ইংল্যান্ডের এটাই প্রথম
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৪ জুলাই ২০১৮, ১৯:২৩
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ইংল্যান্ড যখন কলম্বিয়াকে ট্রাইবেকারে হারিয়ে দেয়। ধারাভাষ্যকার বারবার বলছিলেন, ইংল্যান্ড ট্রাইব্রেকারেও জিততে পারে! তাদের কথায় মনে হচ্ছিল, এটা অসম্ভব ব্যপার। এর অবশ্য যুক্তিক কারণ রয়েছে। ১৯৯০ এর পর দলটি মোট ছয়টি বড় টুর্নামেন্ট থেকে ট্রাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিয়েছে। এই বিবেচনায় কলম্বিয়ার সাথে জয়টাই ইংল্যান্ডের প্রথম।
১৯৯০ সালে ইতালি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল ইংল্যান্ড। সেবার দুর্দান্ত খেলেই বিশ্বকাপের শেষ চারে জায়গা করে নিয়েও জার্মানির বিপক্ষে টাইব্রেকার-দুর্ভাগ্যে সেই স্বপ্নযাত্রায় ইতি ঘটে তাদের। সেই থেকে শুরু অভিশপ্ত এক চক্রের! এরপর কেটে গেছে ২৮ বছর। সেই চক্রের নাগপাশ কাটাতে পারেনি ইংল্যান্ড।
অভিশাপের সেই চক্রটা টাইব্রেকারের। ইংল্যান্ডের ম্যাচ টাইব্রেকারে যাওয়া মানেই যেন প্রতিপক্ষের জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়া। ১৯৯০ বিশ্বকাপের পর ১৯৯৮-এ আর্জেন্টিনার বিপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ড আর পর্তুগালের বিপক্ষে ২০০৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল। একই ফল। টাইব্রেকারে গিয়ে ইংলিশদের বিশ্বকাপ-স্বপ্নের পরিসমাপ্তি। কাল কলম্বিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের আরও একটি বিশ্বকাপ ম্যাচ যখন টাইব্রেকারে গড়াল, তখন ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে আশাবাদী মানুষ কি খুব বেশি ছিল? কিন্তু হ্যারি কেন, জর্ডান পিকফোর্ডদের নতুন দিনের ইংল্যান্ড ইতিহাসকে নিয়ে এল পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে। নির্ধারিত সময়ের যোগ করা মুহূর্তে গোল খেয়ে জয়বঞ্চিত হওয়া ইংলিশরা নিজেদের ভাগ্যবিপর্যয় এড়াল টাইব্রেকার-সৌভাগ্যে!
অথচ, গত ২৮ বছরের ইউরো আর বিশ্বকাপ মিলিয়ে মোট ৬ বার টাইব্রেকারে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাদের। এই অভিশাপেই জেরার্ড-রুনি-ওয়েন-বেকহাম-ফার্ডিনান্ড-কোল-ল্যাম্পার্ড-স্কোলসদের ‘সোনালি প্রজন্ম’ কিছু জিততে পারেনি ইংলিশদের হয়ে।
টাইব্রেকার-হারে পোড়ার যন্ত্রণা ইংল্যান্ডের বর্তমান কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের চেয়ে আর ভালো কে বোঝে! ভদ্রলোক নিজেও এককালে খেলেছেন ইংল্যান্ড জাতীয় দলে। ১৯৯৬ ইউরোতে জার্মানির বিপক্ষে হারা সেমিফাইনাল ম্যাচটাও গড়িয়েছিল টাইব্রেকারে, আর সেই টাইব্রেকারে পেনাল্টি মিস করেছিলেন বর্তমান ইংল্যান্ড কোচ। সেই মিসেই সেবার ইউরো জেতা হয়নি ইংলিশদের।
সেই মিসের প্রায়শ্চিত্তটাই যেন কালকে করলেন সাউথগেট, নিজের শিষ্যদের দিয়ে। হ্যারি কেইন, কিয়েরান ট্রিপিয়ের, মার্কাস রাশফোর্ড ও এরিক ডায়াররা হতাশ করেননি কোচকে।
ইতিহাস গড়ার পরে কেমন লাগছে ইংলিশদের? সাউথগেট নাকি আশাবাদীই ছিলেন দলকে নিয়ে, ‘এটা এমন এক রাত, যেখানে আমার মনে হয়েছিল আমরা কিছু একটা করতে পারব।’
অধিনায়ক কেইনের কাছে এটা যেন মাথা থেকে একটা ভারী বোঝা নেমে যাওয়াই, ‘টাইব্রেকার-অভিশাপটা পেছনে লেগে ছিল। সেই অভিশাপ থেকে এখন তিনি মুক্ত—এটা ভাবতেই ভালো লাগছে। ব্যাপারটি ভবিষ্যতে ভালো করতে আমাদের অনেক সাহায্য করবে।’৭ জুলাই রাত আটটায় বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে সুইডেনের মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড।