১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ৯ রজব ১৪৪৬
`

আতঙ্কে জার্মানি, ফুরফুরে মেজাজে সুইডেন

বিশ্বকাপ
জয়োল্লাস সুইডেনের (বামে), হতাশ জার্মানি (ডানে) - সংগৃহীত

অ্যাসিড টেস্টের মুখে জার্মানি। চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের লজ্জা এড়ানোর কঠিন চ্যালেঞ্জ দলটির ফুটবলারদের সামনে। ফিফার সর্বোচ্চ আসরের সাম্প্রতিক অতীত তাদের মানসিকভাবেও পিছিয়ে রেখেছে। অজানা আশঙ্কা দানা বেঁধেছে ভক্ত হৃদয়ে। বিশ্বকাপের সর্বশেষ দুই চ্যাম্পিয়ন দলকেই সইতে হতে পারে পরবর্তী টুর্নামেন্টের প্রথম রাউন্ড থেকে ছিটকে পড়ার যন্ত্রণা।

রাশান টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে মেক্সিকোর কাছে ১-০ গোলের হার জার্মানি শিবিরেও হাজির ওই লজ্জার ফাঁদে পা রাখার শঙ্কা। তবে চূড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারণে পুরোপুরি প্রভাব রাখার সব সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি জার্মানদের। হাতে রয়েছে সহজ বিকল্প। জিততেই হবে গ্রুপের দ্বিতীয় খেলায়। কিন্তু কাজটি সহজ নয়।

উপরন্তু তাদের প্রতিপক্ষ সুইডেন রয়েছে ফুরফুরে মেজাজে। এফ গ্রুপের হাইভোল্টেজ খেলায় আজ সোচি অলিম্পিক স্টেডিয়ামে দলটি মুখোমুখি হচ্ছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানির। টুর্নামেন্টের অল-ইউরোপীয় ম্যাচে হার কিংবা ড্র চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের এগিয়ে দেবে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়ের রেসে।

আফ্রিকা ও ব্রাজিল বিশ্বকাপ দুঃস্বপ্ন হিসেবেই উদ্ভাসিত হয় ইতালি ও স্পেনের জন্য। ২০০৬ সালের চ্যাম্পিয়ন ইতালি বিদায় নেয় ২০১০ সালের মেগা আসরের নকআউটের আগে। ডাবল ইউরো ও আফ্রিকা বিশ্বকাপ জয়ী স্পেনকেও ওই একই ভাগ্য বরণ করতে হয় গতবারের ব্রাজিল বিশ্বকাপে। গ্রুপের উদ্বোধনী খেলায় ডাচদের কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার ধাক্কা আর সামলে নিতে পারেনি স্প্যানিশরা। সর্বশেষ ওই দুই চ্যাম্পিয়নের যন্ত্রণাকাতর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির শঙ্কায় পড়েছে জার্মানরাও। তবে আজকের ম্যাচটির জয়ই তাদের বের করে আনতে পারে বাড়তি স্নায়ুচাপের ফাঁদ থেকে। ফলে সুইডদের বিপক্ষে মাস্ট উইন ম্যাচ জার্মানির! প্রথম ম্যাচের হারের ব্যর্থতা পেছনে ফেলতে মুখিয়ে আছেন দলটির ফুটবলারেরা। অভিজ্ঞদের অনেকেই এগিয়ে এসেছেন অপেক্ষাকৃত তরুণদের সাথে সমন্বয় সাধনে। সুইডদের হারানোর ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী টিম জার্মানি। ড্রেসিংরুমের আবহ পাল্টে গেছে বলেই দাবি করেছেন সিনিয়র মিডফিল্ডার ম্যাট হুমেলস।

বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের তারকা হুমেলস বলেন, ‘প্রথম ম্যাচে হারের ধাক্কা অনেকটাই সামলে নিতে পেরেছেন ফুটবলারেরা। প্রত্যেকে প্রস্তুত জার্মানির বিশ্বকাপ মিশন সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে। মেক্সিকোর বিপক্ষে আমাদের ভুলগুলো নিয়ে ইতোমধ্যেই আলোচনা হয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করেছেন কোচ জোয়াচিম লো। আমরা জানি সুইডদের বিপক্ষে ম্যাচটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিনিয়র ফুটবলারেরা দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। আমি নিশ্চিত পারফরম্যান্সের পরিবর্তন আসবে।’

অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশেলে গঠিত জার্মানদের প্রথম ম্যাচের নৈপুণ্যে সমন্বয়ের স্পষ্ট অভাব দেখা মিলেছে। সুইডদের বিপক্ষে খেলার আগে ওই বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে ব্যাপকভিত্তিক আলোচনা করেছে দলটির ফুটবলারেরা। তাদের প্রত্যাশায়ও রয়েছে উন্নতির। তবে পূর্ণ তিন পয়েন্ট অর্জনে মাঠে পারফরম করার কোনো বিকল্প নেই জার্মানদের। কোচ লো প্রথম ম্যাচের একাদশই বেছে নিতে পারেন সুইডদের বিপক্ষে।

এদিকে ফুরফুরে মেজাজে সুইডেন। ইতালিকে ছিটকে ফেলে রাশান বিশ্বকাপের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা দলটি নকআউটের রেসেও এগিয়ে গেছে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ে। সম্পূর্ণ চাপ মুক্ত থেকেই সুইড ফুটবলারেরা মাঠে নামছেন বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মোকাবেলায়। দ্বিতীয় খেলায় ড্রও হবে তাদের জন্য দারুণ ফলাফল। তবে জিততেই মাঠে নামবে সুইডেন। ২০০২ সালের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে প্রত্যাবর্তন স্মরণীয় করে রাখার যোগ্যতা বাছাই পর্বেই প্রমাণ করেছে দলটি। ফ্রান্সের গ্রুপের রানার্স-আপ হলেও আট ম্যাচে করেছে সর্বোচ্চ ২৬ গোল। জিতেছে ফ্রান্সের বিপক্ষে।

 

আরো পড়ুন : বেলজিয়াম বনাম তিউনিসিয়া : আজ আলো ছড়াবেন যারা

এডেন হ্যাজার্ড এই বিশ্বকাপে নিজেদের পারফরম্যান্সকে বেশ ভালোভাবে সমর্থন করছেন এবং তার মতে, এই বিশ্বকাপ হবে তার এবং রেড ডেভিল তথা বেলজিয়ামের বিশ্বকাপ। সোমবার গ্রুপ ‘জি’ থেকে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হ্যাজার্ডের দল মধ্য আমেরিকার দেশ পানামাকে ৩-০ গোলে পরাজিত করে। তবুও তাদেরকে সেই ম্যাচ নিয়ে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। কেন আরো আক্রমণাত্মক নয় এবং কেন প্রথমার্ধ গোলশূন্য ছিল সেটিই ছিল তাদের বিপক্ষে সমালোচনা। চেলসির এই আক্রমণভাগের তারকা নিজেদের সামর্থ্য, বাস্তবতা অনুযায়ী পানামার বিপক্ষে মেলে ধরতে পারেননি কিন্তু তিউনিসিয়ার বিপক্ষে জয় ছাড়া অন্য কোন ফলাফল পেলে সেটা বাস্তবতার বাইরেই হবে। যদিও শনিবার আফ্রিকান দেশ তিউনিসিয়ার বিপক্ষে ভালো পারফরম্যান্স করারই আশা করছেন হ্যাজার্ড।

তিনি বলেন, ভক্ত-সমর্থকেরা ও বিশেষজ্ঞরা অনেক কথাই বলতে পারে কারণ তারা মাঠের বাইরে থাকে। মাঠের ভেতরে মূল কাজটি করতে হয় আমাদেরকে। আমরা জানি বলা এবং করার মাঝে অনেক ফারাক। শুধু রাশিয়া বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচটি ছাড়া যেখানে স্বাগতিক রাশিয়া এশিয়ার সৌদি আরবের বিপক্ষে ৫-০ গোলে জয়ী হয়েছে না হলে আমার দেখা মতে, এই বিশ্বকাপের বেশির ভাগ ম্যাচেই জয়ী দল ১ বা ২ গোলের ব্যবধানে জয় পাচ্ছে।

