২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সালমান শাহ বায়োপিকের কাজ মায়ের আপত্তিতে স্থগিত

সালমান শাহ বায়োপিকের কাজ মায়ের আপত্তিতে স্থগিত -

মাত্র ২৫ বছরের জীবন পেয়েছিলেন সালমান শাহ। এই স্বল্প সময়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে রেখে গেছেন অসামান্য অবদান। বলা যায়, দেশের চলচ্চিত্রে ভিন্নধারার সূচনা হয়েছিল তার হাত ধরেই। ছবিতে তার উপস্থিতি মানেই ছিল নিশ্চিত সাফল্য, প্রেক্ষাগৃহে উপচেপড়া দর্শকের সরব উপস্থিতি। ছবির ব্যবসায়িক সাফল্য আর জনপ্রিয়তা দুই-ই সমানতালে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তিনি। অভিনয়ের স্বতন্ত্র ধারা আর ফ্যাশন সচেতনতা তাকে নিয়ে যায় ভিন্ন এক উচ্চতায়। এভাবে তিনি নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন। তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের ক্ষণজন্মা নায়ক সালমান শাহ।
এই অভিনেতাকে নিয়ে নিয়ে পরিচালক ছটকু আহমেদ বায়োপিক নির্মাণে হাত দিয়েছিলেন। তবে সেটি ‘আটকে গেছে’ অভিনেতার মায়ের হস্তক্ষেপে। সালমানের মা নীলা চৌধুরী লন্ডন থেকে টেলিফোন করে ‘স্বপ্নের রাজকুমার’ নামের সিনেমাটি বানাতে নিষেধ করেছেন বলে ছটকু জানিয়েছেন।
এই পরিচালক বলেন, ‘স্বপ্নের রাজকুমার’ নামের বায়োপিকের চিত্রনাট্যের কাজ শেষ করে তারপর একটা টিম বানিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নতুন নায়ক-নায়িকা বাছাই করার সিদ্ধান্ত হচ্ছিল। এর মধ্যে নীলা চৌধুরী কাজে হাত দিতে নিষেধ করেন।’
নীলা চৌধুরীর আপত্তির কারণ কী জানতে চাইলে ছটকু বলেন, ‘সালমানকে নিয়ে কোনো ধরনের সিনেমা বা নাটক বা যেকোনো ধরনের কাজ নির্মাণ থেকে বিরত থাকার জন্য অনেক আগেই তিনি উকিল নোটিশ দিয়ে রেখেছেন। এখন নীলা চৌধুরীর আপত্তিতে সিনেমাটির কাজ স্থগিত করলাম। তবে তার আপত্তি ঠিক কোন জায়গায়, কোন কারণে উনি কাজটা চাইছেন না, সেটি উনি আমাকে বলেননি।’
এ বিষয়ে জানতে নীলা চৌধুরীর বলেন, ‘২৮ বছর আগে যে মানুষটি চলে গেছে, তাকে নিয়ে সিনেমা, নাটক, গান- এসব করা কাম্য নয়। আমি পারিবারিকভাবে আগেই এসবের বিরোধিতা করেছি। উকিল নোটিশ দিয়েছি। এগুলা করা যাবে না।’
১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের দারিয়াপাড়ায় নানাবাড়িতে সালমান শাহের জন্ম। এই নায়কের মৃত্যু হয় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। নব্বইয়ের শুরুতে সালমান শাহ মাত্র চার বছর কাজ করেছিলেন, তাতেই হয়েছিলেন খ্যাতিমান।
এই জন্মবার্ষিকীতেই ছটকু জানিয়েছিলেন, নায়কের কর্ম ও ব্যক্তিজীবনের নানা ঘটনা তুলে ধরতে তার জীবনী নিয়ে সিনেমা তৈরি করতে চলেছেন তিনি। ছটকু সালমানের জনপ্রিয় সিনেমা ‘সত্যের মৃত্যু নেই’-এর নির্মাতা।
ছটকু বলেছিলেন, বায়োপিক নির্মাণের এই কাজটি তিনি হাতে নিয়েছেন পরলোকগত পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে। তিনি বলেছিলেন, ‘সোহানই সালমানকে পর্দায় এনেছিলেন। তিনিই ইমনকে (সালমান শাহ) সালমান বানিয়েছিলেন বাংলাদেশের মানুষের কাছে। সোহানের ইচ্ছা ছিল সালমানের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা দেশের মানুষ জানুক।’
‘সোহানের ইচ্ছে ছিল এই সিনেমাটা করার। যেহেতু সে বেঁচে নেই, তাই সোহানের স্বপ্নটা পূরণ করতে সিনেমাটা করার দায়িত্ব আমি নিয়েছি। আমার সব ধরনের প্ল্যানিং এবং সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। এখন অভিনয়শিল্পী বাছাই করে সিনেমার কাজে হাতে দেবো।’ সিনেমায় সালমানের চরিত্রে বা অন্যান্য অভিনয় শিল্পী নির্বাচনে এখনকার অল্পবয়সী অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ছটকু। তিনি বলেন, ‘যারা সালমানের খুব ভক্ত এবং সালমানকে এখনো আইডল মানেন, এরকম কিছু আর্টিস্ট খুঁজে বের করা হবে।’ সোহানের পরিচালনায় নায়িকা মৌসুমীর বিপরীতে প্রথম সিনেমা ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ করে ১৯৯৩ সালে বাজিমাত করে দেন সালমান। এই সিনেমার মাধ্যমে ঢাকাই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি উপহার পায় সালমান-মৌসুমী জুটি। তবে সালমানের ক্যারিয়ারের ২৭টি সিনেমার ১৩টির নায়িকাই ছিলেন শাবনূর।
সিনেমায় আসার আগেই সামিরা হককে বিয়ে করেছিলেন সালমান। ১৯৯৬ সালে ৬ সেপ্টেম্বর ইস্কাটনে সালমান শাহের বাসা থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় মামলা করেন সালমান শাহের বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। পরিবারের পক্ষ থেকে বরাবরই দাবি করা হয়েছে সালমানকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু সালমান শাহর মৃত্যু এখনো তার ভক্তদের কাছে রহস্যজনক।
তবে গত মাসে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাৎকারে সালমান শাহের স্ত্রী সামিরা ওই মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে দাবি করেছেন। সামিরা বলেছেন, ‘আত্মহত্যা যারা করে, তারা তো কিছু বলে করে না। এখন নীলা চৌধুরী বারবার বলেন, সামিরাকে কেন রিমান্ডে নেয়া হয় না। একটা বাসায় একটা বাচ্চা যখন আত্মহত্যা করে, সে বাচ্চার মা-বাবাকে কি আমরা উঠিয়ে নিয়ে চলে যাই? তাহলে আমাকে কেন উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে? ইট ইজ সুইসাইড।’
কেন এটি সুইসাইড, সেই ব্যাখ্যা নিজেই দিলেন সামিরা। বললেন, ‘ও (ইমন) মেন্টালি সুইসাইডাল বাই নেচার। এর আগে তিনবার সুইসাইডের চেষ্টা করেছে। মেট্রোপলিটন হাসপাতালের রেকর্ড চেক করলে জানা যাবে। ওখানে দু’বারের রেকর্ড আছে। আরেক হাসপাতালে একবার আছে। তিনটিই আমার বিয়ের আগে। তিনটি ঘটনাই আমি জানি। একবার মায়ের সাথে ঝগড়া করে করেছিল। আরেকবার আমাকে বিয়েতে রাজি করানোর জন্য করেছে। আরেকবার ওর কিছু একটা হয়েছিল, তার জন্যও করেছিল।’
কথা প্রসঙ্গে সামিরা বললেন, “একটি কথা বলতে চাই, ইমন কিন্তু ছবিতে ক্যারিয়ার করতে চায়নি। সে পড়াশোনা করতে চেয়েছিল। কিন্তু পড়াশোনা যখন এসএসসি, তখন একটি ঘটনার কারণে, এরশাদ (হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ)-সংক্রান্ত, নীলা চৌধুরীকে নিয়ে, সেই ঘটনায় ওই সময় নীলা চৌধুরী জেলেও যান, ময়মনসিংহ কারাগারে ছিলেন। ইমন কিন্তু এক দিনও মাকে দেখতে যায়নি জেলে। কেন? তখন তো ওর লাইফে আমি নেই। আমার তো ১৯৯২ সালের ২০ ডিসেম্বর বিয়ে হয়েছে। আর ওই ঘটনা জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চের দিকের। ইমন কিন্তু তার মাকে মা, আম্মা এসব ডাকত না। মহিলা বলে ডাকত। আমাদের সামনে অবশ্য ওভাবে বলত না। শুটিং সেটে যখন নীলা চৌধুরী যেতেন, তখন ইমন বলত, মহিলা আসছে। ডলি জহুর আন্টি একদিন সেটে থাকা অবস্থায় এমন ঘটনা ঘটেছিল। তখন বকা দিয়ে ইমনকে বলেছিল, ‘তুই এভাবে ডাকছিস কেন? তোর তো মা হয়।’ ইমন তখন হেসে উড়িয়ে দিয়েছে।”
সামিরা আরো বললেন, ‘ইমনের মনে অনেক কষ্ট আগে থেকেই ছিল। ইমন অনেক কিছু দেখে বড় হয়েছিল, যেগুলো ওর দেখার দরকার ছিল না। এগুলো নিয়ে বাচ্চাদের হয় কি, আমরা এখন যেমন হিউম্যান সাইকোলজি নিয়ে অনেক পড়াশোনা করি, তখন তো এগুলো করতাম না। তখন আমাদের কোনো কাউন্সেলিংয়ের সুযোগও ছিল না। ছিল না রিহ্যাবিলিটিশেনরও। এখন রিহ্যাব আছে, কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা আছে। আমরা তেমন কিছু অনুভব করলে কারো সাথে আলাপ করে তা ভাঙার চেষ্টা করি, বোঝার চেষ্টা। তখন তো ইমন এসব কাউকে বলতে পারেনি। সালমান শাহ হওয়ার পর তো আরো বলতে পারেনি। যাকে বলবে, এটি নিউজ হয়ে যাবে।’


আরো সংবাদ



premium cement