০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১, ৬ রজব ১৪৪৬
`

সচেতন হলে এমন পরিস্থিতি হতো না : তারিন

-

তারিন জাহান। বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গনের বেশ পরিচিত নাম। শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘কাঁঠাল বুড়ির বাগান’-দিয়ে অভিনয়ে প্রবেশ করেন ১৯৮৮ সালে। তারপর পেরিয়ে গেছে তিন দশকের বেশি সময়। দীর্ঘ এই পথচলায় কাজের প্রতি এতটুকু অনীহা জাগেনি তার। বরং আগের মতোই প্রতিনিয়ত তার স্বপ্ন ভালো আরেকটি কাজের সঙ্গী হওয়া। এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির
প্রশ্ন : সমসাময়িক তারকাদের তুলনায় আপনার ক্যারিয়ার দীর্ঘ। বিষয়টি কিভাবে দেখেন আপনি?
তারিন জাহান : অন্য সহকর্মীদের তুলনায় আমার ক্যারিয়ার দীর্ঘ, কারণ আমি শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেছি। অনেকেই আছেন শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করে খুব বেশি এগোতে পারেননি। নানা প্রতিবন্ধকতা মানুষকে একটি পথে থাকতে দেয় না। সে জায়গা থেকে আমি ভাগ্যবান যে, এখানো পর্যন্ত শোবিজের সাথে আছি। এ জন্য আমি সবসময় দর্শকদের ধন্যবাদ দেই। তাদের ভালোবাসা না থাকলে এতদূর আসা সম্ভব হতো না।
প্রশ্ন : আপনার শুরুটা চলচ্চিত্র দিয়ে। কিন্তু পরিচিতিটা বেশি নাটক দিয়ে। এর কারণটা কী?
তারিন জাহান : ‘কাঁঠাল বুড়ির বাগান’-দিয়ে আমার শুরু। তারপর ‘কাজলের দিন রাত্রি’তেও দর্শকদের প্রশংসা পেয়েছি। কিন্তু পরবর্তীতে মনের মতো স্ক্রিপ্ট না পাওয়ায় নাটকে মনোযোগ দিয়েছি বেশি। তবে সবসময়ই আমি ভালো চলচ্চিত্রের গল্পের জন্য অপেক্ষা করেছি। এখন তো বয়স বেড়েছে। তাও আমার সাথে যায় এমন স্ক্রিপ্ট পেলে কাজ করব। তা ছাড়া আমাদের নাটক কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত হচ্ছে। দেশ-বিদেশে বাংলা নাটকের অগণিত দর্শক আছে। নাটকের মাধ্যমেও দর্শকদের ভালোবাসা পাওয়া যায়।
প্রশ্ন : মাঝখানে অনুদানের একটি চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেছিলেন। এর অগ্রগতি কী?
তারিন জাহান : ওই সিনেমার নাম ‘১৯৭১ সেইসব দিন’। গত বছর শীতের সময় সিনেমাটির কাজ শুরু করেছি। তারপর করোনাভাইরাসের কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়। বেশ কয়েকবার কাজের পরিকল্পনা করেও শুটিং করা সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার শুটিং শুরু করব।
প্রশ্ন : কোনো চরিত্রের প্রতি দুর্বলতা আছে?
তারিন জাহান : আমি চ্যালেঞ্জিং যেকোনো চরিত্রে কাজ করতে পছন্দ করি। তবে সে রকম কোনো চরিত্রের প্রতি দুর্বলতা নেই। যেকোনো ধরনের কালজয়ী উপন্যাসের চরিত্রগুলোতে কাজ করার আগ্রহ আছে। চ্যালেঞ্জিং চরিত্র পেলে অবশ্যই কাজ করব।
প্রশ্ন : এবার ঈদে প্রচারিত আপনার বেশ কয়েকটি নাটক প্রশংসিত হয়েছে। আপনার অভিব্যক্তি কী?
তারিন জাহান : প্রশংসা তো সবারই ভালো লাগে। তবে যে চারটি নাটক নিয়ে এবার আলোচনা হয়েছে সবগুলোই করোনা শুরুর আগে শুটিং করা হয়েছিল। তানিম রহমান অংশু পরিচালিত টিভি ফিচার ফিল্ম ‘সাহসিকা’, সোহেল হাসানের নাটক ‘অনাত্মীয় দম্পতি’, চয়নিকা চৌধুরীর ‘গৃহমায়া’ ও হাসিব আহমেদের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মধুচক্র’ কাজগুলো থেকে অগণিত দর্শকের সাড়া পেয়েছি।