হ্যাজার্ড আরো বলেন, পানামার বিপক্ষে আমরা ৩-০ গোলে জয় পেয়েছি এই ফল নিয়ে সমালোচনা করার বেশি কিছু আমি দেখছি না। তিনি আরো বলেন, মানুষ সবসময় বেলজিয়াম থেকে একটু বেশিই আশা করে। আমরা যেন সবসময় নিজেদের সেরাটাই দিয়ে থাকি এবং আমাদেরকে ম্যাচের ৮০ বা ৯০ শতাংশ পজিশন নিয়ে খেলি এবং ৫০ শতাংশই গোলে শট নিয়ে থাকি এবং সেখান ৪০ ভাগই যেন গোল হয়।

তিনি আরো যোগ করেন বিষয়টি সবসময় এ পর্যায়ে থাকে না এবং মাঝে মধ্যে আপনাকে শক্ত প্রতিপক্ষ ও শক্ত ম্যাচের মুখোমুখি হতে হয় এবং আপনি মাত্র ১-০ গোলের ব্যবধানে জয়ী হবেন। গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটি হলো আমরা আমাদের ম্যাচটিতে জয়লাভ করেছি এবং আমাদের দলের বেশ প্রতিভা ও শক্তি রয়েছে কিন্তু এটি আমার কাছে সাধারণই মনে হয় যে মানুষ আপনার সমালোচনা করবেই। রাশিয়া বিশ্বকাপে রেড ডেভিল বা বেলজিয়ামের সেরা তারকা এডেন হ্যাজার্ড। তিনি নিজেও বিশ্বাস করেন রাশিয়া বিশ্বকাপ তার প্রতিভা প্রকাশের জন্য উপযুক্ত মঞ্চ।

২৭ বছর বয়স্ক চেলসির এ আক্রমণভাগের তারকা মনে করেন সব উপাদান আস্তে আস্তে একত্র হচ্ছে এবং তিনি এ বিশ্বকাপে ভালো করবেন। বেলজিয়াম ডিফেন্ডার টমাস ভার্মুলেনকে ফিট মনে হচ্ছে এবং তিনি তিউনিসিয়ার বিপক্ষে না খেললেও গ্রুপের শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবেন। থাই ইনজুরি সত্ত্বেও এই বার্সেলোনার ফুটবলারকে দলে রেখেছেন কোচ রবার্ট মার্টিনেজ। রবার্ট মার্টিনেজ জানিয়েছেন তার দলের খেলোয়াড়দের মাঝে বিশ্বাস আছে এবং ইচ্ছাও আছে ভালো করার। প্রত্যেক ফুটবলার একে অপরকে বেশ ভালো বুঝতে পারে। অন্য দিকে তিউনিসিয়া তাদের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হ্যারি কেনের গোলে ২-১ গোলে পরাজিত হয় এবং ভলগগ্রাদের সেই ম্যাচে তারা থ্রি লায়ন্সদের বিপক্ষে বেশ ভালো লড়াই করেছে।

বেলজিয়ামের বিপক্ষে একটি পরিবর্তন করতেই হবে তিউনিসিয়াকে তাদের নিয়মিত গোলরক্ষক মোয়েজ হোসেন কাঁধে আঘাত পাওয়া এবং অপারেশ করার জন্য দেশে চলে যাবে তার জায়গা অন্য কাউকে নেবে। তাদের মধ্যমাঠের খেলোয়াড় ওয়াহাব খাজরি বেশ প্রতিভাবান ও ভালোভাবেই খেলা গড়ে দিতে এবং আক্রমণভাগে বল জোগান দিতে পারেন।

বেলজিয়ামের হয়ে এডেন হ্যাজার্ড ছাড়াও দৃষ্টি থাকবে পানামার বিপক্ষে দুই গোল করা ও ম্যান ইউ তারকা রোমেলু লুকাকুর দিকে। আর একটি মাত্র গোল লুকাকুকে বিশ্ব ফুটবলের বড় আসরে সবচেয়ে বেশি গোলদাতার সম্মান এনে দেবে, যা এখন জেন সিউলিমান্সের দখলে।

তিউনিসিয়ার হয়ে আনিচ বাদরিও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বেশ ভালো খেলেছেন তাই বেলজিয়ামকে এই তিউনিসিয়ান মিডফিল্ডারকে নিয়েও সতর্ক থাকতে হবে। এই দুই দেশ একে অপরের বিপক্ষে তিনবার মুখোমুখি হয়েছে দুই দেশই একটি করে জয় পেয়েছে এবং একটি ম্যাচ ড্র হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement