১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩০, ১৩ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

কেমন হলো ‘জোকার’-এর সিক্যুয়াল

কেমন হলো ‘জোকার’-এর সিক্যুয়াল -

আর্থার ফ্লেকের কথা মনে আছে? সমাজের কশাঘাতে যিনি হয়ে উঠেছিলেন মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত। যদি মনে না পড়ে, তাহলে একটু চিন্তা করে দেখুন, মেরুন ব্লেজার-প্যান্টের ওপর অনেকটাই হলুদ রঙের কটি পরা আর মুখ-ঠোঁট নয়, চোখের পাশে সাদা, লাল ও নীল রঙে মাইমের মতো আবৃত সাড়া জাগানো সেই ভিলেনের কথা ভাবুন। জি, ঠিকই ধরেছেন। ‘জোকার’। ২০১৯ সালে মুক্তি পেয়েছিল বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগানো সিনেমা ‘জোকার’।
টপ ফিলিপস পরিচালিত ‘জোকার’ সেনেমার গল্পে দেখা যায়, ১৯৮১ সালের দিকের ঘটনা। অর্থার ফ্লেক নামের ব্যর্থ এক কমেডিয়ান হঠাৎ শহরে মথাচাড়া দিয়ে ওঠে, সে শহরের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাতে শুরু করে। আর্থারের জোকার চরিত্রটির মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে সমাজের নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের কষ্ট ও ডিউক্সর্দশা। সিনেমাটি মুক্তির পর তুমুল আলোচনা শুরু হয়। একই সঙ্গে চলচ্চিত্র উৎসবে একাধিক পুরস্কার ও বক্স অফিসে সুপারহিট তকমা খুবই কম সিনেমার ভাগ্যে জোটে। সেখানে ব্যতিক্রম ছিল ‘জোকার’। সিনেমাটি ভেনিস উৎসবে ওয়াল্ড প্রিমিয়ার ও পরে একাধিক উৎসবে সেরা সিনেমার পুরস্কার জেতে। সিনেমার কিছু বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি হতে পারে এম বিতর্কও দেখা দেয়। আলোচিত এ সিনেমা অস্কারে ১১টি শাখায় মনোনয়ন পেয়ে সেরা অভিনেতাসহ ডিউক্সটি শাখায় পুরস্কার জিতে নেয়। এবার এসেছে সিনেমাটির সিক্যুয়াল। নাম ‘জোকার : ফোলি আ ডিউক্স’।
জোকার সিনেমার প্রথম পার্ট সেখানে শেষ হয়েছিল, এবার সেখান থেকেই শুরু হয়। আদালতে বিচার চলছে আর্থারের। পাঁচটি খুনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যদিও হার্লেকুইনের সাথে প্রথম আলাপেই অম­ানচিত্তে সে বলে দেয়, আসলে সংখ্যাটা ছয়। নিজের অসুস্থ মাকেও সে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেছে। এটি অবশ্য প্রথম ছবির সব দর্শকই জানেন। গোটা শহরে আর্থারের অসংখ্য ভক্ত। জোকার সেজে তারা ঘুরে বেড়ায় গোথামের রাস্তায়। তাদের কাছে আর্থার কোনো অপরাধী নয়। সে নায়ক।
সিনেমাটির সিক্যুয়াল যারা দেখেছে অধিকাংশ হতাশ হয়েছেন। টড ফিলিপস এমন হতাশ করবেন, আশা করেনি কেউ। সিনেমাটি তিনি নির্মাণ করেছেন নিজের মতো করে। কিন্তু দর্শকের তা পছন্দ হলো না। হয়নি সমালোচকদেরও। তবে দর্শকের পছন্দ না হওয়া এ সিনেমাকে থিয়েট্রিক্যাল রানে পিছিয়ে যেতে হলো। ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া জোকার প্রায় কোনো আশা না জাগিয়েই আয় করেছিল ১০০ কোটি ডলারের বেশি। সেই জায়গা থেকে সবারই ধারণা ছিল, এর সিক্যুয়াল ‘জোকার : ফোলি আ ডিউক্স’ এ রকমই আয় করবে। কিন্তু সিনেমাটি মুক্তির শুরু থেকেই বেশ নেতিবাচক মন্তব্যের শিকার হয়ে পিছিয়ে গেছে ব্যবসায়িক দিক থেকে।
৪ অক্টোবর মুক্তি পাওয়া জোকার প্রায় ডিউক্সই সপ্তাহ (বক্স অফিসের হিসাবে) পার করে সারা বিশ্ব থেকে আয় করেছে প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি ডলার। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আয় হয়েছে মাত্র পাঁচ কোটি ডলারের কিছু বেশি। ২০১৯ সালের জোকার যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম ডিউক্সই সপ্তাহে আয় করেছিল ৯ কোটি ৬২ লাখ ডলার এবং এর বৈশ্বিক আয় ছিল ২৪ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। বোঝাই যাচ্ছে, প্রথম সিনেমার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারবে না এটি। টিকিট বিক্রি থেকে অনুমান করা যাচ্ছে, সিনেমাটি এর থিয়েট্রিক্যাল রানে যুক্তরাষ্ট্রে মোট আয় করবে সাড়ে ছয় কোটি ডলার এবং বৈশ্বিক আয় হতে পারে ২১ কোটি ডলারের কিছু বেশি। এ পরিমাণ আয় নিয়েই তার বক্স অফিস ছাড়তে হবে।
ভারী লোকসানের মুখে পড়তে যাচ্ছে সিনেমাটি। কেননা, এটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ২০ কোটি ডলার এবং সিনেমাটির প্রচারণায় আরো ১০ কোটি ডলার খরচ করেছে ওয়ার্নার ব্রোস। সে হিসাবে সিনেমাটির ব্রেক ইভেনে যেতে হলেও ৪৫ কোটি ডলার আয় করতে হবে। তার ধারেকাছেও যাওয়ার সুযোগ নেই। যদিও ওয়ার্নার ব্রোসের মতে, ব্রেক ইভেনে যেতে আয় করতে হবে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
জোকার : ফোলি আ ডিউক্স মুক্তির আগেই এ নিয়ে বেশ কথা উঠেছিল। সিনেমাটি মিউজিক্যাল ঘরানার হবে তা জানানোর পরই দর্শকের মনে হয়েছিল এটি জোকারের প্রথম পর্বের মতো হচ্ছে না। এরপর কান চলচ্চিত্র উৎসবে দীর্ঘ স্ট্যান্ডিং অভেশন পেলেও সে শঙ্কা কাটেনি। কান থেকেই এসেছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সিনেমা মুক্তির পর তা বেড়েছে বৈ কমেনি। ‘জোকার : ফোলি আ ডিউক্স’ রটেন টমেটোডে ৩৩ শতাংশ রটেন ভোটের পাশাপাশি সিনেমাস্কোরে পেয়েছে ‘ডি’ গ্রেড। ফলে সিনেমাটির ভালো আয় করার কোনোই সুযোগ নেই। সব কিছু মিলিয়ে ধারণা করা হচ্ছে, ওয়ার্নার ব্রোস এ সিনেমার কারণে ১৫-২০ কোটি ডলার ক্ষতি গুনবে।
এর আগে এ বছর সবচেয়ে সফল সিনেমা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে ডেডপুল অ্যান্ড উলভারিন। সিনেমাটি আয় করেছে ১৩২ কোটি ডলারের মতো।


আরো সংবাদ



premium cement