২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নতুন সৌর প্রযুক্তি জার্মানিতে আশার আলো দেখাচ্ছে

নতুন সৌর প্রযুক্তি জার্মানিতে আশার আলো দেখাচ্ছে - ছবি : সংগৃহীত

সৌরবিদ্যুতের গুরুত্ব বেড়েই চলেছে। তবে প্রচলিত সোলার সেল সূর্যের আলোর পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করতে পারে না। নতুন এক প্রযুক্তির দৌলতে জার্মানি সোলার সেল উৎপাদনের ক্ষেত্রে আবার হারানো সুযোগ ফিরে পেতে চায়।

জার্মানির মদতেই সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রযুক্তি জনপ্রিয় হয়েছে। তারপর উৎপাদনের কাজ চীনে সরে গেল। এবার প্রযুক্তির অগ্রগতি এই ক্ষেত্রকে আবার জার্মানিতে ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। অক্সফোর্ড পিভি কোম্পানির প্রযুক্তির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ক্রিস কেসের সূত্র অনুযায়ী এটাই এখন সারাবিশ্বে সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে কার্যকর সোলার সেল।

এবার বড় আকারে সোলার সেলের নতুন এই প্রজন্মের উৎপাদন শুরু হবে। এটাকে প্রযুক্তিগত বিপ্লব হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। এর ফলে প্রচলিত প্রযুক্তির তুলনায় ২০ শতাংশেরও বেশি বাড়তি জ্বালানি উৎপাদন করা সম্ভব।

ক্রিস কেস বলেন, ‘আমরা সোলার সেলের জন্য নতুন এক উপাদান সৃষ্টি করতে চেয়েছিলাম। উৎপাদনের ব্যয় আরো কমানো এবং সোলার স্পেকট্রামের রঙগুলোর সাথে আরো মানানসই করে তোলাই ছিল উদ্দেশ্য। আরো চিকন স্তর বসিয়ে প্রচলিত সিলিকন প্রযুক্তির সাথেই আমরা নতুন এই উপাদানের মেলবন্ধন ঘটাচ্ছি। আসলে একটির ওপরে আরেকটি সোলার সেল বসানো হচ্ছে।

এখনো পর্যন্ত এই প্রযুক্তি এক পরীক্ষামূলক প্লান্টে প্রয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু ওই কারখানায় সম্প্রসারণ ঘটিয়ে বছরে এক কোটি সোলার সেল তৈরি করা সম্ভব। এমন সেলের বিপুল চাহিদা রয়েছে। অক্সফোর্ড পিভি কোম্পানির আর্থিক বিভাগের প্রধান ফ্রাংক নোভরোটের মতে, ‘সবাই গ্রিন হাইড্রোজেনের কথা বলছে। কিন্তু হাইড্রোজেন আগে উৎপাদন করতে হবে, যার জন্য অনেক জ্বালানির প্রয়োজন। এই কাজে সৌরবিদ্যুৎ ক্ষেত্র সঠিক সহযোগী।’

জার্মানি ও সোলার এনার্জি শিল্পক্ষেত্রের মধ্যে সম্পর্ক বেশ জটিল। ২০ বছর আগে বিপুল রাষ্ট্রীয় সহায়তা নিয়ে সেই যাত্রা শুরু হয়েছিল।

জার্মানি অবশ্য বেশ দ্রুত নিজস্ব উৎপাদন ক্ষমতার একটা বড় অংশ হারিয়েছিল। কারণ ওই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়া পর দেখা গেল, অন্যরা অনেক সস্তায় উৎপাদন করতে পারে।

জার্মান অর্থনীতি গবেষণা কেন্দ্রের ক্লাউডিয়া কেমফ্যার্ট মনে করেন, ‘এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু ভুল করা হয়েছিল। প্রথমত শুরুর দিকে যে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল, ২০০০ সাল ও তারপরে সেগুলো অনেক কমিয়ে দেয়া হয়েছিল। একই সাথে গোটা বাজারও ভেঙে পড়তে দেয়া হয়েছিল। আরেকটি ভুল ছিল, চোখের সামনে অনেক কোম্পানিকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে দেয়া হয়েছিল। বিশেষ করে চীনই ছিল প্রধান গন্তব্য।’

বর্তমানে সবচেয়ে বড় সোলার উপাদান উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো এশিয়া মহাদেশে রয়েছে। অথচ ইউরোপ জ্বালানির চাহিদা মেটাতে নির্ভরতা আরো কমাতে চায়। তাহলে এখন কী হবে?

ক্লাউডিয়া কেমফ্যার্টের মতে, ‘চীনে যে মাত্রায় উৎপাদন ক্ষমতা গড়ে তোলা হয়েছে, তার সাথে পাল্লা দিতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তবে অবশ্যই কিছু ক্ষেত্রে নতুন ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারি। যেমন অত্যন্ত উদ্ভাবনশীল ও একই সাথে অতি কার্যকর প্লান্ট গড়ে তুলতে পারি।’

বার্লিনে জ্বালানি ক্ষেত্রের কিছু কোম্পানি ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের এক সম্মেলন চলছে। অক্সফোর্ড পিভি কোম্পানির আর্থিক বিভাগের প্রধানও সেখানে উপস্থিত। কারণ ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্যে তাদের পরীক্ষামূলক প্লান্ট প্রায় এক কোটি ১০ লাখ ইউরো অঙ্কের সরকারি অনুদান পেয়েছে।

তবে গোটা বিনিয়োগের অঙ্কের ইতোমধ্যে ১০ কোটি ইউরো ছুঁয়েছে। কোম্পানির আরো বড় পরিকল্পনা রয়েছে। ফ্রাংক নোভরোট বলেন, ‘আমরা প্রায় পাঁচ গিগাওয়াট ক্ষমতার সোলার সেল উৎপাদনের পরিকল্পনা করছি। সাথে উপযুক্ত মডিউলও উৎপাদন করা হবে। বর্তমানে আমরা বিভিন্ন সাইটের মূল্যায়ন করছি।’

এর অর্থ, সরকারি অনুদানের অঙ্কের মধ্যেও তুলনা করা হচ্ছে। অনেক রাষ্ট্র উচ্চ মানের প্রযুক্তি প্রস্তুতকারীদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। তারা বিশাল অঙ্কের ভরতুকি দিতে প্রস্তুত। প্রশ্ন হলো, ইউরোপ না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র- অক্সফোর্ডের নতুন গিগাফ্যাকটরি কোথায় তৈরি করা হবে?

অক্সফোর্ড পিভি কোম্পানির ফ্রাংক নোভরোট বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্পষ্ট অঙ্ক জানা গেছে। ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্টের আওতায় এমনকি আমাদের জন্যও অকল্পনীয় ১০০ কোটি ডলারের বেশি অঙ্ক মঞ্জুর করার কথা চলছে।’

এমন প্রতিযোগিতার মুখে ইউরোপিয় ইউনিয়নের কি টিকে থাকার ক্ষমতা বা প্রয়োজনীয়তা আছে?

বর্তমানে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সে বিষয়েই দরকষাকষি চলছে। এই উদ্যোগের বিশাল গুরুত্ব রয়েছে। সৌরবিদ্যুৎ বর্তমানে সবচেয়ে সস্তার জ্বালানি। একই সাথে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি।
সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement