৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেদ করে প্রবেশের দাবি ইউক্রেনের

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেদ করে প্রবেশের দাবি ইউক্রেনের - সংগৃহীত

রাশিয়ার অভেদ্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে ইউক্রেনের সেনারা প্রবেশে করেছে বলে দাবি করেছেন দেশটির জেনারেলরা। এই গ্রীষ্মের শুরুতে পাল্টা আক্রমণ শুরু করার পর তারা আরো সংহত হয়ে উঠেছে।

যদিও রাশিয়ার দখল থেকে উদ্ধার করা এলাকার আয়তন এখনো খুবই ছোট হলেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করেছেন কর্মকর্তারা।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এক উপদেষ্টা ইউরি শাক জানিয়েছেন, তাদের সৈন্যরা রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেদ করেছে।

’এটা সত্যি। অল্প অল্প করে হলেও আমরা সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি,’ তিনি বলেন।

দক্ষিণাঞ্চলের যুদ্ধক্ষেত্রে দায়িত্বরত শীর্ষ জেনারেলদের একজন ওলেকসান্ডার তার্নাভাস্কি ব্রিটেনের অবজারভার পত্রিকাকে বলেছেন, ’আমরা এখন রাশিয়ার প্রথম আর দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা লাইনের ভেতরে রয়েছি।’

তার এ বক্তব্যের সাথে মিল পাওয়া যায় হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জন কিরবির কথাতেও। শুক্রবার ওয়াশিংটনে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ইউক্রেনের সৈন্যরা 'দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা ব্যূহে বেশ ভালো সফলতা পেয়েছে'।

ইউক্রেনের শুরু করা পাল্টা আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে জাপোরিশার প্রায় ৫৬ মাইল দূরের একটি ছোট গ্রামের আশপাশের এলাকা।

এক সপ্তাহ আগে ওই গ্রাম পুনরুদ্ধার করার পর পতাকা টাঙিয়ে দিয়েছিল ইউক্রেনের সেনারা। এখন তারা সেখানকার নিয়ন্ত্রণ আরো বাড়ানোর চেষ্টা করছে, যাতে রাশিয়ার গোলাগুলির মধ্যে না পড়ে আরো বেশি সৈন্য আর সাঁজোয়া যানগুলো চলাচল করতে পারে।

সেটা করা সম্ভব হলে ইউক্রেনের সৈন্যরা দ্বিতীয় আর তৃতীয় প্রতিরক্ষা লাইনের ভেতরে অবস্থান নিতে পারবে। তবে প্রথম প্রতিরক্ষা লাইন ভেদ করার মতো এটা সহজ হবে না।

ইউক্রেনের আরো কয়েকটি এলাকাতেও লড়াই চলছে, যদিও সেসব এলাকায় অগ্রগতির হার কম।

কারণ এসব যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার বসানো মাইন, ট্যাঙ্ক বাহিনী, পরিখার মতো নানা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।

যুদ্ধবিমানের সহায়তা ছাড়া আর রাশিয়ার গোলার মুখে ইউক্রেনের ছোট ছোট ইউনিটগুলো এসব প্রতিকূলতা মোকাবেলা ক্ষেত্র তৈরির চেষ্টা করছে, যাতে আরো বড় ধরনের হামলা চালানো যায়।

’যখন এসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারা যাবে, তখন আমাদের বাকি বাহিনী দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে,’ বলেছেন তিনি।

তবে ইউক্রেনের এসব দাবির গুরুত্ব কতটা, তা যাচাই করা কঠিন।

কারণ দেশটির কর্মকর্তারা এসব হামলা বিস্তারিত জানাতে রাজি নন। তারা একটা ধোঁয়াশা তৈরি করে রাখতে যান, যাতে কিয়েভের উদ্দেশ্য রাশিয়ানরা বুঝতে না পারে।

স্পর্শকাতর কোনো তথ্যই জানাতে চান না কিয়েভের কর্মকর্তারা। অনেক সময় যুদ্ধক্ষেত্রে যা ঘটছে, কর্মকর্তারা তার তুলনায় ভিন্ন রকম তথ্য দেন।

ইউক্রেনের ৪৬তম এয়ার অ্যাসল্ট ব্রিগেডের কাছে শনিবার এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছিল বিবিসি।

তিনি বলেছেন, রাশিয়ার প্রথম প্রতিরক্ষা লাইনে বড় ধরনের লড়াই চলছে, তবে এখনো কেউ ব্যূহ ভেদ করতে পারেনি।

তবে এখানে বিবেচনায় নেয়ার মতো একটি বিষয় হলো, যুদ্ধ ক্ষেত্রে একেকটি ইউনিট আলাদা আলাদাভাবে কাজ করে। তারা শুধু তাদের ওপর দেয়া লক্ষ্য অর্জনের জন্যই চেষ্টা করে যায়।

ফলে অন্য ইউনিট কী করছে বা কতটা অগ্রগতি করেছে, সেসব তথ্য তাদের কাছে নাও থাকতে পারে।

এরকম একটি ইউনিট, একটি স্বেচ্ছাসেবী ব্যাটেলিয়নের কমান্ডার, যার ছদ্মনাম ‘শাকালা’ রয়টার্স বার্তা সংস্থাকে বলেছেন, তার বাহিনীর সদস্যরা গত ২৬ আগস্টেই রাশিয়ার প্রথম প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেদ করেছে।

রোববার তিনি বিবিসিকে বলেছেন, তার বাহিনীর সদস্যরা এখন আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

‘আক্ষরিক অর্থেই আমরা জাপোরিশা অঞ্চল ধরে সাগরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি,’ একটি ভয়েস মেসেজে তিনি এই তথ্য জানিয়েছেন, তবে তিনি বিস্তারিত বলেননি।

‘আমি এখনি তাড়াহুড়ো করতে চাই না। তবে আমরা এবং নিয়মিত বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত বিজয়ের জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই করছি,’ তিনি বলেছেন।

ইউক্রেনের এই অভিযানের পুরোপুরি চিত্র এখনো পাওয়া না গেলেও, তাতে ক্রেমলিন যে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে, সেটা পরিষ্কার।

অন্যান্য এলাকা থেকে এলিট বাহিনীর সদস্যদের সরিয়ে নিয়ে এসে দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য মোতায়েন করতে শুরু করেছে রাশিয়া। বিশেষ করে প্রধান সড়ক এবং রেল সড়কের নিরাপত্তায় তাদের মোতায়েন করা হচ্ছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্টাডি অব ওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন মাসের পর তৃতীয় দফায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।

‘আবারো এ ধরনের সেনা মোতায়েনের ঘটনায় এটা বুঝা যাচ্ছে যে- প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রক্ষা করা নিয়ে রাশিয়ার উদ্বেগ বাড়ছে,’ পহেলা সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা একটি বিশ্লেষণে এই তথ্য দিয়েছে সংস্থাটি।

ইউক্রেনের একজন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ বলেছেন, তাদের এখন প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, রাশিয়ার বাহিনীগুলোকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা তাড়িয়ে দেয়া, যাতে তারা ক্লান্ত হয়ে ওঠে এবং রিজার্ভ বাহিনীকে তলব করতে বাধ্য হয়।

সেই সাথে রাশিয়ার বাহিনীর দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করে তার সুযোগ নেয়া।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, কিয়েভ ভিত্তিক এমন একটি গবেষণা সংস্থা ‘ইউক্রেনিয়ান সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন সেন্টারের’ কর্মকর্তা সের্হি কুযান বিবিসিকে বলেছেন, ইউক্রেনের বাহিনীর পরবর্তী কাজ হবে, তাদের নিয়ন্ত্রণ আরো সুদৃঢ় ও বিস্তৃত করা। সেটা না করা পর্যন্ত আরও গভীরে যেতে পারবে না আমাদের বাহিনী।

বিশেষ করে তাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, দক্ষিণাঞ্চলে রাশিয়াকে হটিয়ে দিয়ে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।

বিশেষ করে আযভ সাগরের মধ্যবর্তী এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়া, যার ফলে ক্রাইমিয়ার সাথে মস্কোর ভূস্থলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

কিন্তু সেটা করা না গেলেও ওই এলাকায় রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোর সরবরাহ ব্যবস্থা তারা ভেঙ্গে দিতে চায়।

কিন্তু সেটা করতে গিয়ে রাশিয়ার পাল্টা হামলার মুখেও পড়তে হবে তাদের।

‘সামনে আরো কঠিন লড়াই অপেক্ষা করছে, মন্তব্য করেছেন তিনি।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement