দিয়ে অনেক পানি গড়িয়ে গিয়েছে। ১৯৯০ বিশ্বকাপে সর্বশেষ সেমিফাইনালে খেলেছিল ইংল্যান্ড। সেই বিশ্বকাপের স্মৃতিও বর্তমান ইংল্যান্ড জাতীয় দলের সদস্যদের মধ্যে আছে কি না সেটি নিয়েও সন্দেহ আছে। এশলে ইয়ংয়ের হয়তো কিছুটা মনে থাকতে পারে। না হলে সাউথগেটের দলের বেশির ভাগ সদস্যই ৯০-এর পরে জন্ম নিয়েছে। তাদেরই একজন ইংল্যান্ড রক্ষণভাগের খেলোয়াড় জন স্টোনস। ইংল্যান্ডের হয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচই খেলেছে স্টোনস। রক্ষণভাগের খেলোয়াড় হলেও দু’টি গোল করেছেন তিনি এবং নিজের প্রতিভাকে নানামুখী রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এই ডিফেন্ডার যে আরো একটি বিশ্বকাপ ফাইনালের সামনে আছে এবং ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে জয়ী হলেই ১৯৬৬ বিশ্বকাপের পর দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলবে ইংল্যান্ড। এই সুযোগ হেলায় হারাতে চায় না জন স্টোনস। নিজেদের ফাইনালে দেখতে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।

স্টোনস বলেন, ‘কিশোর বয়স থেকেই আমি ইংল্যান্ড জাতীয় ফুটবল দলে খেলার স্বপ্ন দেখেছি। ইংল্যান্ডের হয়ে গোল করতে কেমন লাগে সেটাও অনুভব করতে চেয়েছি। রাশিয়া বিশ্বকাপে আমার দু’টি স্বপ্নই পূরণ হয়েছে। আমি এখন আরো বড় কিছু হোক সেটা চাচ্ছি।’

স্টোনস আরো বলেন, ‘আমি এই অভিজ্ঞতাকে বেশ প্রশংসা এবং আনন্দ নিয়ে উপভোগ করছি। আমি হয়তো ইংল্যান্ডের হয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ নাও পেতে পারি। তাই এবার আমি ফাইনালে খেলতে চাই। সেখানে গিয়ে পরেরটা দেখা যাবে। ম্যানচেস্টার সিটিতে আমি যা কিছু শিখেছি এবং ক্যারিয়ারে যা কিছু শিখেছি, সবকিছুই আমি ঢেলে দিতে চাই ফাইনালে যাওয়ার জন্য।’

তিনি আরো যোগ করেন, ‘যখন ইংল্যান্ডের জার্সি আপনার সামনে থাকে ড্রেসিংরুমে ঝুলানো অবস্থায় সেটি দুই হাতে ধরে আপনি গায়ে দিতে চান। এবং জাতীয় দলের হয়ে যতটা সম্ভব ভালো করতে চান। আমাদের ও আমার জন্য সেরকম গর্বিত সময় চলছে। দেশের হয়ে আমি ভালো করতে চাই।’

স্টোনস বেশ উৎফুল্ল হয়ে আরো যোগ করেন, ‘আমাদের সামনে মাত্র একটি ম্যাচ বিশ্বকাপের ফাইনালে যাওয়ার জন্য। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনাল নিয়েই আমাদের এখন সব চিন্তা। আমরা এক সময় একটি ম্যাচ নিয়েই চিন্তা করছি। আমাদের সব শক্তি ও উদ্যোম এখন সেমিফাইনালের ম্যাচটিকে ঘিরে। তারপর পরবর্তী ধাপের কথা চিন্তা করা যাবে।’

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement