২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

২৬ বছর পরও জনপ্রিয়তার শীর্ষে সালমান শাহ

২৬ বছর পরও জনপ্রিয়তার শীর্ষে সালমান শাহ -

আজ চলচ্চিত্রের সেই বিভীষিকাময় দিন। আজকের দিনেই বাংলাদেশ দেশীয় চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক, এখনো অনেক নায়কের অনুপ্রেরণা, ফ্যাশন আইকন, মেধাবী অভিনেতা সর্বোপরি মৃত্যুর ২৬ বছর পরও সমান জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ। আজ তার ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। সালমানের মৃত্যুবার্ষিকী এলেই যেন বিশেষ শহরের দাড়িয়াপাড়ার নানার বাসায় সালমান ভক্তদের আসা-যাওয়াটা যেন একটু একটু করে বাড়তেই থাকে। গত ৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে সালমান শাহের নানার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, গেটের সামনে দাঁড়িয়েই কয়েকজন ছবি তুলছেন। কারণ এই বাসাতেই অর্থাৎ এই ‘সালমান শাহ হাউজ’-এ কেটেছে সালমানের ছোটবেলা। দুরন্ত সময়টা তিনি সেখানেই কাটিয়েছেন। জানালেন তার মামা কুমকুম। বাসার সামনেই সালমান শাহের বেশ কয়েকজনের ভিড়ের মধ্যে থেকে আমিই জানতে চাইলাম তাদের সম্পর্কে, কে কোথা থেকে এসেছেন। তার ছোটবেলা কেটেছে টাঙ্গাইলের মধুপুরে। সেখানে শুটিং হয়েছিল প্রয়াত শিবলী সাদিক পরিচালিত ‘আনন্দ অশ্রু’ সিনেমার। সালটা ১৯৯৫। বললেন মধুপুরের সন্তান শাকিল আহমেদ প্রিন্স। মধুপুরের কাকরাইদের বিএডিসি ফার্মেই মূলত শুটিং হয়েছিল। প্রিন্স বলেন, ‘যেহেতু আমার নানা নূরুল ইসলাম রাজ এই সিনেমার প্রযোজক ছিলেন, তাই আমার প্রিয় নায়ক সালমান শাহকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। সেই সময় কাছে দেখার সুযোগ হয়েছিল শাবনূর, ডলি জহুর, হুমায়ূন ফরীদি, নানা শাহসহ আরো অনেককে। আমার খুব মনে পড়ে সেই সময় ক্রিকেট খেলা বিএডিসি ফার্মের বাংলোতে বসে সালমান শাহের সাথে খেলা উপভোগ করার সুযোগ হয়েছিল আমার। খুব মনে পড়ে আমার নানার একটি লাল এক্সেল হোন্ডা ছিল। সেটি সালমান শাহের খুব প্রিয় ছিল। সেই হোন্ডা তিনি শুটিংয়ের সময়ের ফাঁকে ফাঁকে চালাতেন। খুব মধুর ছিল সেই সময়টা। এত জনপ্রিয় একজন নায়ক ছিলেন তিনি, কিন্তু তার মধ্যে বাচ্চাসুলভ আচরণটাই মুগ্ধ করেছিল আমাকে। তার অকাল প্রয়াণে সবাই যেমন কষ্ট পেয়েছিলেন, আমার কেন যেন মনে হতো আমিই বোধ হয় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম। কারণ তার সাথে এত কাছে এসে সময় কাটানোর সুযোগ হয়েছিল আমার যে, আমি সেটি আজও মানতে পারিনি যে, তিনি নেই। তাই সিলেটে এসে তার স্মৃতিচিহ্নটা দেখতে এলাম। দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন। মাঝে মধ্যে মনে হয়- ইস! তিনি যদি আবার ফিরে আসতেন তাহলে নিশ্চয়ই আমি তার সাথে দেখা করতাম, আনন্দ অশ্রু সিনেমার সময়কালের স্মৃতিচারণ করতাম। নিশ্চয়ই তিনি আমাকে চিনতে পারতেন। কত কিছুই আসলে ভাবি সালমান শাহকে নিয়ে।’ প্রিন্সের মতো আরো এমন অনেক ভক্ত আছেন যারা একবার সিলেটে যান তারা তাদের প্রিয় নায়কের কবরে যান, কবর জিয়ারত করেন। আবার প্রিয় নায়কের নানার বাড়িও ঘুরে যান।

বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাস সৃষ্টিকারী নায়ক সালমান শাহ। দেখতে দেখতে তার মৃত্যুর ২৬ বছর পেরিয়ে গেছে। মৃত্যুর ২৬ বছর পরও তিনি এখনো আকাশচুম্বী জনপ্রিয়। এখনো টিভি পর্দায় তার সিনেমা প্রচার হলে দর্শক আগ্রহ নিয়ে দেখেন। এখনো তার অভিনীত সিনেমার গান টিভিতে প্রচার হলে তা দর্শক এড়িয়ে যেতে পারেন না। এমনও দেখা গেছে, পাশাপাশি দু’টি চ্যানেলের একটিতে নতুন কোনো সিনেমা প্রচার হচ্ছে আবার অন্যটিতে সালমান শাহের সিনেমা প্রচার হচ্ছে দর্শক যেন সালমান শাহের সিনেমা দেখার প্রতিই বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেন। আবার শুধু সালমান শাহের সিনেমার ক্ষেত্রেই এমন দেখা গেছে যে, সিনেমা প্রচারের সময় নারী-পুরুষ দর্শক শুধু সালমান শাহের পারফরম্যান্সই বেশি উপভোগ করেন। তার সাথে কে আছেন তা কখনোই জরুরি কোনো বিষয় নয় দর্শকের কাছে। মত্যুর এত বছর পরও সালমান শুধু তার দুর্দান্ত অভিনয় ও ফ্যাশনে ভিন্নমাত্রা দিয়েই আজো দর্শকের হৃদয়ে গেঁথে আছেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নায়িকা ববিতার সাথে সালমান শাহ তিনটি সিনেমাতে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলেন। সিনেমাগুলো হচ্ছে- বাদল খন্দকারের ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, দীলিপ সোমের ‘মহামিলন’, শিবলী সাদিকের ‘মায়ের অধিকার’ ও জাকির হোসেন রাজুর ‘জীবন সংসার’। দু’টি সিনেমাতে সালমানের মায়ের ভূমিকায় এবং দু’টি সিনেমায় সালমানের ভাবীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ববিতা। দীলিপ সোমের ‘মহামিলন’ সিনেমার শুটিংয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ববিতা বলেন, ‘কক্সবাজারে এই সিনেমার শুটিং হয়েছিল। একটি দৃশ্য ধারণ করা হচ্ছিল পাহাড়ের উপর। আমার হাতে পিস্তল ছিল। দৃশ্যটিতে শুটিংয়ে অংশ নিয়েছিলাম আমি, রাজীব ভাই, শারমিন, সালমান শাহ, শাবনূর। সেই দৃশ্যটির ধারণের নানান সময়ে আমি শুটিংয়ে আনা অন্য একটি চেয়ারে বসি। কারণ হোটেল থেকে আমার চেয়ারটি নিতে মনে ছিল না। সালমান বিষয়টি খেয়াল করে এবং শুটিংয়ে তার নেয়া চেয়ারটি আমাকে গিফট করে। আমি না করার পরও সালমান তার নিজের ব্যবহৃত চেয়ারটি তখনই আমাকে গিফট করে। সেই চেয়ারটি দীর্ঘ দিন আমার কাছে সংরক্ষিত ছিল। তারপর আবার যখন মোবাইল প্রথম বাজারে এলো। সেই সময় সাইজে মোবাইল অনেক বড় ছিল। তো আমি সেই মোবাইল ব্যবহার করতে পারতাম না। সালমানই আমাকে একটি চিরকুটে মোবাইল ব্যবহার করার পদ্ধতি প্রথম শিখিয়ে দিয়েছিল। যে কারণে পরবর্তীতে মোবাইল ব্যবহার করা আমার কাছে বেশ সহজ হয়ে গিয়েছিল। তো সালমানের নিজের হাতের লেখা সেই চিরকুটটি এখনো আমার কাছে বেশ যতেœ রাখা আছে। সেই চিরকুটের মাঝে মধ্যে আমাদের হারিয়ে যাওয়া সালমানকে খুঁজে বেড়াই। সালমান একটি কথা আমাকে প্রায়ই বলত- আপনি আমার আপন মা না হলেও আপনি আমার সুইট মা। মা ছাড়া সে আমাকে অন্য কিছুই আর ডাকত না। সত্যিই এতটা বছর পরও তাকে নিয়ে কথা বলতে গেলে আমি ভীষণ আবেগাপ্লুত হয়ে যাই।’ প্রশ্ন রাখি, একজন অভিনেতা হিসেবে আপনি সালমানকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? জবাবে ববিতা বলেন, ‘সত্যি বলতে কী, সালমান শাহ অনেক বেশি ভালো অভিনেতা ছিল।
পোশাকে ফ্যাশনে নতুনত্ব তো সৃষ্টি করেছিলই, সেটি সবাই দেখেছেন এবং তার ফ্যাশন এখনো অনেকেই ফলো করেন সাধারণ জীবনেও, শিল্পী জীবনেও। এটি অনেক বড় বিষয়। আর অভিনেতা হিসেবে সালমান নিজেই ছিল অনন্য। এমনভাবে সংলাপ বলত, এমনভাবে এক্সপ্রেশন দিত এটি বোঝার উপায় থাকত না যে, অভিনয় নাকি সত্যি। পরিচালকের কাছ থেকে দৃশ্য বুঝে নিয়ে এমনভাবে সংলাপ বলত যে, তার সহশিল্পীর জন্যই সেই অভিনয়ের কাউন্টার দেয়া কঠিন হয়ে যেত। সালমান সত্যিই অনেক বড়মাপের অভিনেতা ছিল। তার মতো অভিনেতার অকাল প্রয়াণ সত্যিই আমাদের জন্য অনেক বেদনার, অনেক কষ্টের। এই কষ্টটা আমাদের বয়ে বেড়াতে হবে আরো দীর্ঘ দিন।


আরো সংবাদ



premium cement
চট্টগ্রামে নিহত আইনজীবীর পরিচয় সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে হারল সাকিবের দল বাংলা টাইগার্স কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ হিলি দিয়ে ফের পেঁয়াজ ও আলু আমদানি শুরু চট্টগ্রামে পুলিশের ৩ মামলা, আসামি ১৪৭৬ ইন্দুরকানী প্রেসক্লাবের নতুন সভাপতি নাসির, সম্পাদক মনির ঢাবি অধিভুক্ত ৭ কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের আগামীকালের পরীক্ষা স্থগিত হাসনাত-সারজিসকে ট্রাকচাপায় হত্যার চেষ্টা টিসিবির ওএমএস কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে ১০ লাখ পোশাকশ্রমিক গণ-অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করার যেকোনো প্রচেষ্টা প্রতিহত করা হবে : ভূমি উপদেষ্টা দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করতে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র চলছে : জাতীয় নাগরিক কমিটি

সকল