প্রশ্ন : সাহসিকায় আপনার চরিত্রটি বেশি আলোচিত হয়েছে?
তারিন জাহান : এটি থেকে অনেক সাড়া পাচ্ছি। পুলিশের গেটআপে অনেক আগে একটি কাজ করেছিলাম। এরপর আর কাজ করা হয়নি। অনেক বছর পর আবার ‘সাহসিকা’তে করলাম। অসংখ্য মানুষ কাজটি দেখে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। অভাক করার মতো সাড়া পাচ্ছি। নাটকের দর্শক এখনো আছে। মানুষ সময় বের করে নাটক দেখতে চায়। করোনাকালীন ঘরবন্দী সময়টা দর্শক বেশ ভালোভাবেই নাটকগুলো উপভোগ করেছে। কাজগুলোতে আমার চরিত্রটিও দর্শক বেশ পছন্দ করেছে। আমি নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করি না। যেখানে আমার চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ আছে সেখানেই কাজ করি।
প্রশ্ন : ২৬ জুলাই ছিল আপনার জন্মদিন, কেমন কাটালেন?
তারিন জাহান : বাবাকে ছাড়া এটি আমার প্রথম জন্মদিন। তাই এবার জন্মদিন পালন করিনি। আর সেভাবে উদযাপন করার মন-মানসিকতাও ছিল না। কারণ দেশের করোনা পরিস্থিতি ভালো না। তা ছাড়া আশপাশের মানুষজন ভালো নেই। আশপাশের অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রত্যেকের ঘরেই দেখা গেছে কেউ না কেউ অসুস্থ। এমন অবস্থায় জন্মদিন পালন করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়নি।
প্রশ্ন : সরকারি বিধিনিষেধের মধ্যে সময় কিভাবে কাটছে?
তারিন জাহান : বেশির ভাগ সময়ই কাটছে বাসার চার দেয়ালের মধ্যে। আসলে এই সময়টায় সতর্কতা অবলম্বন ছাড়া চলা সম্ভব নয়। সরকারের বিধিনিষেধ সবাইকে মেনে চলতে হবে। নিজেদের স্বার্থে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। একান্ত যাদের বের হতে হচ্ছে তাদেরকে বলব স্বাস্থ্যবিধি মেনে বের হবেন। দ্রুত যেন স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারি তাই আমাদের সবাইকে সব ধরনের বিধিনিষেধ মেনে চলা উচিত। কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছিÑ দিন দিন কোভিডের সংক্রমণ বাড়ছে। এই বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ কিন্তু একটাইÑ মানুষের অসচেতনতা। আমরা সচেতন হলে হয়তো আজ এমন পরিস্থিতি দেখতে হতো না। বেশির ভাগ মানুষই ঠিকমতো মাস্ক পরে না। কেউ কেউ আবার লকডাউন দেখার জন্য বের হয়। এ ধরনের অসচেতন আচরণগুলো যারা করে তাদের জন্যই কিন্তু সাধারণ মানুষ বেশি সংক্রমিত হচ্ছে। তারা নিজেরা তো হচ্ছেই অন্যদেরও সংক্রমিত করছে। এই যে বোধের অভাব এর জন্য পরিস্থিতি কিন্তু আস্তে আস্তে খারাপের দিকে যাচ্ছে।
প্রশ্ন : অভিনয়ের পাশাপাশি মাঝে মাধ্যে গানেও আপনাকে দেখা গেছে, এ বিষয়ে কি নতুন কিছু ভাবছেন?
তারিন জাহান : মূলত স্বাচ্ছন্দ্যবোধের জায়গা থেকে গান করি। গান পেশা হিসেবে নেইনি, নিতেও পারব না। সব সময় নাচ ও অভিনয়ে প্রাধান্য দিয়েছি। ভালোবাসা থেকে গান করি আর ভালোলাগা থেকে গানের চর্চা করি। গান নিয়ে সেভাবে পরিকল্পনা নেই। তবে অ্যালবামের গান নিয়ে ভিডিও নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। অ্যালবামে বাবা-মাকে উৎসর্গ করে দুটি গান করেছিলাম সে গানগুলো নিয়ে ভিডিও নির্মাণের ইচ্ছে আছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কাজ শুরু করব।

 


আরো সংবাদ



premium cement