২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
তালিকায় রুই কাতলা, দেয়া হয় পাঙ্গাশ

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি বন্ধ করুন

-

একটি সহযোগী দৈনিকের রংপুর প্রতিনিধি জানান, রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের খাবার সরবরাহে নানা অনিয়ম চলছে। পরিমাণে কম এবং নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের অভিযোগ করেন রোগীরা। সপ্তাহে দুই দিন খাসির গোশত দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। রুই কাতলা মাছের স্থলে দেয়া হচ্ছে পাঙ্গাশ।
রোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সপ্তাহে সাত দিনের তালিকা মোতাবেক প্রতিদিন সকালে পাউরুটি, ডিম ও কলা দেয়ার কথা। কিন্তু দেয়া হচ্ছে নিম্নমানের খোলা রুটি ও ছোট কলা। খাদ্য তালিকা থেকে বাদ পড়ছে ডিম। দেয়া হচ্ছে দুর্গন্ধযুক্ত মোটা চালের ভাত। রান্নার মানও ভালো নয়। ফলে বেশির ভাগ রোগীই পেটভরে খেতে পারছেন না।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতি রোগীর খাবারের জন্য এক দিনে বরাদ্দ মোট ১৭৫ টাকা। তবে বিশেষ দিনে একজন রোগীকে উন্নত খাবারের জন্য ২০০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
সপ্তাহের তিন দিন দেশী ও কক মুরগির গোশত এবং দুই দিন খাসির গোশত দেয়ার নিয়ম রয়েছে।
পাকুড়িয়া দরবার শরিফ এলাকার মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু মিয়া ১১ আগস্ট সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে গঙ্গাচড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমি ভর্তি হওয়ার পর একদিনও খাসির গোশত পাইনি। গোশত বলতে শুধু পাচ্ছি ব্রয়লার মুরগির, যা দিয়ে ভাত খাওয়া সম্ভব নয়। আর পাচ্ছি পাঙ্গাশ মাছের তরকারি। তা ছাড়া মসুর ডালের বদলে দেয়া হচ্ছে মটর ডাল।’
এলাকার ফাতেমা বেগম বলেন, ‘ভাত এমন গোন্দায় (গন্ধ করে) যে মুখোত তোলা যায় না। পাউরুটি বাহির থাকি আনি খানু।’ ওমরবালা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘১০ দিন ধরি এটে ভর্তি আছু। একদিনও খাসির গোশত পাও নাই। আইজ দেইল যেটা মুখোত দেবার সাথে সাথে বমি আসা শুরু হইসে।’
রান্নাঘরে গিয়ে দেখা যায়, রাঁধুনি রফিকুল ইসলাম রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন রোগী হিসাব করে খাবার নিয়ে আসি। আরএমও স্যার মেপে খাবার দেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখেন খাবারের মান বা পরিমাণ তো একটু খারাপ হবেই। কারণ দেশের সব কিছুর দাম বাড়তি।’
তবে হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান বাজারে দৈনিক ১৭৫ টাকা বরাদ্দে ভালো খাবার দেয়া কঠিন। তার পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চেষ্টার কমতি নেই। হাসপাতালের খাবার রোগীরা খাচ্ছেন না, এটি ঢালাওভাবে বলার সুযোগ নেই। যদি না-ই খেতেন, তাহলে তো রোগীর স্বজনরা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে হাসপাতালের খাবার নিতেন না। নার্সিং সুপারভাইজার আরেফা খাতুন বলেন, ‘ঠিকাদার আগে খাবার পরিমাণে কম দিত। পরে কর্তৃপক্ষের চাপে কিছুটা ঠিকঠাক দিচ্ছে।’ এসব অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কথা বলতে রাজি হয়নি।
অনিয়ম ও দুর্নীতি আমাদের জাতীয় জীবনের ক্রনিক ব্যাধি। তার মধ্যে স্বাস্থ্য খাত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আলোচ্য সম্পাদকীয়তে এই বিশেষ দিকটি ফুটে উঠেছে। অবিলম্বে এ খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আমরা আশা করি।


আরো সংবাদ



premium cement