কিভাবে রুখবে নেইমারকে? জানা নেই বেলজিয়াম ডিফেন্ডারের
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৪ জুলাই ২০১৮, ১৩:০৮, আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৮, ১৩:১৯
দ্বৈত কারণে রাশান বিশ্বকাপের ‘হটকেক’ নেইমার। তার বল পায়ের ম্যাজিকে উচ্ছ্বসিত অসংখ্য ভক্ত। একইসাথে প্রতিপক্ষের ট্যাকলে তার মাটিতে শুয়ে মাত্রাতিরিক্ত অভিনয়ও কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে। যদিও আলোচনার শীর্ষে থাকা ওই ইস্যুর প্রতি নজর দেয়ার মতো অবসর পাচ্ছেন না বেলজিয়ামের ডিফেন্ডার টমাস মুনির। এই মুহূর্তে তার ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে ভর করেছে বল পায়ের নেইমারকে রুখে দেয়ার পথ খুঁজতে। ব্রাজিল সুপারস্টারকে আটকে দেয়ার কোনো উপায় জানা নেই বলেই সাফ জানিয়ে দিলেন ইউরোপীয় দলটির রক্ষণভাগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তবে সহসা হাল ছাড়তেও রাজি নন মুনির। নেইমারসহ ব্রাজিলের আক্রমণভাগের তারকাদের অকার্যকর রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বেলজীয় ডিফেন্ডার।
তার মতে, লাতিন জায়ান্টের বিপক্ষে সাফল্যের জন্য ক্যারিয়ারের শ্রেষ্ঠ নৈপুণ্য উপহার দেয়ার চ্যালেঞ্জ হাজির হয়েছে বেলজিয়ামের ফুটবলারদের সামনে।
গ্লোব ই-স্পোর্টসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মুনির বলেন, 'আমি জানি না কিভাবে নেইমারকে রুখতে হবে। তার ব্যাপারে পূর্বানুমানের ঝুঁকির ক্ষতি সামলে নেয়া অসম্ভব। সতীর্থ ও প্রতিপক্ষ হিসেবে খেলা ফুটবলারদের মধ্যে আমার দেখা শ্রেষ্ঠ সম্ভবত নেইমার। তবে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করব তাকে আটকে রাখার জন্য। একটি ডিফেন্সিভ ইউনিট হিসেবে আমাদের সামনেও সুযোগ রয়েছে নেইমারসহ ব্রাজিলের আক্রমণভাগকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার।'
সোমবার রাউন্ড অব সিক্সটিনের খেলায় জাপানের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ইতিহাসের অন্যতম কামব্যাকের দৃষ্টান্ত রচনায় শেষ আটে উঠেছে বেলজিয়াম। বিরতির পর ৫ গোলের কাসিক ফুটবলের ম্যাচটিতে তাদের জয় নিশ্চিত হয় ইনজুরি টাইমে। ২ গোলে পিছিয়ে পড়ার পরও বেলজিয়াম ৩-২ গোলে হারিয়ে দেয় জাপানকে। সব মিলিয়ে টানা চার ম্যাচ জিতেই রাশান মেগা আসরের শেষ আটের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছেন অ্যাটকিং ফুটবলনির্ভর ইউরোপীয় জায়ান্টরা। প্রতিপক্ষের জালে তারা ১২ বার বল পাঠানোর কৃতিত্বও রচনা করেছেন।
প্রতিটি পজিশনে ভারসাম্যপূর্ণ দল ব্রাজিলের বিপক্ষে সাফল্যের জন্য বেলজীয়দের সর্বোচ্চ উজাড় করে দিতে হবে বলেই বিশ্বাস করেন ক্লাব ফুটবলে নেইমারের প্যারিস সেন্ট জার্মেই সতীর্থ টমাস মুনির। কঠিন এক ম্যাচের প্রস্তুতি গ্রহণে তিনি জাতীয় দলের সতীর্থদের প্রতি আহ্বানও করেছেন।
মুনির বলেন, ‘বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দল ব্রাজিল। বিশ্বের সেরা দলের চ্যালেঞ্জ। তবে আমাদের সামনেও সুযোগ থাকছে। পারফরম্যান্সের বেলায় দল হিসেবে শতভাগ উজাড় করে দিতে হবে। মানসিক ও শারীরিকভাবে ১২০ ভাগ ঢেলে দেয়ার বিকল্প দেখছি না। আসন্ন ম্যাচটিই বেলজিয়ামের জন্য ফাইনাল। আমাদের সামর্থ্য রয়েছে ব্রাজিলকে হারিয়ে দেয়ার।’
আরো পড়ুন : ব্রাজিলের বিরুদ্ধে কেমন খেলবে বেলজিয়ামের তরুণরা?
বেলজিয়ামের বর্তমান ফুটবল দলটিকে বলা হচ্ছে দেশটির সোনালী প্রজন্ম। কিন্তু বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে কি সাফল্য পাবে তারা?
রাশিয়া বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত হয়ে যাওয়া ম্যাচগুলোর মধ্যে জাপান-বেলজিয়াম ম্যাচটিকে বলা হচ্ছে এখন পর্যন্ত সেরা ম্যাচের একটি। ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকে আবার ম্যাচে ফিরে এসে শেষ পর্যন্ত জয় করায়ত্ত করে মাঠ ছেড়েছে বেলজিয়াম। মাত্র ২১ মিনিটের মধ্যে তিন গোল করে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেছে তারা। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ প্রবল শক্তিধর ব্রাজিল।
বিশ্বকাপের সামনের যাত্রা কেমন হবে সেই বিশ্লেষণে যাওয়ার আগে একটু অতীত ঘুরে আসা যাক।
২০১৬ সালের মার্চে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ছিল বেলজিয়াম। অথচ চার মাসের মধ্যে ওয়েলসের কাছে হেরে ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয় তাদের।
তারও দুই বছর আগে বিশ্বকাপেও কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিলো দলটি সেই বিশ্বকাপে রানার আপ হওয়া আর্জেন্টিনার কাছে হেরে।
কিন্তু এবারের এই দলটি কি পারবে তাদের প্রত্যাশিত সাফল্য আনতে?
যে ১৩ জন খেলোয়াড় সোমবার খেলেছে জাপানের বিরুদ্ধে তারা আসলে ১৯৭০ সালের পর বেলজিয়ামের প্রথম দল হিসেবে এভাবে দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও জয় ছিনিয়ে আনতে পেরেছে।
রক্ষণভাগে কোমপানি, গোলরক্ষক থিবাউট কোর্টোওস, মধ্যমাঠের কেভিন ডি ব্রুয়নি এবং স্ট্রাইকার ইডেন হ্যাজার্ড প্রিমিয়ার লীগে আটবার জেতার রেকর্ড আছে।
বেলজিয়াম আত্মবিশ্বাসী এবং সেটাই তাদের শক্তি
বিশ্বকাপ ফাইনাল থেকে দুটি ম্যাচ দুরে এখন বেলজিয়াম যদিও তাকাশি ইনুইয়ের গোলে দলটি যখন জাপানের বিরুদ্ধে ২-০তে পিছিয়ে পড়লো তখন স্বপ্নটা কিছুটা ফ্যাকাসেই হয়ে পড়েছিলো তাদের জন্য।
ভেরতোঘেনের মাধ্যমে ফিরে আসার সূচনা, মারোয়ানি আনলেন সমতা আর বদলি খেলোয়াড় ন্যাসের চাদলি ৯৪ মিনিটের গোল শুধু জয় নয় বরং প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে এনেছে দলটির মধ্যে।
সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক অ্যালান শিয়েরার জাপানের সাথে দ্বিতীয়ার্ধে অসাধারণ খেলায় দারুণ প্রশংসাই করেছেন কোচ মাটিংনেজের।
"আপনাকে একটা উপায় বের করতে হতো এবং ছেলেরা সেটিই করেছে।"
এটি বেলজিয়ামের সবার জন্য
সবকিছুর পর এখন শুধু ইতিবাচক চিন্তাই করছেন দলটির কোচ। সমর্থকদের দিকেও তিনি ছড়িয়ে দিতে চান সেই বার্তা।
"এটি বেলজিয়ামের সবার জন্য। আপনাদের দারুণ সমর্থন ও আস্থার জন্য ধন্যবাদ।"
"অনেক সময় বিশ্বকাপে আপনি পারফেক্ট হতে চাইবেন। কিন্তু নক আউট ফুটবলে জয়টাই চূড়ান্ত কথা এবং এ দলটি সেই মানসিকতাই দেখিয়েছে।"
আর এ মানসিকতাই যেনো ব্রাজিলের বিরুদ্ধে মাঠে দেখাতে পারে ছেলেরা সেই প্রত্যাশাই করছেন বেলজিয়ামের প্রতিটি মানুষ।
এটি কি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্মণ?
বিশ্বকাপের এ ম্যাচটিতে জাপানের বিরুদ্ধে এভাবে বেলজিয়ামের ফিরে আসাকে দারুণ গৌরবময় মূহূর্ত বলে মানছেন অনেকে।
জার্মানি, স্পেন, আর্জেন্টিনা ও পর্তুগালের বিদায়ের পর এবারের বিশ্বকাপকে বলা হচ্ছে অনিশ্চয়তার। সাবেক চেলসি তারকা ক্রিস সাটন বলছেন, "এবারের বিশ্বকাপই সবচেয়ে অনিশ্চয়তার ও বিস্ময়ে ভরা।"
তারই প্রশ্ন, "দুই গোলে পিছিয়ে থাকার পরেও জয় নিয়ে ফিরে আসাই কি চ্যাম্পিয়নের লক্ষণ?''
ব্রাজিল ও বেলজিয়াম কেন ক্লাসিক ম্যাচ হবে?
শুক্রবারে কাজানে ব্রাজিল ও বেলজিয়ামের মধ্যকার ম্যাচটি একটি ক্লাসিক ম্যাচ হবে বলে আশা করছে সবাই।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে এই মুহূর্তে ব্রাজিল দ্বিতীয় ও বেলজিয়াম তৃতীয়।
আগে থেকেই ফেভারিট ব্রাজিল গ্রুপ পর্বে সুইজারল্যান্ডের সাথে ড্র করেছে ও কোস্টারিকার বিরুদ্ধে জয় পেয়েছে অনেক কষ্টেই কিন্তু মেক্সিকোর বিরুদ্ধে খেলায় দলটি ছিল দুর্দান্ত।
বেলজিয়াম কোচ মার্টিনেজ বলছেন, "ব্রাজিলের বিরুদ্ধে খেলা মানে মনে রাখতে হবে আপনি খেলছেন টুর্নামেন্টের সেরা দলের বিরুদ্ধে।"
আর সেটিই উপভোগ করতে হবে বলে মনে করছেন তার দলের তরুণদের জন্য।