যুদ্ধে ইউক্রেন আরো কোণঠাসা, রাশিয়ার বড় অর্জন
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৪:৩৭, আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৪:৪২
ইউক্রেন যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে এসে রণাঙ্গনজুড়ে অগ্রগতি অর্জন করছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী।
ইন্সটিটিউট ফর দি স্টাডি অফ ওয়ার বা আইএসডব্লিউর তথ্য উপাত্ত থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালে ইউক্রেনের যে পরিমাণ ভূমি রাশিয়া দখল করেছিল তার চেয়ে অন্তত ছয় গুণ বেশি এ বছর নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তারা।
তারা এখন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস এলাকায় দেশটির লজিস্টিক বা রসদ সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেন যে বিস্ময়কর অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছিল সেটি এখন নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার বাহিনী তাদের পেছনের দিকে যেতে বাধ্য করছে।
বিশ্লেষকরা কিয়েভের ওই আক্রমণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তারা এ পরিস্থিতিকে কৌশলগত বিপর্যয় উল্লেখ করে বলেছেন, ফলে ইউক্রেন এখন লোকবল সঙ্কটের মুখে পড়েছে।
আর এসব ঘটনা এমন এক সময় ঘটছে যখন যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। এর মধ্যেই ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
আবার ইউক্রেন যদি যুক্তরাষ্ট্রের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার ভূখণ্ডে আঘাত হানে, তবে তার জবাবে তারা ‘যথাযথ ও কার্যকর’ পদক্ষেপ নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে এগুচ্ছে রাশিয়া
যুদ্ধ শুরুর কয়েক মাসে রাশিয়া খুব দ্রুতই এগুচ্ছিল, অন্তত ইউক্রেনের পাল্টা অভিযান শুরুর আগে পর্যন্ত। কিন্তু ২০২৩ সালে কোনো পক্ষই খুব বেশি অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। ফলে সঙ্ঘাতে এক ধরণের স্থবিরতা দেখা যায়।
কিন্তু নতুন তথ্য উপাত্ত থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালে রাশিয়ার পক্ষেই গেছে পরিস্থিতি। আইএসডব্লিউ সৈন্যদের গতিবিধি ও নিশ্চিত হওয়া গেছে এমন ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য দিচ্ছে।
তাদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর রাশিয়া ইউক্রেনের ২,৭০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করে নিয়েছে। অথচ গত বছর তারা মাত্র ৪৬৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করতে পেরেছিল।
লন্ডনের কিংস কলেজের প্রতিরক্ষাবিষয়ক গবেষক ড. মারিনা মিরন বলেন, রাশিয়া এখনকার গতিতে অগ্রসর হতে থাকলে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ফ্রন্ট ধসে পড়তে পারে।
রাশিয়া চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ নভেম্বরের মধ্যেই দখল করে নিয়েছে এক হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা। এর মধ্যে আছে খারকিভের কুপিয়ানস্ক এবং কুরাখভ অঞ্চল, যা দোনেৎস্ক অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ হাব পকরভস্কের কাছে।
এর মধ্যে কুপিয়ানস্ক ও ওসকিল নদীর পূর্ব অঞ্চল ২০২২ সালে ইউক্রেন একবার মুক্ত করে নিলেও পরে রাশিয়া আবার তা দখল করে। সাম্প্রতিক গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ানরা শহরের উত্তর পূর্বাঞ্চলে প্রবেশের চেষ্টা করছে।
বিবিসির অনুসন্ধানী ভিডিওতে দেখা গেছে, রাশিয়ার বাহিনী কুপিয়ানস্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুর চার কিলোমিটারের মধ্যে এসে বিতাড়িত হয়েছে।
আইএসডব্লিউ বলছে, মস্কো এখন ইউক্রেনের মোট এক লাখ ১০ হাজার ৬৪৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। অন্যদিকে, কুরস্কে রাশিয়ার ১,১৭১ বর্গকিলোমিটার এলাকায় এখন ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে। যদিও এর মধ্যে এর অর্ধেক রাশিয়ান বাহিনী পুনর্দখলে নিয়েছে।
তবে এই অগ্রগতির জন্য রাশিয়াকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে।
বিবিসি রাশিয়া নিশ্চিত করেছে যে ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার কমপক্ষে ৭৮ হাজার ৩২৯ সৈন্য মারা গেছে।
ওদিকে, রাশিয়ার অগ্রগতি সত্ত্বেও কিছু বিশ্লেষক মনে করেন অভিযানের গতি খুবই ধীর।
সামরিক বিশ্লেষক ডেভিড হান্ডেলম্যান বলছেন, পূর্বাঞ্চল থেকে সংরক্ষিত লোকবল ও রসদ ধীরে ধীরে সরিয়ে নিচ্ছে ইউক্রেনীয় সেনারা।
কুরস্ক পরিস্থিতি
ইউক্রেন আগস্টে কুরক্সে যে অভিযান চালিয়েছিল তা ছিল বিস্ময়কর। তবে এটা এখনও পরিষ্কার নয় যে তখন কেনো রাশিয়া এর জবাব দিতে দেরি করেছিল। এর ফলে কিয়েভের সেনারা দ্রুত সীমান্ত এলাকায় কয়েকটি কমিউনিটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
ড. মিরন বলেন, এর ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে ক্রেমলিন সঙ্কটে পড়লেও মূলত কুরস্কে ইউক্রেনকে রেখে অন্য এলাকাগুলোতে অগ্রগতি অর্জন করে। কিন্তু মস্কো এখন তার নিয়ন্ত্রণ হারানো ভূখণ্ডের পুনর্দখল আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ওই অঞ্চলে তারা ৫০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে।
ভেরিফায়েড ভিডিওগুলোতে দেখা যাচ্ছে, কুরস্ক অঞ্চলে তুমুল লড়াই চলছে। এতে রাশিয়া উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লোকবল ও উপকরণ হারিয়েছে। তবে তথ্য উপাত্ত বলছে, ইউক্রেন দ্রুতই ওই অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে।
অক্টোবরের শুরু থেকে রাশিয়া পাল্টা আক্রমণের মাধ্যমে ৫৯৩ বর্গকিলোমিটার ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করছে বলে জানিয়েছে আইএসডব্লিউ।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা