০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বাংলাদেশে যৌথপ্রযোজনার চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ কী

বাংলাদেশে যৌথপ্রযোজনার চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ কী -

বাংলা সিনেমার ‘মানোন্নয়নের’ জন্য বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণ করলেও বিতর্ক ছাড়ছে না বিষয়টিকে ঘিরে। চলচ্চিত্র অঙ্গনে এ বিষয়কে নিয়ে নানা রকমের আলোচনা কিংবা ‘গুঞ্জন’ ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে। চলচ্চিত্র শিল্পের একপক্ষের দাবি যৌথপ্রযোজনা বাংলা সিনেমার জন্য দরকারি, অন্যপক্ষের মন্তব্য এতে আমরা ‘শিল্পগুণের’ নিজস্বতা হারাচ্ছি। সব মিলে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের মধ্যে প্রশ্ন, যৌথ প্রযোজনায় কতটুকু লাভবান হচ্ছে বাংলাদেশে। বিশেষ করে ৫ আগস্ট বাংলাদেশের সরকার পতনের পর দুই দেশের সম্পর্কে অলিখিত শিথিলতা লক্ষ করা যাচ্ছে, যার প্রভাব পড়েছে চলচ্চিত্রেও।
১৯৭৩ সাল থেকে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নির্মাণ শুরু হলেও এর নীতিমালা প্রণীত হয় ১৯৮৬ সালে। সেই নীতিমালার সংশোধিত রূপ প্রকাশ পায় ২০১২ তে এসে। তবে নীতিমালা নিয়েও সমসাময়িক অনেক প্রশ্ন রয়েই গেছে এই শিল্প মহলে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ‘ধীরে বহে মেঘনা’র পর যৌথ প্রযোজনার চল শুরু হয়। ১৯৭৩ সালে থেকে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কার সাথে যৌথভাবে সিনেমা নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ। ১৯৭৬ সালের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সাথে ক্রমেই পুঁজি সঙ্কটের মুখোমুখি হতে থাকে ঢাকাই সিনেমার প্রযোজকরা। সে সময়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেন ভারত-নেপাল-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা-তুরস্কের চলচ্চিত্র প্রযোজকরা। ১৯৭৬ সাল ১৯৮৩ সাল অবধি কোনো যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নির্মিত হয়নি। তবে বিদেশী প্রযোজকদের আনাগোনায় বেশ মুখরিত হয়ে ওঠে চলচ্চিত্রাঙ্গন। সরকারি হস্তক্ষেপে বারবার বিরাম চিহ্ন পড়েছে যৌথ প্রযোজনায়। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ (১৯৭৩), ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ (১৯৯৩), ‘মনের মানুষ’ (২০১০), ‘মনের মাঝে তুমি’ (২০০৩), ‘শিকারী’ (২০১৬) ছবিগুলো দুই বাংলার কলাকুশলী ও দর্শককে কাছে টেনেছিল। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত সরকারের আমলে পুনরায় শুরু হয়েছিল যৌথ প্রযোজনা। গত সরকারের সময়ই ঢালিউড শিল্পী-কলাকুশলীদের আন্দোলনের জেরে যৌথ প্রযোজনা ফের থমকে যায়। আন্দোলনকারীরা যৌথ প্রযোজনাকে নাম দিয়েছিল ‘যৌথ প্রতারণা’। পরে তৈরি করা হয় যৌথ প্রযোজনার নতুন নীতিমালা। সেই নীতিমালায় ছিল নানা শর্তের বেড়াজাল, শর্ত মেটাতে না পারায় কার্যত বন্ধই হয়ে যায় দুই দেশের যৌথ নির্মাণ। যৌথ প্রযোজনা বন্ধ হলেও ওটিটি ও ইউটিউবের কল্যাণে দুই দেশের শিল্পীরা দুই পারেই জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। বাংলাদেশের ফেরদৌস, জয়া আহসানরা আগে থেকেই ওপারের চলচ্চিত্রে অভিনয় করে আসছেন। ওপারের পরমব্রত, শ্রাবন্তীসহ বেশ কয়েকজন অভিনয় করেছেন এপারের ছবিতে। বলা চলে, যৌথ প্রযোজনার বাইরে দুই দেশের ছবিতে দুই পারের শিল্পীদের অবাধ বিচরণ লক্ষ করা গেছে এই সময়ে। বাংলাদেশের ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিনের বড় পর্দায় অভিষেক ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের ছবি ‘আরো এক পৃথিবী’ দিয়ে। অন্য দিকে পশ্চিমবঙ্গের অভিনেত্রী ইধিকা পালের বড় পর্দায় অভিষেক ঘটেছে বাংলাদেশের ‘প্রিয়তমা’তে। জয়া আহসান, রাফিয়াত রশিদ মিথিলারা তো শুটিংয়ের কারণে বছরের একটি বড় সময় কলকাতায়ই থাকেন। তাদের বাইরে টালিগঞ্জে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন নুসরাত ফারিয়া, বিদ্যা সিনহা মিম, পরীমনি, শবনম বুবলীরা। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের ছবিতে অভিনয় করা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত নতুন করে এপারের ছবি হাতে নিয়েছেন। স্বস্তিকা মুখার্জি, শ্রাবন্তী চ্যাটার্জি, মিমি চক্রবর্তী, বনি সেনগুপ্ত, কৌশানী মুখার্জিদের হাতেও ছিল এপার বাংলার একাধিক ছবির প্রস্তাব। হঠাৎ করে যেন সব হিসাব-নিকাশ বদলাতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে সরকার পতনের পর বারবার শিডিউল পরিবর্তন করেও শুটিং শুরু করতে পারছেন না হিমু আকরাম ও রাশিদ পলাশ। হিমু আকরামের ‘আলতাবানু কখনো জোছনা দেখেনি’ এবং রাশিদ পলাশের ‘তরী’ ছবিতে অভিনয় করার কথা ছিল ঋতু ও স্বস্তিকার। দু’জনই পড়েছেন ভিসা জটিলতায়। কলকাতার একটি দৈনিক এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে ১৩ সেপ্টেম্বর। এ দিকে বাংলাদেশ থেকে পরীমনি ও শবনম বুবলীও তাদের ছবির কাজে যেতে পারছেন না কলকাতায়। এই ভিসা জটিলতার কারণে ওপারে দেবের বিপরীতে ‘প্রতীক্ষা’ ছবিটি ছেড়েই দিয়েছেন বাংলাদেশের তাসনিয়া ফারিণ। শুধু ভিসা জটিলতাই নয়, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের জনগণের রোষানলে পড়ার ভয়েও অনেকে ওপারের ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিচ্ছেন। গত সপ্তাহে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ‘ন ডরাই’ খ্যাত অভিনেত্রী সুনেরাহ বিনতে কামাল বলেন, ‘ভারতের একটি ছবি করার কথা ছিল আমার। দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিচার করে ছবিটা ছেড়ে দিয়েছি। কারণ এখন ভারতের ছবি করলে দেশের মানুষ তা পছন্দ করবে না।’ পরীমনি অভিনীত ‘ফেলুবকশি’র শুটিং শেষ হলেও বাকি ডাবিং। তিনি বলেন, আমার আগের ভিসা নেই। নতুন ভিসা পেতে সমস্যা হচ্ছে। এখন কবে ভিসা পাবো, কবে যেতে পারব তা বুঝতে পারছি না। কোরবানির ঈদের ব্লকবাস্টার ‘তুফান’-এর প্রযোজক আলফা আই। এই ছবির অভিনয়শিল্পীর তালিকায় রয়েছেন ওপার বাংলার মিমি চক্রবর্তীসহ বেশ কয়েকজন। ছবিটির সিক্যুয়াল তৈরির ঘোষণা আগেই দিয়েছেন নির্মাতারা। সেখানেও মিমি থাকবেন, তা অনেকটা জোর দিয়েই বলেছিলেন রায়হান রাফী। গুজব রটেছে, এই ছবির পরের কিস্তিতে থাকছেন না মিমি, তার চরিত্রে স্থলাভিষিক্ত হবেন দেশীয় একজন অভিনেত্রী।
সাম্প্রতিক এই ঘটনাগুলো ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলে এটি স্পষ্ট, রাজনীতির মাঠের মতো দুই দেশের চলচ্চিত্রের মেলামেশাও অলিখিতভাবে বন্ধ হতে চলেছে।


আরো সংবাদ



premium cement
সব প্রতিষ্ঠান সংস্কার করে নির্বাচনে যাওয়ার যুক্তি নেই : মঈন খান ‘গণতান্ত্রিক সরকার ছাড়া কোনো সাংবিধানিক সংস্কার সম্ভব না’ পূর্বধলায় কিশোরের আত্মহত্যা নাসিরনগরে নদী থেকে লাশ উদ্ধার ইসরাইলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে আয়ারল্যান্ডের পার্লামেন্টে প্রস্তুাব পাস গুম বিষয়ক তদন্ত কমিশনকে সর্বোচ্চ সহায়তার প্রতিশ্রুতি প্রধান উপদেষ্টার চারু শিল্পী পরিষদের সভাপতি ইবরাহিম, সেক্রেটারি মুফাচ্ছির উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হলো আলোকিত ফেনীর বৃত্তি পরীক্ষা গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারই জাতীয় সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠি : তারেক রহমান ‘হাসিনার গড়া ট্রাইবুনালেই তার বিচার করতে হবে’ বৈষম্য, আরো কিছু কথা

সকল