ক্যান্সার শনাক্তের পর প্রথমবার জনসম্মুখে রাজা চার্লস
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০
ক্যান্সার শনাক্তের পর রাজা চার্লসকে দেখতে ডিউক অফ সাসেক্স যুক্তরাজ্যে আসার পর, প্রথমবারের মতো রাজাকে জনসম্মুখে দেখা গেছে।
লন্ডনের ক্ল্যারেন্স হাউজ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় গাড়িতে রাজা ও রানীকে দেখা যায়। তারা এখন নরফোকের সান্ড্রিংঅ্যামে।
প্রিন্স হ্যারি যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাতের ফ্লাইট নিয়ে লন্ডন এসে পৌঁছেছেন।
বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে সোমবার জানানো হয়, ৭৫ বছর বয়সী রাজার এক ধরনের ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে এবং তিনি চিকিৎসাকালীন সময়ে জনসম্মুখে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকবেন।
রাজার ক্যান্সার শনাক্তের বিষয়ে প্রাসাদ থেকে অল্প তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, শুধু নিশ্চিত করা হয়েছে প্রোস্টেটের সাম্প্রতিক চিকিৎসা করানোর সময় এ রোগ শনাক্ত হয়েছে।
ক্যান্সার ঘোষণার আগেই তার দুই ছেলেকে এটি শনাক্তের বিষয়ে জানানো হয়।
মঙ্গলবার লন্ডনের ক্ল্যারেন্স হাউজ ছেড়ে যাওয়ার সময় রাজা ও রানী হেসে হাত নাড়িয়েছিলেন।
সান্ড্রিংঅ্যামের উদ্দেশে রাজার ফ্লাইট ছেড়ে যাওয়ার আগে চার্লস ও প্রিন্স হ্যারি ৪৫ মিনিটের মতো সাক্ষাৎ করেছেন তার সাথে।
ডাচেস অব সাসেক্স যুক্তরাষ্ট্রে তাদের দুই ছোট সন্তানের সাথে থাকবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
প্রিন্স হ্যারির যুক্তরাজ্য সফরের সময় তার ভাই প্রিন্স অফ ওয়েলসের সাথে দেখা করার কোনো পরিকল্পনা নেই বলেই মনে হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এর আগে বিবিসি রেডিও ফাইভ-এর লাইভে বলেছিলেন যে রাজার ক্যান্সার অ্যাডভান্স স্টেজে বা অগ্রগামী ধাপেই ধরা পড়েছে এবং তিনি এখনো রাজার সাথে নিয়মিত যোগাযোগে আছেন।
তিনি জানান, রাজার চিকিৎসার সময়ও তাদের সাপ্তাহিক সাক্ষাতের কাজ চলতে থাকবে।
প্রিন্স হ্যারি যে- গতিতে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে লন্ডনে তার বাবার সাথে দেখা করার জন্য তাড়াহুড়ো করেছেন তা উল্লেখযোগ্য বলে মনে হচ্ছে।
এই পরিবারের অন্তরঙ্গ হওয়ার লক্ষণ আগেই দেখা গেছে, যখন ৩৯ বছর বয়সী ডিউক গত শরতে রাজার জন্মদিনে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন।
কিন্তু প্রিন্স হ্যারি বা মেগানের বড়দিন বা পারিবারিক কোনো গেট টুগেদারে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যায়নি। এখন পর্যন্ত তারা রাজপরিবারের বাকি সদস্যদের থেকে আলাদা থাকছেন।
প্রিন্স হ্যারির স্মৃতিকথা 'স্পেয়ার' যেমনটা তথ্য দিচ্ছে, রাজপরিবারে রাজার সাথে প্রিন্স হ্যারির সম্পর্কের মধ্যে এতটা উত্তেজনা ছিল না, যতটা তার ভাই প্রিন্স অফ ওয়েলসের সাথে ছিল এবং ট্যাবলয়েড পত্রিকার বাড়াবাড়িই এটাকে উস্কে দিয়েছিল।
প্রিন্স হ্যারির সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য সফরগুলো রাজকীয় নয়, বরং আইন আদালত সংক্রান্তই বেশি ছিল।
ক্যালিফোর্নিয়ার মন্টাসিটোতে বসবাসকারী প্রিন্স হ্যারি ও মেগানের আরো প্রকল্প এবং ভ্রমণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
একটি ছবির প্রিমিয়ারে তারা জ্যামাইকায় গিয়ে বলেছিলেন তারা এই মাসের শেষে ইনভিক্টাস খেলা সংক্রান্ত ইভেন্টে যোগ দিতে কানাডা যাবেন। সফরটি হবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
প্রিন্স হ্যারির ভাই প্রিন্স উইলিয়াম এখনো রাজার ক্যান্সারের বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি।
রাজার অনুপস্থিতিতে বাবার কিছু অনুষ্ঠানে প্রিন্স উইলিয়াম যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও রাজপ্রাসাদ থেকে রাজার আনুষ্ঠানিক সাংবিধানিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার উপর জোর দেয়া হয়।
গতমাসে প্রিন্সেস অফ ওয়েলসের পেটে অস্ত্রোপচারের পর ফিরে এই সপ্তাহে পাবলিক ডিউটিতে ফিরে আসার কথা ছিল প্রিন্সের।
মঙ্গলবার সকালে, রাজার ভাতিজি প্রিন্সেস বিয়েট্রিসকে ক্ল্যারেন্স হাউজে দেখা গেছে।
এর আগে রাজপ্রাসাদ থেকে জানানো হয়, ৭৫ বছর বয়সী রাজা ‘এই চিকিৎসার বিষয়ে সম্পূর্ণ ইতিবাচক এবং যত দ্রুত সম্ভব আবার সম্পূর্ণ দায়িত্ব পালনে ফেরার বিষয়ে আশাবাদী।’
রাষ্ট্রের প্রধান যখন সরকারি দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম হয়ে পড়েন, এরকম পরিস্থিতির জন্য একটি সাংবিধানিক ব্যবস্থা রয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে রাজার পক্ষে কাজ করার জন্য ‘রাষ্ট্রের পরামর্শদাতাদের’ নিয়োগ করা যেতে পারে।
বর্তমানে তাদের মধ্যে আছেন রানি ক্যামিলা, প্রিন্স উইলিয়াম, প্রিন্সেস রয়েল ও প্রিন্স এডওয়ার্ড। প্রিন্স হ্যারি ও ডিউক অব ইয়র্ককে আর ডাকা হয় না কারণ তারা আর রাজপরিবারের সদস্য নন।
প্রাসাদ থেকে জানানো হয়েছিলো, রাজা তার ক্যান্সার চিকিৎসার বিষয়টি জনগণকে জানাতে চেয়েছেন। তিনি যখন প্রিন্স অফ ওয়েলস ছিলেন, তখন ক্যান্সার সম্পর্কিত অনেক দাতব্য প্রতিষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন।
‘এই কারণে, হিজ ম্যাজেস্টি ক্যান্সার রোগী, তাদের স্বজন ও যারা তাদের সহায়তা করে সেসব চমৎকার চিকিৎসকদের সমর্থনে প্রকাশ্যে প্রায়শই কথা বলেছেন।’
তিনি তার প্রোস্টেট চিকিৎসার সময় জনসম্মুখে গিয়েছিলেন যাতে লোকজন আরো বেশি করে প্রোস্টেট চেকআপ করায়।
প্রোস্টেট সম্পর্কিত ইস্যুতে সমস্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বৃটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এনএইচএস তাদের ওয়েবসাইটে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পেরে রাজা আনন্দিত বলেও জানানো হয়েছে।
‘কিভাবে শ্রেণি-বিভেদ ছাড়াই ক্যান্সার হচ্ছে’ এই বিষয়ে আলোকপাত করায় রাজাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে রয়েল সোসাইটি অফ মেডিসিন। জনসাধারণকে ক্যান্সার আছে কিনা তা জানতে চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে আহ্বান করেছেন রাজা।
যুক্তরাজ্যে প্রতি দু’জনের মধ্যে একজনের জীবনে অন্তত একবার ক্যান্সার শনাক্ত হয়ে থাকে।
এনএইচএস’র ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে ২০০ ধরনের ক্যান্সার আছে। এর মধ্যে স্তন ক্যান্সার, ফুসফুস, প্রোস্টেট ও অন্ত্রথলির ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি।
ধরন অনুযায়ী বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর নতুন ক্যান্সার রোগীদের ৩৬ শতাংশের বেশি মানুষের বয়স ৭৫ বছর কিংবা তার বেশি।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর রাজা চার্লস সিংহাসনের অধিকারী হন। পরের বছর মে মাসে রাজা হিসেবে অভিষেক ঘটে তার।
সূত্র : বিবিসি