২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নন এমপিও শিক্ষকদের জন্য ১২৬ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ চায় মন্ত্রণালয়

নন এমপিও শিক্ষকদের জন্য ১২৬ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ চায় মন্ত্রণালয় - ছবি : নয়া দিগন্ত

করোনার প্রভাবে সারাদেশে দুই লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অসহায় এসব শিক্ষক এককালীন আর্থিক অনুদান দিতে ১২৬ কোটি টাকা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সায় পেলে অর্থ বিভাগের অনুমতি চাইবে মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো প্রস্তাবে স্কুল ও কলেজের জন্য আলাদা থোক বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। প্রস্তাবে কলেজ পর্যায়ের শিক্ষকদের জন্য ৮ হাজার অথবা ৫ হাজার কর্মচারীদের জন্য ৪ হাজার অথবা আড়াই হাজার টাকা অনুদানের দুটি বিকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রস্তাবের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, করোনাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। টেকসই উন্নয়নের জন্য সমগ্র বিশ্বে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এছাড়া কওমি মাদরাসা শিক্ষকদের জন্য এককালীন আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি ২৭৩০টি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষক কর্মচারীকে এমপিওভুক্তির আওতায় এনে তাদের বেতন ভাতা দেয়া শুরু হয়েছে। বিশাল সংখ্যক শিক্ষকের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রায় ৭ হাজার নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২ লাখের বেশি শিক্ষক কর্মচারী রয়েছেন; যারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টিউশন ফি, অন্যান্য ফি এবং প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ফান্ড থেকে বেতন ভাতা পেয়ে থাকেন। ঢাকাসহ বড় বড় শহরে কিছু প্রতিষ্ঠান বাদ দিলে মফস্বল শহর এবং গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক সক্ষমতা সন্তোষজনক নয়। ফলে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা নীরবে প্রচণ্ড আর্থিক সঙ্কটে জীবনযাপন করছেন। তাদের পেশাগত কারণে বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংস্থার কাছে সহযোগিতা নিতে পারছেন না। সরকারের দেয়া কোনো সহায়তা কর্মসূচিতেও তারা অন্তর্ভুক্ত হতে পারছেন না। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের বিশেষ সহায়তা কর্মসূচির আওতায় নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের আনা প্রয়োজন।

মন্ত্রণালয়ের পাঠানো প্রথম প্রস্তাবে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষকদের জন্য এককালীন ৮ হাজার এবং কর্মচারীদের জন্য ৪ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। এতে কলেজ পর্যায়ে ৮৪ হাজার ৮১৮ জন শিক্ষকের জন্য ৩৯ কোটি ৫৪ লাখ ৪ হাজার টাকা এবং ৩৪ হাজার ৭৬২ জন কর্মচারীর জন্য প্রয়োজন ১৩ কোটি ৯০ লাখ ৮ হাজার টাকা। স্কুল পর্যায়ে ৬৬ হাজার ৫০৭জন শিক্ষকের জন্য প্রয়োজন ৫৩ কোটি ২০ লাখ ৫৬ হাজার এবং ৫০ হাজার ৪৫৫ জন কর্মচারীর জন্য প্রয়োজন ২০ কোটি ১৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রথম প্রস্তাবে প্রয়োজন ১২৬ কোটি ৩৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।

দ্বিতীয় প্রস্তাবে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষকদের জন্য এককালীন ৫ হাজার এবং কর্মচারীদের জন্য ২ হাজার ৫০০ টাকা চাওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় প্রস্তাবে ৭৮ কোটি ৯৬ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা লাগবে। জানা গেছে, প্রস্তাব দুটি মধ্যে প্রধানমন্ত্রী যেটা অনুমোদন দেবেন সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের জন্য অর্থ বিভাগকে অনুরোধ করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এদিকে গত ২৩ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ আমিন দেশের সব জেলা প্রশাসকের কাছে নন-এমপিও স্কুল কলেজ শিক্ষক-কর্মচারীদের নির্ধারিত ছকে তালিকা চেয়েছেন। শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের মাধ্যমে যাচাই করে আগামী ২৮ মের মধ্যে জেলা প্রশাসকদের তালিকা পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত ছকে শিক্ষক-কর্মচারীদের বিকাশ, রকেট, নগদ ও শিওর ক্যাশের নম্বরও চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নামের বানানসহ এনআইডি নম্বর চাওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন শিক্ষকদের আর্থিক অনুদান দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এ সঙ্কটের সময়ে শিক্ষকদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান তারা।
বর্তমানে দেশে একাডেমিক স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা রয়েছে ৭ হাজারের বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ২ লাখ ৫৪২ জন।


আরো সংবাদ



premium cement