১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

প্রথমবারের মতো আইডি দেখিয়ে ভোট দিচ্ছেন যুক্তরাজ্যের ভোটাররা

প্রথমবারের মতো আইডি দেখিয়ে ভোট দিচ্ছেন যুক্তরাজ্যের ভোটাররা - ছবি : সংগৃহীত

ছয় সপ্তাহের নির্বাচনী প্রচারণার পর শুরু হয়েছে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের ৪০ হাজার কেন্দ্রে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিচ্ছেন। এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দেয়ার আগে ফটো আইডি বা শনাক্তকরণ ছবি দেখাতে হবে ভোটারদের।

১৯৪৫ সালের পর থেকে যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সাধারণ নির্বাচন।

বৃহস্পতিবার লন্ডন সময় সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় বিদ্যালয়, কমিউনিটি হলের মতো ভবনগুলোকে পোলিং স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

হাউজ অব কমনের ৬৫০ সদস্যকে নির্বাচনের জন্য প্রায় চার কোটি ৬০ লাখ ভোটার রয়েছে। প্রতিটি জায়গার ফলাফল রাতে এবং শুক্রবার সকালে ঘোষণা করা হবে।

সরকার গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্ধেকের বেশি, অর্থাৎ অন্তত ৩২৬টি আসনে জয় পেতে হবে।

প্রথমবারের মতো ফটো আইডির ব্যবহার
নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন ১৮ বছরের ঊর্ধ্বের এমন নাগরিকরা যুক্তরাজ্যের এবারের নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। গত ১৮ জুন এই নিবন্ধনের সময়সীমা শেষ হয়েছে।

২০২২ সালের এক আইনি পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশটির বাইরে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে অবস্থান করা প্রায় ২০ লাখ ব্রিটিশ নাগরিকও ভোটের জন্য নিবন্ধন করতে পেরেছে।

এবারের নির্বাচনেই প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ডের ভোটারদের ভোট দেয়ার জন্য ফটো আইডি বা শনাক্তকরণ ছবি দেখাতে হবে।

এক্ষেত্রে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বয়স্ক বা অক্ষম ব্যক্তির বাস পাস এবং ওয়েস্টার ৬০+ কার্ডসহ মোট ২২ ধরনের আইডি কার্ড গ্রহণযোগ্য ধরা হচ্ছে।

অবশ্য উত্তর আয়ারল্যান্ডে ২০০৩ সাল থেকেই ভোট দেয়ার জন্য আইডি দেখাতে হয়। সেখানে নয় ধরনের আইডি কার্ড দেখানো যায়।

অন্যদিকে, যারা সঠিক আইডি ছাড়া ভোট দেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন, তারা ভোটার অথরিটি সার্টিফিকেট নামে বিনামূল্যের একটি নথির জন্য আবেদনের সুযোগ পেয়েছেন।

ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসের যেসব ভোটারের আইডি কার্ড হারিয়ে গেছে বা চুরি হয়েছে তারা ভোটের দিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত জরুরি প্রক্সি ভোটের জন্য আবেদন করতে পারবেন, যেন অন্য কোনো নিবন্ধিত ভোটার তাদের পক্ষে ভোট দিতে পারে।

অনেকেই ইতোমধ্যেই ডাকযোগে ভোট দিয়ে নিজ নির্বাচনী এলাকার জন্য নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন।

যারা পোস্টাল ভোটের জন্য আবেদন করেছেন, কিন্তু এখনো তা ফেরত দিতে পারেননি তারা রাত ১০টায় ভোট শেষ হওয়ার সময়ের মধ্যে তাদের স্থানীয় ভোটকেন্দ্রে তা হস্তান্তর করতে পারবেন।

এছাড়াও অফিস চলাকালীন স্থানীয় কাউন্সিল অফিসেও পোস্টাল ভোট জমা দেয়া যাবে।

যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনের খুঁটিনাটি বিষয়
যুক্তরাজ্যে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ হয় পাঁচ বছরের। ২০১৯ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল কনজারভেটিভ পার্টি।

নিয়মানুযায়ী পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। অনেকে শরতে নির্বাচন হতে পারে এমন অনুমান করলেও বাস্তবে তা হয়নি।

যুক্তরাজ্য ৬৫০টি নির্বাচনি কেন্দ্র বা এলাকায় বিভক্ত। এই প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকার ভোটাররা একজন সাংসদ নির্বাচন করেন, যারা তাদের হয়ে ‘হাউস অফ কমন্স’-এ প্রতিনিধিত্ব করেন।

নির্বাচনী ময়দানে লড়াই করতে নামা প্রার্থীদের মধ্যে বেশিভাগ কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি। তবে কেউ কেউ আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও ভোটে লড়েন।

মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কারা?
বর্তমানে যে দু’দল সবচেয়ে বেশি ভোট পেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে তারা হলো ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ও লেবার পার্টি।

৪৪ বছরের ঋষি সুনাক কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০২২ সালে যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী হন তখন তার বয়স ছিল ৪২। আধুনিক সময়ে ব্রিটেনের সবচেয়ে কম বয়সের প্রধানমন্ত্রী সুনাক।

শুধু তাই নয়, তার হাত ধরেই এই প্রথমবার কোনো ব্রিটিশ-ভারতীয় ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।

অন্যদিকে, লেবার পার্টির নেতৃত্বে রয়েছেন স্যার কিয়ের স্টারমার। তার বয়স ৬১ বছর।

২০২০ সালে জেরেমি করবিনের পর দলের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য নির্বাচিত হন তিনি। এর আগে ‘ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস’-এর প্রধান ছিলেন স্টারমার। পাবলিক প্রসিকিউশনের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

ভোটের ফল ঘোষণার পরের পদক্ষেপ
ভোট গণনার পর যে দলের কাছে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক এমপি (সাংসদ) রয়েছে সেই দলের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার এবং সরকার গঠন করার জন্য আহ্বান জানান রাজা।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংসদ থাকা দলের নেতাই হন সংসদে বিরোধী দলনেতা।

যদি কোনো দলই সাংসদের নিরিখে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায় তাহলে সেই দল নিজেদের সাংসদদের ওপর নির্ভর করে আইন পাশ করতে পারে না। এর ফলে ‘হাং পার্লামেন্ট’ বা ত্রিশঙ্কু অবস্থার সৃষ্টি হয়।

এই পরিস্থিতিতে বৃহত্তম দল সিদ্ধান্ত নিতে পারে অন্য দলের সাথে মিলে জোট সরকার গঠনের।

অথবা সংখ্যালঘু সরকার হিসেবে কাজ করতে পারে। কিন্তু ওই পরিস্থিতিতে কোনো আইন পাশ করার সময় তাদের অন্য দলের ভোটের ওপর নির্ভর করে থাকতে হবে।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement