কান্নায় বিদায় : তবুও গর্বিত রাশিয়া
- রফিকুল হায়দার ফরহাদ, রাশিয়া থেকে
- ০৮ জুলাই ২০১৮, ১৯:১১
গত রাতে থেমে গেছে রুশদের ফুটবল উৎসব। ১৪ জুন সৌদি আরবের বিপক্ষে বড় জয় দিয়ে যে আনন্দের সূত্রপাত শনিবার রাতে তাতে পানি ঢেলে দিলো ক্রোয়েশিয়া। টাইব্রেকারে ক্রোয়েটদের শেষ শটটি নেয়ার আগ পর্যন্ত আশা ছিল স্বাগতিকদের। প্রতিপক্ষ এই শটে গোল করতে ব্যর্থ হলেই স্কোর হতো ৩-৩। খেলা গড়াতো সাডেন ডেথ এ; কিন্তু ভুল করেননি ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলার। তার শটে পরাস্ত রুশ কিপার। বল চলে গেল জালে। এতেই ক্রোয়েশিয়ার সমর্থকদের মধ্যে উল্লাসের জোয়ার বইলেও মুহুর্তে স্তব্ধ হয়ে যায় ফিস্ট সোচি স্টেডিয়ামসহ পুরো রাশিয়া। ১৯৬৬ সালের পর ফের তাদের বিশ্বকাপের সেমিতে খেলার স্বপ্নের মৃত্যু এভাবেই। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রুশরা। একে অপরকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদেছেন। সাথে থাকা বিয়ারের গ্লাস আছড়ে ফেলেছেন। অথচ কী আত্মবিশ্বাস নিয়ে না মাঠে ও ফ্যান ফেস্টে গিয়েছিল তারা।
ফুটবলে তেমন বড় কোনো শক্তি নয় রাশিয়া। এবারের বিশ্বকাপে খেলা দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বাজে র্যাকিং তাদের। ১৪ জুনের আগ পর্যন্ত ৭ টি ম্যাচের কোনোটিতে জয় ছিল না তাদের; কিন্তু বিশ্বকাপের শুরু থেকেই পাল্টে যায় চিত্র। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের জালে পাঁচ গোল। পরের খেলায় ৩-১ এ জয় মিসরের বিপক্ষে। গ্রুপের তৃতীয় ম্যাচে উরুগুয়ের কাছে তিন গোলে হারলেও দ্বিতীয় রাউন্ডে স্পেনের বিপক্ষে ট্রাইব্রেকারে ঐতিহাসিক জয় অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায় রাশিয়ান ফুটবলকে।
২০১০ এর চ্যাম্পিয়নদের বধ করার পর নতুন স্বপ্ন দানাবাধে রুশদের মনে। হয়তো বিশ্বসেরা হওয়ার প্রত্যাশাও ছিল তাদের মনে। বাঘা বাঘা তারকাসম্মৃদ্ধ স্প্যানিশদের কাবু করার পর এমনটা ভাবতেই পারে তারা। সোচিতে প্রথমার্ধে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে লিড নেয়ার আরো পোক্ত হয় তাদের আশা। এরপর ক্রোয়েটরা ২-১ এ এগিয়ে গেলেও স্কোর লাইন আবার ২-২ করে নিজেদের লড়াইয়ে টিকিয়ে রাখে রুশরা। এমনকি টাইব্রেকারের শুরুতে সমান তালে চলছিল স্কোর লাইন। প্রথমে ফয়দর সমোলভের শট প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক সুবাসিচ ঠেকিয়ে দেয়ার পরও।
কারণ এরপরেই মাতিও কাভোচিসের শট আটকে দেন রুশ গোলরক্ষক ইগর আকিনফেব। এরপর ফ্রি-কিক থেকে হেডে গোল করে সমতা আনা মারিও ফার্নান্দেজ তার শট বাইরে মরার পর স্বাগতিকরা সেই যে ব্যাকফুটে চলে গেল তা থেকে আর সামনে বাড়তে পারেনি। ফলে ৪-৩ এ কোর্য়াটারেই বিদায় রাশিয়ার। অবশ্য তারা এখন বিশ্বের সেরা আট দলের একটি। যদিও বিশ্বকাপের আগে তাদের র্যাংকিং ছিল ৭০। সুতরাং সেমিতে যেতে না পারলেও এই অর্জনে গর্বিতই তারা।
আগের রোববারে স্পেনকে হারানোর পর সে কি আনন্দ- উল্লাস রুশদের! শনিবার কোর্য়াটারে ক্রোয়েটদের হারাতে পারলে এই রোববার ছুটির দিনকে কী দারুণ ভাবেই না উদযাপনের জন্য ব্যবহার করতে পারতো তারা।
উল্টো তাদের বিদায়ে আরো আকর্ষণহীন হযে পড়লো এবারের বিশ্বকাপ। প্রথমে দর্শকপ্রিয় আর্জেন্টিনার বিদায়। এরপর সে তালিকায় যোগ হয় আরেক জনপ্রিয় দল ব্রাজিল। এখন রুশরাও বাতিলের খাতায়। মূল আকর্ষণের আগামী তিন ম্যাচে তাই এমন পাগলা দর্শকদের আর দেখা যাবে না। যার সমাপ্তি মূলত ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার বিদায়ের পরই।
ম্যাচ শেষে রাশিয়ার কোচ স্টানিসলেভ চেরচেশব বলেন, খুবই হতাশাজনক এই রেজাল্ট। এখন আর আমাদের কোনো সম্ভবনা নেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। এরপরও আমি দলের এই পারফরম্যান্স গর্বিত। আসর তো শুরু করেছিলাম অংশ নেয়া দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বাজে র্যাংকধারী দল হিসেবে। এখন আমরা সেরা আটের দল।
কোচ জানান, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আমাকে ফোন করেন। ম্যাচ শেষেও ফোন করেছেন। দলের সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘দল ভালো খেলেছে।’ আমি এর জবাবে জানিয়েছি, আমরা হতাশ এই রেজাল্টে। তবে এখন সময় আরো সামনে এগুনোর পথে চলার।