২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সৌরশক্তি খাতে আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে চায় জার্মানি

সৌরশক্তি খাতে আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে চায় জার্মানি - সংগৃহীত

জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা ও জ্বালানি সঙ্কট কমাতে সৌরশক্তি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ ভর্তুকি বা ছাড় দিয়ে সেই শিল্পখাতকে যেভাবে চাঙ্গা করছে, জার্মানি তথা ইউরোপ সেই দৌড়ে অনেক পিছিয়ে পড়েছে।

সৌর শিল্পখাতের বাজার দখল করতে গোটা বিশ্বে যুদ্ধ চলছে। এক্ষেত্রে সরকারি ভর্তুকি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

টোনি নিকেশ অতীতে বেকারিতে রুটি তৈরি করতেন। কম সময়ে দীর্ঘ প্রশিক্ষণের কোর্স করে এখন তিনি পেশা বদলে সোলার পাওয়ার সিস্টেম বসান। এতে ভালো আয় হয়, অর্ডারেরও অভাব নেই।

বহুকাল পর সোলার প্যানেলের দাম কমে গেছে। অনেক করের বোঝা দূর হয়েছে। যেমন ভ্যাট এবং বিদ্যুদের ওপর আয়কর দিতে হচ্ছে না। নতুন ভবনের পরিকল্পনা সময়ে সৌরশক্তির বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত।

নিকেশ মনে করেন, ‘আকাশছোঁয়া বিদ্যুতের মাশুলের কারণে মানুষ পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি চায়। তারা রিনিউয়েবেল এনার্জি ও সৌরশক্তি চায়, যে ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠছে। মানুষ কিনছে, ফলে এই প্রবণতা চলতেই থাকবে।’

গত বছরে জার্মানিতে সবচেয়ে বেশি সোলার সিস্টেম বসানো হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশটিতে বিদ্যুতের চাহিদার প্রায় ১২ শতাংশ সৌরশক্তি জোগান দিচ্ছে।

গ্রাহকরা সেই প্রবণতার ফলে উপকৃত হচ্ছেন বটে, কিন্তু একটা বিষয়ে দ্বন্দ্ব থেকে যাচ্ছে। প্রায় ৯০ শতাংশ সোলার প্যানেল চীন থেকে আমদানি করা হচ্ছে। এত পরিমাণ সোলার প্যানেল চীন থেকে এলে জানতে হবে সেই পণ্য কতটা টেকসই। টিইউভি রাইনল্যান্ড পরীক্ষা করে দেখেছে, যে চীনের পণ্যগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের ন্যূনতম প্রযুক্তিগত শর্ত পূরণ করে।

প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি লুকাস ইয়াকিশ বলেন, ‘প্যানেলগুলো দূর প্রাচ্যের কোনো দেশ, ইউরোপ বা আমেরিকা মহাদেশ থেকে আসছে কিনা, তাতে কিছুই এসে যায় না।’

চীনের কোম্পানিগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় পাল্লা দিয়ে জার্মানিতে হাতে গোনা যে কয়েকটি কোম্পানি সৌর প্যানেল উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে, মায়ার-বুয়র্গার সেগুলোর অন্যতম।

কোম্পানির প্রোডাকশন ম্যানেজার ইয়খেন ফ্রিচের মতে, কারখানার সর্বাধুনিক প্রযুক্তিই সেই সাফল্যের কারণ। তবে সেই শিল্পখাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি মূল বিষয় নয়, বরং কোন দেশ সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেয়, সেটাই বিবেচ্য। এই মুহূর্তে চীনই তালিকার শীর্ষে রয়েছে।

ফ্রিচে বলেন, ‘এর অর্থ, এশিয়া বা অন্য কোথাও এই কারখানার তুলনায় সস্তায় উৎপাদন করা সম্ভব নয়। ভর্তুকি কৃত্রিমভাবে বাজার বিকৃত করে। ফলে আমরা অর্থনৈতিক মাপকাঠি অনুযায়ী তত ভালোভাবে বিনিয়োগ কার্যকর করতে পারি না।’

মায়ার-বুয়র্গার কোম্পানি বাস্তবতার সেই পরিণতির ধাক্কায় জার্মানিতে একটি কারখানা বন্ধ করতে চাইছে। সেখানে ৫০০ কর্মী কাজ করেন। সেই কোম্পানিই আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ শতাংশ ভর্তুকি পেয়ে নতুন এক উৎপাদন কেন্দ্র খুলছে। এর ফলে জার্মানিতে সোলার প্যানেল উৎপাদন আরো কমে যাবে।

রেগেন্সবুর্গ শহরের এনেরিক্স কোম্পানি শুধুমাত্র জার্মানিতে তৈরি সোলার প্যানেল বসায়। সেই কোম্পানি চীনা পণ্য থেকে পুরোপুরি সরে আসতে চায়। দেশে তৈরি পণ্য ইনস্টলেশনের ক্ষেত্রে সরকারি ভর্তুকি দেয়া উচিত বলে এনেরিক্স মনে করে।

কোম্পানির কর্ণধার পেটার ক্নুট মনে করেন, ‘আমরা দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে জার্মানিতে উৎপাদন করতে চাইলে আমাদের জার্মান পণ্য বিক্রিও করতে হবে। শুধু বাণিজ্য-ভিত্তিক দেশ হওয়া স্বল্পমেয়াদী ভিত্তির চিন্তাভাবনার পরিচয়। আমার মতে, শুধু বিদেশী পণ্যের ওপর ভিত্তি করে জ্বালানির ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনাও দূরদর্শীতার অভাবের পরিচয়।’

তাহলে কী করা যেতে পারে? একদিকে রয়েছে চীনের বিশাল উৎপাদন ক্ষমতা ও ‘প্রাইস ডাম্পিং’। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রও করের ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে কোম্পানিগুলোকে প্রলোভন দেখাচ্ছে।

জার্মান সৌরশিল্প সঙ্ঘের কার্স্টেন ক্যোর্নিশ বলেন, ‘বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা এবং সে ধরনের আরো বিচ্ছিন্নতাবাদী পদক্ষেপ আমাদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার যোগ্য কারখানা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে না। তার বদলে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার যোগ্য ও অনেক বড় সোলার কারখানার স্টার্টআপ পর্যায়ে রাজনৈতিক সহায়তার প্রয়োজন।’

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা জার্মান সরকারের কাছ থেকে করের অর্থ না পেলে ইউরোপীয় ও জার্মান সৌর শিল্পখাত অবশ্যই আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। গোটা বিশ্বে সৌরশক্তির জন্য প্রতিযোগিতার পরবর্তী দৌড় শুরু হচ্ছে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement