২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নার্গিসের দাফন নিয়ে অজানা এক ঘটনা

নার্গিসের দাফন নিয়ে অজানা এক ঘটনা -

বলিউডের একাধিক কালজয়ী ছবির অভিনেত্রী ছিলেন কিংবদন্তি শিল্পী নার্গিস। ১৯২৯ সালের ১ জুন নার্গিসের জন্ম। আর ১৯৮১-এর ৩ মে দুরারোগ্য ক্যান্সার কেড়ে নিয়েছিল নার্গিসের প্রাণ। মৃতু্যুর পর কেটে গেছে কয়েক যুগ। সিনেপ্রেমীদের মনে ‘মাদার ইন্ডিয়া’ নার্গিসের অভিনয় আজো মোহিত করে দর্শককে। সাদা-কালো জমানায় নার্গিসের নিখুঁত অভিনয় ভক্ত হৃদয় এখনো নাড়া দেয়। শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় জগতে আত্মপ্রকাশ। স্বাধীন, শক্তিশালী এবং অত্যন্ত সফল এই অভিনেত্রী ছিলেন নিজের সময়ে অনেক এগিয়ে। ‘আগ’ সিনেমার সেই জনপ্রিয় অভিনেত্রী আরো হয়তো অনেক কিছু দিতে পারতেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ৫১ বছর বয়সে তিনি প্যানক্রিয়েটিক ক্যান্সারের কারণে মারা যান। তবে, তার দাফন প্রক্রিয়া নিয়ে একটি অজানা ঘটনা রয়েছে। জানেন কি, নার্গিসকে মুসলিম রীতিতে দাফন করা হয়েছিল?
১৯৮০ সালের আগস্ট মাসে রাজ্যসভায় একটি সেশনে অংশ নেয়ার সময় নার্গিস হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে তার জন্ডিস ধরা পড়েছিল, তবে শিগগিরই তার অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। পরবর্তী পরীক্ষার পর জানা যায়, তিনি প্যানক্রিয়েটিক ক্যান্সারে আক্রান্ত। এই সময় তার শরীরের ওজন দ্রুত কমতে শুরু করেছিল এবং নিউইয়র্কে চিকিৎসার জন্য যান তিনি।
১৯৮১ সালের মে মাসে তার অবস্থার আরো অবনতি ঘটে, এবং ৩ মে তাকে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি কোমায় চলে যান এবং পরদিন মৃত্যু হয়। নার্গিসের মৃত্যুর পর তার শেষকৃত্য হিন্দু রীতিতে সম্পন্ন হয়েছিল। তিনি হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং তার নাম ছিল ‘নির্মলা দত্ত’। কিন্তু এক অজানা বিষয় হলো, তাকে শেষবারের মতো হিন্দু পিয়ার দিয়ে নিয়ে যাওয়া হলেও, তার লাশ দাফন করা হয়েছিল মুসলিম রীতিতে। এর কারণ ছিল, নার্গিসের জীবনের এক অজানা দিক। নার্গিসের পরিবার জানিয়েছিল যে, নার্গিস জীবনের প্রথম ভাগে মুসলিম ধর্ম পালন করত এবং মৃত্যু পরবর্তী সময়ে তিনি যেন মুসলিম রীতিতে দাফন হন, এটাই তার ইচ্ছা ছিল। তার পুত্র সঞ্জয় দত্ত এবং স্বামী সুনীল দত্তসহ অন্য আত্মীয়রা তার দাফনে মুসলিম রীতিতে জানাজা নামাজ পড়েছিলেন এবং শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন।
নার্গিসের জীবনে আরেকটি আলোচিত ঘটনা ছিল তার সম্পর্ক রাজ কাপুরের সঙ্গে। ‘আগ’ সিনেমার শুটিং সেটে রাজ কাপুরের সঙ্গে তার পরিচয় এবং তারপর দীর্ঘ ৯ বছর ধরে তাদের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে নার্গিস রাজ কাপূরের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দেন। তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না, কারণ রাজ কাপুর তাকে যে ধরনের চরিত্রের প্রস্তাব দিতেন, তা তাকে আর আগ্রহী করছিল না। এছাড়া রাজ কাপুর তখনো বিবাহিত ছিলেন এবং তার প্রথম স্ত্রী, কৃষ্ণা কাপূরের প্রতি তার দায়বদ্ধতা ছিল, যা নার্গিসকে মেনে নিতে পারছিলেন না।
নার্গিস ছিলেন অভিনয় জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যার মৃত্যু ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায় ছিল রহস্যময় এবং আলোয় পূর্ণ, আর তার মৃত্যু আজও অনেকের কাছে শোকের বিষয়। কিন্তু নার্গিসের জীবনে তার ধর্মীয় পছন্দ এবং ঐতিহ্য তাকে সমগ্র ভারতীয় সংস্কৃতির একটি অনন্য এবং শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement