২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ঢাবি শিক্ষক সমিতি নির্বাচন ৩০ ডিসেম্বর, সাদা ও নীল দলের প্রার্থী চূড়ান্ত

-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যকরি পরিষদ ২০২০-এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। ওই দিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে এ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে সামনে এরইমধ্যে প্যানেল চূড়ান্ত করেছে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল এবং আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল।

এবার বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল থেকে সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. লায়লা নূর ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলোজি অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মো. হাসানুজ্জামান। এছাড়া প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা হলেন- সহ-সভাপতি পদে অধ্যাপক ড. মো. লুৎফর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. মহিউদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ আল আমিন। ১০টি সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীরা হলেন- অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, ড. এস এম মোস্তফা আল মামুন, ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমান খান, মোহাম্মদ মামুন চৌধুরী, ড. মো. আবদুল করিম, ড. মো. আসলাম হোসেন, ড. মো. সিরাজুল ইসলাম, ড. রাশীদ মাহমুদ এবং সৈয়দ তানভীর রহমান।

অন্যদিকে, নীল দলের সভাপতি প্রার্থী আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া। অন্য প্রার্থীরা হলেন- সহ সভাপতি পদে অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ, ড. মুহাম্মাদ আব্দুল মঈন। এছাড়া সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীরা হলেন, ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান, ড. জাকিয়া পারভীন, ড. জিনাত হুদা, অধ্যাপক নিসার হোসেন, মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ড. মো. আফতাব আলী শেখ, ড. মো. আমজাদ আলী, ড. মো. জিয়াউর রহমান, অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম এবং ড. সৌমিত্র শেখর দে।

উভয় প্যানেলের মধ্যে সাদা দল থেকে একমাত্র সভাপতি পদেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন একজন নারী প্রার্থী। এর বিপরীতে নীল দলে থেকে নারী শিক্ষকদের মধ্যে প্রার্থিতা করছেন তিন জন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এক সময় আলাদা ব্যানারে নির্বাচন করতেন বিশ্ববিদ্যালয় বামপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন গোলাপী দল। সর্বশেষ ২০১৭ সালের কার্যকর কমিটির নির্বাচনে তারা আলাদা প্যানেল থেকে এতে অংশ নিয়েছিলেন। এক সময় বাম সমর্থক শিক্ষক রাজনীতির জৌলুস থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে সে ধারা আর বজায় থাকেনি। শিক্ষকদের মধ্যে তেমন আবেদন সৃষ্টি করতে না পারায় ফলে আলাদা নির্বাচনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন তারা।

এদিকে, শিক্ষক সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে ফের জমে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতি। ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে প্রচারণা। বিভিন্ন বিভাগ, অনুষদ, ইন্সটিটিউটের শিক্ষকদের কাছে নিজেদেরে অঙ্গীকার তুলে ধরছেন তারা। যদিও গত কয়েক বছরের নির্বাচনে বড় জয় নিয়ে শিক্ষক সমিতিতে আছেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল। অন্যদিকে দুয়েকটি পদ ছাড়া বাকিগুলোতে হেরে যায় সাদা দল। সর্বশেষ গত নির্বাচনে ১৫টি আসনের মধ্যে ১৪টিতেই জয় পায় নীল দল। এর মধ্যে মাত্র একটি আসনে বিজয়ী হন সাদা দলের সদস্য প্রার্থী অধ্যাপক ড. মো. হাসানুজ্জামান। এবার তিনি সাদা দল থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল শিক্ষক সমিতির সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে সাদা দলে পিছিয়ে থাকা নিয়ে অবশ্য শিক্ষক নিয়োগে রাজিৈনতক বিবেচনাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের একজন সিনিয়ির অধ্যাপক বলেন, আওয়ামী সমর্থক কিংবা আওয়ামীমনা কেউ ছাড়া বিগত কয়েক বছরে নতুন হিসেবে শিক্ষকতায় আসতে না পারায় বাড়েনি সাদা দলের ভোট। অন্যদিকে প্রতি বছরই নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে আওয়ামী সমর্থকদের নিয়োগ দেয়ার কারণে তাদের ভোট বাড়ছে বলেও মনে করছেন তিনি। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষক নিয়োগের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা তৈরি হচ্ছে। শিক্ষক রাজনতি হয়ে পড়ছে নীরস।

অন্যদিকে দলীয় বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগে সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা এর শিক্ষার্থী। মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছেন মানসম্মত শিক্ষা থেকে।

এদিকে নির্বাচনের সার্বিক বিষয়ে জানিয়ে সাদা দলের সভাপতি প্রার্থী অধ্যাপক ড. লায়লা নূর ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, শিক্ষক সমিতির নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা ইতোমধ্যে শিক্ষকদের কাছে পৌঁছার চেষ্টা করছি। বিশেষ করে শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতসহ শিক্ষকদের মানোন্নয়নে কাজ করবে সাদা দল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতির বিষয়ে তিনি বলেন, আজকে সবকিছুই এককেন্দ্রিক হয়ে গেছে। এর পিছনে অবশ্য অনেক কারণ আছে। তবে সেগুলো বলতে চাচ্ছি না। আমরা চাই প্রশাসনে এবং শিক্ষক রাজনীতিতেও একটা ব্যালেন্স আসুক। তিনি আরো বলেন, আজকে শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে থাকা একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে নিজেদের সুনাম বৃদ্ধি করবে আজ সেখানে অন্ন কথা শুনতে হচ্ছে।

নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে নীল দলের সভাপতি প্রার্থী অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সার্বিক উন্নয়নে আমরা কাজ করছি। বঙ্গবন্ধু স্কলারশিপ, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বহুমাত্রিক উদ্যোগের ফলে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি নীল দলের প্রতি শিক্ষকদেও আস্থা রয়েছে। আমাদের শিক্ষকরা অতীত অর্জনকে বিবেচনায় নিয়ে নীল দলকে পূর্ণ প্যানেলে বিজয়ী করবে বলে প্রত্যাশা করি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন পরিচালক অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশিদ নয়া দিগন্তকে বলেন, গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এবারও মাত্র দুটি প্যানেল জমা দেয়া হয়েছে। এর একটি সাদা দল অন্যটি নীল দল। আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। 


আরো সংবাদ



premium cement