মেসিদের জয়ের পর কেন এমন কাণ্ড করেছিলেন ম্যারাডোনা?
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৮ জুন ২০১৮, ১১:৪৬, আপডেট: ২৮ জুন ২০১৮, ১১:৫৫
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়াকে হারানোর পর গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে দুই হাতের দুই মধ্যাঙ্গুলি কেন দেখালেন কিংবদন্তির ফুটবলার দিয়োগো ম্যারাডোনা, তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
বিশ্বকাপে মঙ্গলবার আর্জেন্টিনার গুরুত্বপূর্ণ বিজয়, মেসির গোল - এসব কিছু ছাপিয়ে গেছে ম্যারাডোনার মধ্যাঙ্গুলি প্রদর্শন এবং ম্যাচের পরপরই তার হাসপাতালে ভর্তি।
ম্যাচ চলার সময় কিছুক্ষণ পরপরই ক্যামেরা চলে যাচ্ছিল ম্যারাডোনার ওপর। কারণ পুরো ম্যাচজুড়েরই সরব ছিলেন তিনি।
দুটো গোলের সময় তার উচ্ছ্বাস, শট মিস হলে তার আক্ষেপ এবং ক্রোধের ভঙ্গিমা এবং একটা সময় তার চোখ বুঁজে থাকা - খেলার সাথে সাথে বিশ্বের কোটি কোটি টিভিতে দর্শক তা দেখেছেন।
সাধারণত কাউকে অপমান করতে বা বিরক্তি প্রকাশ করতে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়। এটাকে খুবই অশিষ্ট অঙ্গভঙ্গী বলে গণ্য করা হয়।
সে কারণে ম্যাচের পরপরই পত্র-পত্রিকায়, সোশ্যাল মিডিয়াতে মানুষজন বিস্ময় এবং একইসাথে বিরক্তি প্রকাশ করছেন, কেন তার দেশে জেতার পরও, ম্যারাডোনা এই কাণ্ড করলেন?
তার মধ্যাঙ্গুলির লক্ষ্যই বা কে ছিল বা কারা?
'নিজেকে নিয়েই মশকরা করতে মজা পান তিনি'
কেন ম্যারাডোনা প্রায়ই অদ্ভুত আচরণ করেন - তা নিয়ে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছেন তার সাবেক এজেন্ট জন স্মিথ।
"১৯৮০ এবং ৯০-এর দশকে আমি যখন তার সাথে ছিলাম, তখন তার খ্যাতি যেমন ছিল, তেমনি ছিলেন প্রাণোচ্ছল।"
"কিন্তু তার সমস্যা হচ্ছে তার ঘুম হয় না, ফলে তিনি প্রচুর ঘুমের বড়ি খান। তারপর যদি সেইসাথে পেটে মদ বা অন্য কিছু (নেশার) দ্রব্য পেটে পড়ে, তখন প্রতিক্রিয়া হয়।"
"তিনি মাঝেমধ্যে নিজেকে নিয়ে মশকরা করতে উপভোগ করেন।"
"আমি বুঝতে পারি কেন মানুষ তার সমালোচনা করে, কিন্তু খুবই উষ্ণ হৃদয়ের মানুষ তিনি। অন্যকে যথেষ্ট সম্মান করেন।"
শিরোনামে বার বার
শুধু মঙ্গলবারের ম্যাচ নয়, এই বিশ্বকাপে এর আগেই অন্তত দুইবার বিতর্কিত আচরণের জন্য খবরের শিরোনাম হয়েছেন ম্যারাডোনা।
১৬ জুন আর্জেন্টিনা-আইসল্যান্ড ম্যাচে নিষেধাজ্ঞা স্বত্বেও গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে চুরুট টেনেছেন।
এরপর দক্ষিণ কোরিয়ার একজন ফ্যান তার নাম ধরে চিৎকার করে হাত নাড়লে, জবাবে ম্যারাডোনা আঙ্গুল দিয়ে নিজের চোখে টেনে ধরে সরু করে ফেলেন। এই আচরণকে অনেকেই তখন বর্ণবাদী বলে ব্যাখ্যা করেছেন।
মঙ্গলবার তার বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনকেও টুইটারে অনেকেই বর্ণবাদী বলে ব্যাখ্যা করেছেন। তাদের বক্তব্য, তার উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ার সমর্থকরা - যারা কৃষ্ণবর্ণের।
তবে তার মতো একজন খ্যাতনামা ফুটবল ব্যক্তিত্ব কীভাবে এমন "অনাকাঙ্ক্ষিত" "কুৎসিত" ভঙ্গি করতে পারেন- বহু মানুষই তা নিয়ে বিস্ময় এবং নিন্দা প্রকাশ করেছে।
ল্যাটিন আমেরিকার একটি পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছে, "ঈশ্বরের হাত থেকে লজ্জার আঙ্গুল।"
প্রোলাকটানিকা নামে একজন টুইট করেছেন, "এই লোকটিকে স্টেডিয়ামে নিষিদ্ধ করা উচিৎ, আর্জেন্টিনার জন্য তিনি একটি লজ্জা।"
সাবেক ইংলিশ ফুটবলার এবং বিবিসির ফুটবল ভাষ্যকার গ্যারি লিনেকার বলেছেন, বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন ম্যারাডোনা।
"তিনি নিজেই নিজেকে ছোটো করেছেন। সবাই জানে তিনি খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন, কিন্তু তাই বলে এতটা?...এমন করলে হাসির পাত্র হয়ে উঠবেন তিনি।"
আর্জেন্টিনা দল কী বলছে ম্যারাডোনার এই কাণ্ড নিয়ে? তা এখনো শোনা যায়নি।
তবে ২০১২ সালে এক সাক্ষাৎকারে মেসি বলেছিলেন, ২০১০ সাল থেকে তার সাথে ম্যারাডোনার কোনো কথা হয়নি।
"তার যেমন নিজস্ব জীবন রয়েছে, আমারও তেমন রয়েছে। যেহেতু আমরা দু'জন দু'জনের সাথে কথা বলি না, সুতরাং আমাদের সম্পর্ক ভালো।"
আর্জেন্টিনা দল এবং ফ্যানরা আশা করছে ফ্রান্সের সাথে নক আউট ম্যাচের দিন ম্যারাডোনা যেন আবার দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরানোর মত আচরণ না করেন।
আরো পড়ুন : শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচের পর হাসপাতালে ম্যারাডোনা
দ্বিতীয়ার্থে দম বন্ধ হওয়া একেকটা মুহূর্ত। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি আর্জেন্টিনা ভক্তের অবস্থা তখন একই। মাঠে মেসিরা সর্বোচ্চ চেষ্টায় প্রতিপক্ষের জালে গোল ছুঁড়তে। আর ভক্ত-সমর্থকরা প্রার্থনায়রত। অলৌকিক কিছু হোক! আর্জেন্টিনা নক আউটে পৌঁছাক। এমন আবেগময় মুহূর্তে গ্যালারিতে কিংবদন্তি ম্যারাডোনা। শ্বাসরুদ্ধকর এই ম্যাচের পর হাসাপাতালে যেতে হয়েছে তাকে।
কাল গ্যালারিতে উত্তরসূরিদের পায়ে পায়ে প্রতিক্রিয়া ঝরছিল ম্যারাডোনার। গোল মিস হলেই মুখ ঢেকে হতাশ হয়ে বসে পড়ছিলেন। আবার বল নিয়ে মেসি ছুটলেই আনন্দে চোখ চিকচিক করছিল তার। শেষ পর্যন্ত তার মুখে হাসিই ছিল স্থায়ী। ২-১ গোলে নাইজেরিয়াকে হারিয়ে নক আউটে পৌঁছেছে আর্জেন্টিনা। ফুটবলবিশ্বকে আনন্দের জোয়ারে ভাসিয়েছে মেসিরা।
এরপর নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি ম্যারাডোনা। আবেগের বন্যায় ভেসেছেন তিনি। শরীরটা তেমন ভালো ছিল না আগে থেকেই। প্রথমার্ধে নাকি ঘুমিয়েও পড়েছিলেন তিনি। তবে সেটা কিছু সময়ের জন্য। এরপর আবারো দলকে গ্যারারি থেকে উৎসাহ দিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
কিন্তু ম্যাচ শেষে শরীরের শক্তি হয়ত নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছিল। অন্যের সাহায্য নিয়ে গ্যালারি ছেড়েছেন তিনি। এ সময় স্টেডিয়ামের মধ্যে একটি চেয়ারের ওপর পরেও গিয়েছিলেন। পরে মাঠের প্যারামেডিকেল কর্মীরা প্রেশার মেপে ম্যারাডোনাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে পাঠান।
তবে চিন্তার কিছু নেই। ম্যারাডোনা এখন সুস্থ আছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেন্ডেন্ট এমনটাই জানিয়েছে।
আর্জেন্টিনার স্থানীয় পত্রিকা লা নাসিওনের বরাত দিয়ে বলা হয়, ম্যারাডোনা লো প্রেশারে ভুগছিলেন। স্টেডিয়ামে তার প্রেশার মাপার পর হাসাতালে নেয়া হয়। সেখানে থেকে পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। (২৭ জুন, ২০১৮ প্রকাশিত সংবাদ)