বড় বাজেটের ছবি বানানো ঝুঁকিপূর্ণ : কেট ব্ল্যানচেট

বড় বাজেটের সিনেমা নির্মাণ বিনিয়োগকারীদের জন্য সব সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এখানে অর্থনীতির সাথে সৃজনশীলতার একটি দ্বন্দ্ব থাকে। টরেন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে রয়্যাল আলেকজান্দ্রা থিয়েটারে কথোপকথন পর্বে অংশ নিয়ে এই মন্তব্য করেছেন কেট ব্ল্যানচেট। অস্ট্রেলিয়ান-আমেরিকান এই অভিনেত্রী প্রযোজক হিসেবেও বিশ্বব্যাপী পরিচিত। ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তার আলোচিত সিনেমার ‘ক্যারল’ প্রসঙ্গ টেনে এই অভিনেত্রী বলেন, এই সিনেমা বাজেটের পাঁচগুণ অর্থ আয় করেছে। কিন্তু নির্মাণের আগে এর তহবিল সংগ্রহ করতে অনেক লড়াই করতে হয়েছে। আলোচনার সময় তিনি বলেন, আমি সব সময় মঞ্চে অভিনয়টা উপভোগ করতাম। কারণ আজকে এখানে যে দর্শক রয়েছেন। মঞ্চে অভিনয়ের সময়ও এমন দর্শক থাকেন। এখান থেকে সরাসরি মানুষের ভালো লাগার অনুভূতিগুলো বুঝা যায়। তিনি বলেন, সব সময় মনে রাখতে হবে যে সৃজনশীল প্রক্রিয়ায় ভদ্র মতবিরোধ, সম্মানজনক মতানৈক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
‘ক্যারল’-এ ব্ল্যানচেট একজন মধ্যবয়সী মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন যিনি একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কাজ করা একজন কম বয়সী মহিলার (রুনি মারা) সাথে রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ প্রসঙ্গে বলেন, সিনেমাটি করতে গিয়ে অনেক বাধার মধ্যে পড়তে হয়েছিল। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে এই সিনেমার শুটিং করতে হয়েছে। শুধু মতবিরোধের কারণে। এক পর্যায়ে, অন্য একজন পরিচালক এটি করতে যাচ্ছিলেন এবং তিনি প্রকল্পটি বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, টেকসই চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে শিল্পের মধ্যে ইক্যুইটি, অন্তর্ভুক্তি এবং আরো কতটা পরিবর্তন করতে হবে তা নিয়ে আমরা চিন্তা করি। কিন্তু আপনি জানেন, আমরা বিশাল অগ্রগতি করেছি।
তিনি বলেন, বিশ্বজুড়েই সিনেমা মুক্তির পর প্রধান আলোচনার বিষয় হয়, বক্স অফিসে তা কত আয় করছে। সিনেমার সাফল্য বিচার করা হয় আয়ের নিরিখে। কিন্তু অনেক সিনেমাই ভালো আয় করেও পরে হারিয়ে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে বক্স অফিসের পর নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল ওটিটি বা স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম।
অজনপ্রিয় বা ভিন্ন ধারার সিনেমার জন্য এ প্ল্যাটফর্ম বিশেষ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সেখানেও দেখা যায় নতুন সমস্যা। স্ট্রিমিংয়ের ক্ষেত্রেও সংখ্যা প্রাধান্য পেতে শুরু করে। স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে কত দর্শক সেটি দেখলেন, কত কোটি মিনিট দেখা হলো ইত্যাদি।
এ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী কেট ব্ল্যানচেটের মতামত, সংখ্যার চেয়ে মানের প্রতি মনোযোগী হওয়াটা জরুরি। সম্প্রতি টরেন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিল নির্মাতা ও অভিনেতা এবং নির্মাতা ও প্রযোজকের মধ্যে থাকা সৃজনশীলতার পার্থক্য নিয়ে। মূলত প্রযোজকরা মুনাফা চান, সৃজনশীলতা বা শিল্পের প্রতি তাদের আগ্রহ কম। সেখানে কেট বলেন, ‘আমরা এখন মানের চেয়ে সংখ্যার প্রতি মনোযোগী।
একটি সিনেমা কত আয় করল তাই দেখি, অথচ দেখা প্রয়োজন ছিল সিনেমাটি কত মানুষকে যুক্ত করতে পারল। দর্শকের কাছে সিনেমার গ্রহণযোগ্যতা বিচার করা জরুরি।’ এদিকে নির্মাতার সঙ্গে শৈল্পিক বা সৃজনশীল বিষয়ে দ্বিমত প্রসঙ্গে তিনি জানান, অনেক ক্ষেত্রে এমন হলেও টড হেইনেসের ক্ষেত্রে তা হয়নি। তিনি বলেন, ‘একটি ভালো কাজ করার বিষয় সামার ক্যাম্পের মতো সবাই মিলে মজা করে করা যায়। সেখানেও অবশ্য নানা দ্বিমত আসে, কিন্তু তা সম্মানের সাথে করা হলে সিনেমার ভালোর চিন্তা থেকে এলে এ দ্বিমত গুরুত্বপূর্ণ।
কেট অভিনীত ২০১৫ সালের সিনেমা ‘ক্যারল’। ভিন্ন ধারার গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছিল এটি। পরিচালনা করেছিলেন টড হেইনেস। ক্যারলে কেটের সাথে অভিনয় করেছেন রুনি মারা, সারা পলসন, কাইল চ্যান্ডলার প্রমুখ। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে নিজের সিনেমা ও অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে এ সিনেমার প্রসঙ্গেও কথা বলেন কেট। তিনি জানান, ক্যারল নির্মাণের খরচ জোগাড় করতে বেশ জটিলতা পোহাতে হয়েছে। কেননা, গল্প ও নির্মাণ পরিকল্পনা অনেকেরই পছন্দ হয়নি।
কেটকে সর্বশেষ দেখা গেছে ‘বর্ডারল্যান্ড’ চলচ্চিত্রে। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন এলি রথ। অভিনয়ে আরো রয়েছেন কেভিন হার্ট, জেমি লি কার্টিস, এজার রামিরেজ প্রমুখ। ৮ আগস্ট প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় এটি।