মেসির মতো একই কৌশলে কেনকে আটকানোর হুমকি
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১০ জুলাই ২০১৮, ১২:৫৩
গ্রুপ পর্বে ম্যাচে পরিকল্পনার বেড়াজালে লিওনেল মেসিকে আটকে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয় পায় ক্রোয়েশিয়া। ওই জয় থেকে এখন চলতি ফুটবল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়া। আগামীকাল বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ক্রোয়েশিয়া। এ ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার সামনে বড় বাঁধা অধিনায়ক হ্যারি কেন।
ইতোমধ্যে একটি হ্যাট্টিকসহ চার ম্যাচে ছয় গোল করে গোল্ডেন বুট জয়ের দ্বারপ্রান্তে কেন। সেমির ম্যাচেও কেন জ্বলে উঠবেন তা বুঝতে পারছেন ক্রোয়েশিয়ার কোচ জালাটকো ডেলিচ। তাই কেনকে আটকানোর পরিকল্পনা কষছেন তিনি। তবে সেই পরিকল্পনায় নতুন কিছু নেই। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে মেসিকে যে পরিকল্পনার বেড়াজালে ফেলেছিলেন, আগামীকালের ম্যাচে কেনকেও আটকে রাখার হুমকি দিলেন ডেলিচ।
তিনি বলেন, ‘এবারের আসরে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করা খেলোয়াড়দের একজন কেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি গোল তারই। তাকে থামানো কঠিন। আমাদের ভালো ডিফেন্ডার ও মিডফিল্ডার আছে। আমরা মেসিকে যেভাবে আটকাতে পেরেছি। ঠিক সেভাবেই কেনকে আটকাতে পারবো বলে আশা রাখি।’
ক্রোয়েশিয়ার মত শেষ দুই ম্যাচে টাইব্রেকার পর্যন্ত যেতে হয়নি ইংল্যান্ডের। গ্রুপ রানার্স-আপ হয়ে শেষ ষোলোতে উঠে কলাম্বিয়ার বিপক্ষে বড় পরীক্ষা দেয়। ১২০ মিনিটের লড়াই ১-১ গোলে শেষ হওয়ার পর টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে জয় পায় ইংলিশরা। বিশ্বকাপের ইতিহাসে টাইব্রেকারে জয়ের কোন রেকর্ড নেই ইংল্যান্ডের। এবার সেই বন্ধ্যাত্ব ঘোচালো কেনের দল। তবে শেষ আটে সুইডেনের বিপক্ষে জিততে মোটেও বেগ পেতে হয়নি ইংল্যান্ডকে। ২-০ গোলের জয়ে ২৮ বছর পর আবারো বিশ্বকাপের সেমিতে উঠার কীর্তি গড়ে ইংলিশরা।
২৮ বছর পর আবারো বিশ্বকাপের সেমিতে উঠার কীর্তি গড়ে ইংল্যান্ড। তাই তাদের শক্ত প্রতিপক্ষই ভাবছেন ক্রোয়েশিয়ার কোচ ডেলিচ, ‘গ্রুপ পর্ব থেকেই দুর্দান্ত ফুটবল খেলছে ইংল্যান্ড। তাদের ফুটবলশৈলি ছিল দুর্দান্ত। ভালো পারফরমেন্স করতে না পারলে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠতে পারতো না। ভালো দল বলেই শিরোপা জয়ের অন্যতম দাবীদার তারা। আমরা এমন দলকে সমীহ করছি। আমাদের সর্তক থাকতে হবে ম্যাচের পরিস্থিতি নিয়ে। সেমিফাইনাল ম্যাচটি এবারের আসরে আমাদের জন্য আসল লড়াই। কারণ প্রতিপক্ষ হিসেবে ইংল্যান্ড বেশ শক্তিশালী দল। তারা আক্রমনাত্মক ফুটবল খেলেছে। মধ্যমাঠ থেকে পরিকল্পনা ভালোভাবে সাজাতে পারে তারা। কর্ণার পেলে তাদের লম্বা ফুটবলাররা হেডে গোল আদায় করতে পারে। সবকিছুই আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে আছে।’
গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে উঠে ক্রোয়েশিয়া। জয়ের ধারাবাহিকতা পরের দুই ম্যাচেও অব্যাহত রেখে ২০ বছর পর আবারো বিশ্বকাপের সেমিফাইানলে দলটি। তবে শেষ ষোলো ও কোয়ার্টার ফাইনালে ঘাম ঝড়ানো জয় পেতে হয়েছে তাদের। শেষ ষোলোতে ডেনমার্কের সাথে ১২০ মিনিট লড়াই করে ১-১ গোলে সমতা রাখতে পারে ক্রোয়েশিয়া। এরপর টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে জয় পায় তারা। শেষ আটেও স্বাগতিক রাশিয়ার বিপক্ষে ১২০ মিনিট ২-২ গোলে সমতা রেখে ম্যাচটি টাইব্রেকারে নিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলের জয়ে শেষ চারের টিকিট নিশ্চিত করে।
দলের এমন পারফরমেন্সে খুশী ডেলিচ। তাই আত্মবিশ্ববাসের সাথেই ইংল্যান্ডকে হুমকি দিচ্ছেন তিনি, ‘আমাদের নিজেদের শক্তির উপর আস্থা আছে। ইংল্যান্ডকে আমরা ভয় পাই না। আমরা যেভাবে খেলেছি, এভাবে খেলতে পারলে আমাদের জয় কেউই আটকাতে পারবে না। বিশেষভাবে সেমিফাইনাল নিয়ে আমাদেরও বিশেষ পরিকল্পনা আছে। মাঠের খেলায় পরিকল্পনাগুলো ভালোভাবে কাজে লাগাতে চাই।’
পরিকল্পনাগুলো কাজে লাগিয়ে ফাইনালের উঠতে মরিয়া ডেলিচ। তিনি বলেন, ‘ক্রোয়েশিয়া কখনো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠতে পারেনি। এবার ভালো সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাই এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাই আমরা। এজন্য যা করার সব কিছুই করতে হবে খেলোয়াড়দের।’
আরো পড়ুন : তারকাদের জমজমাট লড়াই হবে আজ
রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের প্রথম ম্যাচে আজ মুখোমুখি হবে ফ্রান্স ও বেলজিয়াম। বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় ম্যাচটি শুরু হবে। আজকের ম্যাচটি হতে যাচ্ছে ইউরোপের দুই জায়ান্ট দেশের লড়াই। দুই দলই তারকাসমৃদ্ধ। বেলজিয়ামে যেমন আছে লুকাকু, হ্যাজার্ড ও কোম্পানিদের মতো তারকা, তেমনি ফ্রান্সেও আছে গ্রিজম্যান, এমবাপে, পগবার মতো সুপারস্টার। এই দুই দেশের লড়াইটি যেন আজ ক্ল্যাসিক লড়াই হয়ে উপস্থিত হতে যাচ্ছে।
দিদিয়ের দেশমের ফ্রান্স সেমিফাইনালে রবার্ট মার্টিনেজের বেলজিয়ামের মুখোমুখি হচ্ছে ছয়বার বিশ্বকাপের শেষ চার থেকে তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে জায়গা করে নেয়ার লক্ষ্য। ১৯৯৮ ও ২০০৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে তারা খেলেছিল। নিজ দেশে ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে ৩-০ গোলে হারিয়ে দিয়ে তারা শিরোপা উৎসব করেছিল। কিন্তু ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপে ইতালির কাছে পেনাল্টি শুট আউটে পরাজিত হয়ে রানার্সআপের দুঃখ নিয়েই তাদের অভিযান শেষ হয়েছিল।
অন্য দিকে বেলজিয়াম তাদের বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছে। ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে দিয়েগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনার কাছে ২-০ গোলে পরাজিত হয়ে শেষ চারে প্রথমবারের মতোই তাদের অভিযান শেষ হয়েছিল।
যখন গ্রুপ পর্বে ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়ে একটি পেনাল্টি এবং আত্মঘাতী গোলের মাধ্যমে সকারুজদের বিপক্ষে জয়ী হয় তখন কেউ ভাবতে পারেনি দিদিয়ের দেশ্যামের দল শেষ চারে জায়গা করে নেবে। গ্রুপ পর্বের পরবর্তী দুটো ম্যাচেও এমবাপের ফ্রান্স তেমন একটা উত্তেজনা বা নিজেদের আশাবাদী হওয়ার লক্ষণ দেখাতে পারেনি। লেস ব্লুজরা যেন অপেক্ষায় ছিল। তাদের সেরাটা বের হয়ে এসেছে নকআউট পর্যায়ে। মেসির আর্জেন্টিনা ও বার্সেলোনায় তারই টিমমেট সুয়ারেজের উরুগুয়েকে ব্যাগ গুছিয়ে দেশে পাঠিয়েছে তারা। রাউন্ড অব সিক্সটিনের সাত গোলের লড়াইয়ে লেস ব্লুসদের গোল সংখ্যা ছিল চার ও আর্জেন্টিনার তিন। মাত্র এক গোলের ব্যবধানে তারা জয়ী হলেও সেদিন তারা বিশ্বকে দেখিয়েছে অসাধারণ ফুটবল। দেখিয়েছে এমবাপে, পগবা ও গ্রিজম্যান যাদু। কোয়ার্টার ফাইনালে অস্কার তাবারেজ ও সুয়ারেজের উরুগুয়ের বিপক্ষে সুসংহত, শক্তিশালী এবং প্রাধান্য বিস্তার করা খেলা খেলেই ২-০ গোলের জয় নিয়েই শেষ চারে এসেছে দিদিয়ের দেশ্যামের ফ্রান্স।
শুধু তাই নয় নকআউট পর্বের দুটি ম্যাচেই ফ্রান্স দেখিয়েছে তাদের তীরগুলোতে বেশ বিষ রয়েছে যা রাশিয়া বিশ্বকাপ জয় করতেও তাদেরকে সাহায্য করতে পারবে। কিলিয়েন এমবাপের মতো আক্রমণভাগের দুর্দান্ত খেলোয়াড় রাশিয়া বিশ্বকাপকে দেখিয়েছে ফ্রান্স। এই তরুণ তুকীর খেলা দিন দিন বিকশিত হয়েছে আর্জেন্টিনা এবং উরুগুয়ের বিপক্ষে নিজের সেরাটা মেলে ধরেছে। প্যারিস সেন্ট জার্মেই এর মূল মঞ্চে থাকা এমবাপেকে সহায়তার জন্য আছেন গ্রিজম্যান। ম্যান ইউ এর মাঝমাঠের সেনানি পল পগবা একই ভূমিকা রাখবেন ফ্রান্সের হয়ে। দলে বেশি কোনো পরিবর্তন আনবেন না দেশ্যম। ব্লেইসি মাতুইদি আবার একাদশে আসতে পারেন। নিজেদের সর্বশেষ ছয়টি ম্যাচে ফ্রান্স চারটিতে জয়ী হয়েছে এবং দু’টি ড্র করেছে।
রাশিয়া বিশ্বকাপের সবচেয়ে বিপদজনক দল হিসেবে নিজেদের প্রমাণিত করেছে বেলজিয়াম। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয় সেটিই প্রমাণিত করেছে। নিজেদের সর্বশেষ ২৪ ম্যাচে কোনো পরাজয়ের মুখ দেখেনি মার্টিনেজের দল। এতেই তাদের শক্তি প্রমাণিত হয়। কেভিন ডি ব্রুইনা এবং এডেন হ্যাজার্ড জাদুকরী খেলা দেখাচ্ছেন রেড ডেভিলসদের হয়ে এবং আক্রমণভাগে আছে রোমেয়ু লুকাকু।
সর্বশেষ ছয় ম্যাচের সব কয়টিতেই জয়ী হয়েছে রবার্ট মার্টিনেজের বেলজিয়াম। টমাস মুনিয়ারকে তারা পাবে না কার্ড সমস্যার কারণে। বিকল্পর কোনো অভাব নেই তাদের হাতে। ক্যারিসকো, শাদলি ও জানুজায আছে তাদের। এই দুই দেশের মাঝে রাশিয়া বিশ্বকাপের লড়াইটি হবে ৭৪তম লড়াই। বেলজিয়াম ৩০টিতে এবং ফ্রান্স ২৪টিতে জয়ী হয়েছে। বাকি ম্যাচগুলো ড্র হয়েছে।