১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

লাতিন ফুটবল কেন পিছিয়ে যাচ্ছে

লিওনেল মেসি, নেইমার জুনিয়র- দুজনের কেউ তার দলকে এনে দিতে পারেননি বিশ্বকাপ শিরোপা - ছবি : এএফপি

এই নিয়ে টানা চার বিশ্বকাপের তিনটিতেই অল ইউরোপিয়ান ফাইনাল হতে যাচ্ছে। ২০০২ সাল পর্যন্ত মোটামুটি ফাইনালের লড়াই হতো লাতিন ও ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে। এখন সেখানে ইউরোপীয়দের রাজত্ব। দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে ট্রফি জয়ের লড়াইটা করতো ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনাই, এরপরেই অবস্থান উরুগুয়ের। এখন তাদের ফুটবলে ভাটার টান। বিপরীতে জোয়ার বইছে ইউরোপের ফুটবলে। ফলে ২০০৬, ২০১০ এর মতো এবারও ফাইনালে থাকছে না ব্রাজিল আর্জেন্টিনার কেউ।

ফাইনাল তো দূরেরকথা এবার মেসি, নেইমারদের দল তো সেমি ফাইনালের টিকিটই পায়নি। তাদের একজনকে দ্বিতীয় রাউন্ডের শেষেই বাড়ি ফেরার টিকিট ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। আরেকজন দেশে ফেরার বিমানে উঠেছে কোর্য়াটার ফাইনালের ম্যাচ শেষে। গ্রুপ পর্বে দারুণ খেলা উরুগুয়েকে নিয়ে কিছুটা আশা জেগেছিল; কিন্তু তাদেরও বিদায় হলো কোর্য়াটার থেকে। প্রত্যেকেরই ছিটকে পড়াটা কোন না কোন ইউরোপীয় দেশের কাছে হেরে। এক ফ্রান্সই রাশিয়া ছাড়তে বাধ্য করেছে আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়েকে, ব্রাজিলকে কাঁদিয়েছে বেলজিয়াম।
কেন ল্যাতিন দেশগুলোর এই অবস্থা? কেন তারা পেরে উঠছে না ইউরোপীয়দের সাথে ?

এর কারণও ব্যাখ্যা করলেন উরুগুয়ের বর্ষীয়ান কোচ অস্কার তাবারেজ। তার মতে, অবকাঠামো গত কারণেই ফুটবলে এগিয়ে গেছে ইউরোপের দেশগুলো। আর এতে ক্রমশ: পিছিয়ে পড়ছে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ।

২০০২ সাল পর্যন্ত মোটামুটি ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা বা উরুগুয়ে ছিল বিশ্বকাপের ফাইনালে। ২০০৬ থেকে ফের শুরু হয় ইউরোপিয়ান দাপট। ২০১৪ আর্জেন্টিনা ফাইনালে উঠে সে ধারায় ছেদ টানে; কিন্তু ওই পর্যন্তই। ফাইনালে তাদের যথারীতি হার জার্মানির কাছে। ১৯৯৮ সালের ফাইনালে ব্রাজিলকে পরাজিত করেছিল ফ্রান্স। এরপর ২০০২ ছাড়া প্রায় প্রতিবারই লাতিন দেশগুলোর ফাইনালে খেলার স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয়েছে ইউরোপীয়দের কাছে হেরে। কখনও জার্মানি , কখনও ফ্রান্স, কখনও নেদারল্যান্ডস এবার সর্বশেষ সংস্করণ বেলজিয়াম ইতি ঘটালো তাদের। তাবারেজের মতে, ইউরোপের অবকাঠামো অনেক উন্নত। মাঠেও তারা অপেক্ষাকৃত খেলছে। ফলস্বরূপ এবারও হতে যাচেছ অল ইউরেপিয়ান ফাইনাল। ফ্রান্সের কাছে হারের পর নিঝনি নভগোরদ স্টেডিয়ামে এই কথা বলেন তিনি।

মূলত: দারিদ্রই সমস্যা লাতিন ফুটবলের। তাদের মানসম্পন্ন সব খেলোয়াড়ই চলে আসে ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবে খেলতে। এই অঞ্চলের দেশগুলোর মতো ফুটবল অ্যাকাডেমি নেই আটালান্টিকের পশ্চিম ও প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব পাড়ে। সাথে যোগ হয়েছে সংশ্লিষ্ট কিছু দেশের ফুটবল কর্মকর্তাদের অযোগ্যতা। তাই প্রতিভাশূন্য হয়ে যাচ্ছে লাতিন ফুটবল। এই স্থান দখল করছে অন্য অঞ্চলের খেলোয়াড়েরা। আর্জেন্টিনার সাংবাদিকদের দুশ্চিন্তা, মেসি অবসরে গেলে কে তাদের জাতীয় দলকে টেনে নিয়ে যাবে। এক সময় নতুন ম্যারাডোনাদের হিড়িক লেগে যেত আর্জেন্টিনার ফুটবলে। এখন কেউ নতুন ম্যারাডোনার উপাধি পাচ্ছেন না। একই অবস্থা ব্রাজিলেও। নতুন পেলের সম্মান আর কারো কপালে জুটছেনা। মেসি, নেইমারের পর কে হাল ধরবে এই দুই লfতিন ফুটবল শক্তির?

ফুটবলে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছে ইউরোপে। তাদের ফুটবলারেরা মেটামুটি একই ক্লাব বা একই লিগে খেলেন। ফলে তারা পরস্পর সম্পর্কে অবগত; কিন্তু ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা বা উরুগুয়ে কিংবা কলম্বিয়ার ফুটবলারদের অবস্থান বিশ্বের নানা দেশের লিগে। কেউ ইংল্যান্ডে, কেউ স্পেনে, কেউ ফ্রান্স বা ইতালিতে খেলছেন। কেউ কেউ চলে গেছেন চীন-জাপানের লিগে। এতে জাতীয় দলে এদের মধ্যে বোঝাপড়ার সমস্যাও হচ্ছে।

এদিকে মেক্সিকোর হয়ে এবার পাঁচ বিশ্বকাপে খেলা রাফায়েল মাকুয়েজের মতে, ফুটবলে মেক্সিকোকে এগোতে হলে অবকাঠামো উন্নয়নে হাত দিতে হবে। কনকাকাফ অঞ্চলের এই ফুটবলারদের আরো বেশী বেশী ইউরোপের লিগে খেলতে হবে। আর্জেন্টিনার বিদায়ের পর ফুটবলে এগুতে আবকাঠামোই কথা বলেছিলেন আর্জেন্টিনার সাবেক অধিনায়ক রবার্তো আয়ালা।

আরো পড়ুন : 'নেইমার অভিনেতা নন'

বেলজিয়ামের কাছে ২-১ গোলে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে ব্রাজিল। বিদায় নিয়েছেন নেইমারও। এবার সমালোচকদের শুলে বিদ্ধ হওয়ার অপেক্ষায় বিশ্বের সবথেকে দামি এই ফুটবলার! কোয়ার্টার ফাইনালে হারের পর ব্রাজিল তারকার ‘অভিনয়’ নিয়ে যে ঝড় বইবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই দুঃসময়ে নেইমারের পাশে দাঁড়ালেন লুকাকু। রাশিয়া বিশ্বকাপে নেইমারকে যেভাবে ফাউল করা হয়েছে, তারপরও নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে দলের জন্য সেরাটা উজাড় করে দিয়েছেন নেইমার, মত বেলজিয়ামের রোমেলো লুকাকুর।

প্রথমে মেসি, তারপর রোনালদো, আর শুক্রবার রাতে নেইমার- বিশ্বকাপের নক্ষত্রবলয় থেকে ছিটকে গেছে তিন তারাই। ‘অভিশপ্ত’ কাজান এরিনাতেই সলিল সমাধি হয়েছে আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল আর ব্রাজিলের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন। একই দিনে রাশিয়া থেকে ফিরতে হয়েছে মেসি-রোনালদোকে। দেশ সফল না হলেও একার কৃতিত্বে মন জয় করেছেন সিআর সেভেন। তাই ‘সম্মান’ অক্ষতই থেকেছে পর্তুগিজ তারকার। ‘বন্যরা বনে সুন্দর আর মেসি বার্সেলোনায়’- এলএমটেন-এর জুটেছে এই কটাক্ষ। আর নেইমার পেয়েছেন ‘শ্রেষ্ঠ অভিনেতার সম্মান’।

মাঠে গড়াগড়ি খেয়ে সময় ‘নষ্ট করা’র জন্য ‘ডাইভার’ নেইমারকে ‘নাটুকে’ বলেও কটাক্ষ করেছেন ম্যারাডোনা। তবে ম্যান ইউ তারকা তা একেবারেই মনে করেন না।

বেলজিয়ামের ফরোয়ার্ড লুকাকুর মত, ‘নেইমার অভিনেতা নন। ওর মধ্যে বিশ্বসেরা হওয়ার ক্ষমতা আছে। আমি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে বিশ্বের সেরা ফুটবলার হবে নেইমার। আরো একবার ওর বিরুদ্ধে খেলতে পেরে আমি অভিভূত।’


আরো সংবাদ



premium cement