ইউক্রেন শান্তি শীর্ষ বৈঠকের সমর্থন চাইলেন জেলেনস্কি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শনিবার সিঙ্গাপুরে শাংরি-লা সংলাপ শীর্ষক নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। সেখানে তিনি এ মাসের আরো পরের দিকে সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় ইউক্রেন শান্তি শীর্ষ সম্মেলনের পক্ষে এশিয়া-প্রশান্তমহাসাগরীয় দেশগুলো সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করবেন। সুইজারল্যান্ডের ওই শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেন থেকে রুশ সৈন্য প্রত্যাহার এবং ইউক্রেনের ১৯৯১ সালের সীমান্ত পুনর্বহাল করার ওপর আলোকপাত করা হবে।

রাশিয়ার কথা উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) জেলেনস্কি লেখেন, ‘বিশ্বের বৃহত্তম দেশটি যখন স্বীকৃত সীমান্ত, আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসঙ্ঘের সনদকে অবমাননা করে তখন বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা অসম্ভব।’

যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রের বর্তমান অবস্থা আলোচনার জন্য এবং চলমান রুশ আগ্রাসনের মুখে ইউক্রনের প্রয়োজনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরতে জেলেনস্কি এবং ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সাথে বৈঠক করবেন।

এই অনুষ্ঠানের আয়োজক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ নিণিয়েছে, জেলেনস্কি রোববার বিশ্ব শান্তি ও আঞ্চলিক স্ট্যাবিলিটি-বিষয়ক আলোচনা ফোরামে অংশ নেবেন।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আক্রমণের পর এটি হচ্ছে জেলেনস্কির দ্বিতীয়বার এশিয়া সফর। ওই আক্রমণের পর থেকে রাশিয়া শাংগ্রি-লা সংলাপে যোগ দেয়নি।

পাশ্চাত্যের অস্ত্রের ব্যবহার
রাশিয়ার অভ্যন্তরে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া অস্ত্র ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আংশিকভাবে প্রত্যাহারের পর সিঙ্গাপুরে এই সফরের কথা ঘোষণা করা হয়। জেলেনস্কি এই সিদ্ধান্তকে ‘এক কদম এগিয়ে যাওয়া’ বলে এর প্রশংসা করেন।

শুক্রবার জার্মানিও তাদের দেয়া অস্ত্র রাশিয়ার অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত হানতে ইউক্রেনকে অনুমতি দিয়েছে।

রুশ অঞ্চলের ভেতরে পাশ্চাত্যের দেয়া অস্ত্র ইউক্রেনকে ব্যবহার করতে দেয়ার পক্ষে নেটো জোটের মধ্যে সমর্থন বৃদ্ধি পাচ্ছে- তবে ইতালি এই পদক্ষেপের বিরোধীতা করছে।

ইটালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি ‘তাড়াহুড়ো’ করে নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে দেন।

এজিআই ও এএনএসএ সংবাদ সংস্থাগুলোর মতে, তিনি ইতালির রাপালোতে এক বৈঠকে বলেন, ‘এখন খুব স্পর্শকাতর সময় যাচ্ছে, আমাদের কোনো ভুল পদক্ষেপ নেয়া উচিত নয় এবং দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নেয়া এবং ঘোষণা করা আমাদের পরিহার করতে হবে।’

এজিআই জানায় যে তাজানি আরো বলেন, ‘ইতালি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আরো সাহায্য পাঠাবে।’ তবে তিনি আবারো বলেন, ‘ইউক্রেনে লড়াই করতে আমরা একটি সৈন্যও পাঠাব না, কারণ আমরা রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ করছি না।’

পাশ্চাত্যের দেশগুলো যদি ইউক্রেনকে এমন অনুমোদন দেয়, তা হলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এর ‘ভয়াবহ পরিণতি’ সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে দেন।

রাশিয়ার আক্রমণ
ইতোমধ্যে রাতের বেলায় রাশিয়া ইউক্রেনের দু’টি বৈদ্যুতিক গ্রিডকে লক্ষ্য করে ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করেছে এবং এতে পুরো দেশজুড়ে অন্তত ১৯ জন আহত হয়েছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলছে, ১ জুন রাতে পুরো দেশে নিক্ষিপ্ত ৫৩টি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ৩৫টিকে এবং ৪৭টি ড্রোনের মধ্যে ৪৬টিকে ভূ-পাতিত করেছে।

খারকিভ অঞ্চলের গভর্নর ওলেহ সিনিয়েহুবভ বলেন, দু’টি বাড়ির খুব কাছে আক্রমণে আশ্রয়গ্রহণকারী আটজন শিশুসহ ১২ জন আহত হলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ছিল ইউক্রেনের বৃহত্তম ব্যক্তিমালিকানাধীন জ্বালানি কোম্পানি ডিটিইকের ওপর গত আড়াই মাসে ষষ্ঠ আক্রমণ। তাদের দ ‘টি জ্বালানি স্থাপনার প্রচণ্ড ক্ষতি হয়েছে।

এই সব আক্রমণের কারণে গোটা পুরো পালাক্রমে ব্ল্যাক আউট চালু করতে বাধ্য হয় এবং রাশিয়ার হামলা প্রতিহত করতে আরো বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রদান করতে মিত্রদের প্রতি জেলেনস্কি আবেদন জানান।

ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ
মস্কোর আরোপিত নেতা ডেনিস পুশিলিনের মতে, রাশিয়ার অধিকৃত ডনেটস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের গোলাবর্ষণে পাঁচজন অসামরিক লোক নিহত এবং আরো তিনজন আহত হয়।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, তারা রাশিয়ার বেলগ্রোড অঞ্চলে ইউক্রনের দু’টি ড্রোনকে গুলি করে ভূ-পাতিত করে।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা